অনেক সাধনার পর শেষ বয়সে বাদশাহর একটি ছেলে হয়। কিন্তু জন্মের পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সেই ছেলে। জ্যোতিষীর কথা অনুযায়ী ছেলেকে বাঁচাতে জন্মের আড়াই দিনের মাথায় রাজদরবারে ‘অদেখা জিনিস দেখানো’র খেলার আয়োজন করেন বাদশাহ। সেখানে সুতার তৈরি ময়ূর নিয়ে খেলা দেখাতে আসেন জরিনা সুন্দরী। রাজার ছেলেকে নিয়ে উড়তে উড়তে দৃষ্টির বাইরে চলে যায় সুতার ময়ূর। সাত সমুদ্র পার হয়ে এক মালিনীর ফুলবাগানে গিয়ে পড়ে সুতার ময়ূর। সেখানেই বড় হতে থাকে রাজকুমার তোতা।

বাদ্যের তালে, নাচ আর গানে মঞ্চে গল্প চলতে থাকে। নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে ‘লোকনাট্য সমারোহ’ উৎসবে এটা ছিল সাইদুলের দলের পরিবেশনা। শুনতে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এর মধ্যে কেউ কেউ আগে দেখলেও বেশির ভাগ দর্শকই প্রথমবারের মতো সাইদুলের কিচ্ছা দেখলেন।
গত সোমবার শুরু হয়েছে এই লোকনাট্য সমারোহ উৎসব। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমি মুক্তমঞ্চে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তিন দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উন্নয়ন বিভাগ নওগাঁর উপপরিচালক টি এম এ মোমিন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান।

নওগাঁ সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম উত্তর অঞ্চলের কিচ্ছা-কাহিনির কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত। রাতের পর রাত বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি বলে মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। সাইদুল ইসলাম দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে তাঁর পথ ধরে বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি পরিবেশন করে চলেছেন তাঁর শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। লোকনাট্য সমারোহ উৎসবে সোমবার রাতে ‘সুতার ময়ূর’ ও ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’ পালা পরিবেশন করেন মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিয়ের গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন সাইদুলের আরেক শিষ্য বাবুল হোসেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মঞ্চে হাজির হয়ে সাইদুলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, এ অনুষ্ঠানে সাইদুলেরই আসার কথা ছিল। অনুষ্ঠানে আসার জন্য তিনি ইজিবাইকে উঠেছিলেনও। কিন্তু ইজিবাইকে ওঠার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাঁকে বাসায় রেখেই তাঁর দল এখানে কিচ্ছা পালা পরিবেশন করতে এসেছে। লোকশিল্পী সাইদুলের জন্য তিনি উপস্থিত সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, সাইদুলের কিচ্ছা পালা পরিবেশন করবেন তাঁর দুই শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার।
বন্দনাসংগীত শেষে মুখে ভারী মেকআপ, গায়ে রঙিন কুর্তি, গলায় ও হাতে জরির সুতা আর কোমরে ওড়না বেঁধে মঞ্চে আসেন সাইদুলের শিষ্য মোস্তফা কামাল।

হারমোনিয়াম বাজিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা নেচেগেয়ে ‘সুতার ময়ূর’ কিচ্ছা শোনান মোস্তফা। রাত সাড়ে আটটার দিকে ওঠেন সাইদুলের আরেক শিষ্য মাহতাব সরকার। তিনি পরিবেশন করেন ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’। সেই কিচ্ছা পালায় উঠে আসে দানবের কন্যা মানুষের রূপ ধারণ করে কীভাবে মানুষের সমাজে মিশে যায়। বিয়ে করে রাজকুমারকে। সবার শেষে বিয়ের গীত গেয়ে শোনান লোকশিল্পী বাবুল হোসেন।
সাইদুলের কিচ্ছা দেখতে এসেছিলেন নাট্যশিল্পী মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ বলেন, ‘একটা সময় আলকাপের গান, সাইদুলের কিচ্ছা, পালাগান, বিয়ের গীতসহ লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার ব্যাপক চর্চা ছিল এ অঞ্চলে। চর্চা না থাকায় ধীরে ধীরে লোকসংস্কৃতির অনেক ধারাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে লোকসংস্কৃতির অনন্য এক ধারা তৈরি করেছেন লোকশিল্পী সাইদুল ইসলাম। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মনে করেছিলাম সাইদুলের কিচ্ছা পালা হয়তোবা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর শিষ্যদের কিচ্ছা পরিবেশন দেখে আমি আশাবাদী। এঁদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে সাইদুলের কিচ্ছা পালা বেঁচে থাকবে।’
আয়োজন সম্পর্কে নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ‘বহুভাষিক উৎসব ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলায় তিন দিনব্যাপী লোকনাট্য সমারোহ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিন গতকাল সোমবার সাইদুলের বিয়ের গীত ও সাইদুলের কিচ্ছা–কাহিনি পরিবেশন করেছে লোকশিল্পী সাইদুলের দল। উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার পালাগান পরিবেশন করেন লোকশিল্পী বিলকিস বানু ও বিল্লালের পালাগানের দল। শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপের গান পরিবেশন করবেন মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল।
আজ বুধবার শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপ গান পরিবেশন করবে মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম র শ ল পকল উৎসব র র আর ক

এছাড়াও পড়ুন:

তিতুমীর কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে ‘বার্ষিক ক্রীড়া ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মন্ডল।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান, শিক্ষক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস মল্লিক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার। 

প্রতিযোগিতায় পাঁচটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ছেলে ও মেয়েদের পৃথক ১০০ মিটার দৌড়, ছেলে ও মেয়েদের পৃথক রিলে দৌড় এবং যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগিতা শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ শিপ্রা রানী মন্ডল বলেন, “চলমান পরীক্ষার মধ্যেও শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, তাদের উদ্যম ও আগ্রহ। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” এ সময় তিনি ভাষা শহীদ, ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা/হাফছা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপেক্স নিয়ে এলো নতুন ঈদ কালেকশন 
  • মিরপুর সমাজসেবা অফিসে ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপিত
  • বিকেএসপি কাপ টেবিল টেনিসে রানার্সআপ যবিপ্রবি
  • দুর্নীতির দায়ে শোহেলিকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি
  • আন্তর্জাতিক সংস্থায় ঢাকার বাইরে চাকরি, সর্বোচ্চ বেতন ১ লাখ ৫৪ হাজার
  • ৬ গোল খাওয়া ব্রাজিল এখন আর্জেন্টিনার ওপরে 
  • ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসে চাকরি, বেতন ছাড়াও আছে পেনশন স্কিম
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
  • তিতুমীর কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত