উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
Published: 11th, February 2025 GMT
সারা দেশে ভাঙচুর-হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘তৌহিদী জনতা’ শব্দ নিয়ে চটেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দলটির রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে উপদেষ্টার ওই বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে গণসমাবেশের আয়োজন করে খেলাফত মজলিসের জেলা শাখা। ওই মঞ্চে দুই কেন্দ্রীয় নেতা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, ‘তৌহিদ মানে কি? যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাদের বলা হয় তৌহিদী জনতা। আজকে দুর্ভাগ্য, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা, যার নাম মাহফুজ আলম তিনি গতকালকে এই তৌহিদী জনতাকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছেন। অর্থাৎ উনি গোটা মুসলমানকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “রাজশাহীর সমাবেশ থেকে পরিষ্কার বলতে চাই, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আপনাকে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আপনাকে মুখ সামলে কথা বলতে হবে। যদি বাংলাদেশের মুসলমান গর্জে ওঠে, আপনি পালাবার পথ পাবেন না। এ জন্য আপনি মুখ সামলে কথা বলবেন। আপনি মুসলমানদেরকে উগ্র বলবেন, এটা এই ৫ আগস্টের পরে এ দেশের জনগণ কোনোভাবে মেনে নেবে না। তাই পরিষ্কার বলি- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
সমাবেশে এ ব্যাপারে কথা বলেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীনও। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল বিভাজনের রাজনীতি। দেশটাকে দুইভাগে বিভক্ত করেছিল। এক শ্রেণি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ঠিকাদার মনে করত। আর বিরোধী দল এবং অন্য মতের মানুষকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করত। আজকে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমরা এই বিভাজনের রাজনীতি কিছুটা দেখতে পাচ্ছি।’
তিনি বলেন বলেন, “সরকারের চেয়ারে বসে একজন উপদেষ্টা, তাকে আবার মাস্টারমাইন্ডও বলা হয়। কিন্তু কোনোদিন আন্দোলনের প্রথম সারি তো দূরের কথা, পেছনের কাতারেও দেখিনি। সে তৌহিদী জনতা বলে, তৌহিদী জনতাকে আলাদাভাবে বিভাজন করার চেষ্টা করছে।”
আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ‘পরিষ্কার বক্তব্য- তৌহিদী জনতা ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তি কখনো টিকে থাকবে না। এই জন্য তৌহিদী জনতা বলে কটাক্ষ যদি তুমি করো, তোমার ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। তোমার শেখ হাসিনার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।”
রাজশাহীর সমাবেশে এই বক্তব্য আসার পরপরই ফেসবুকে তৌহিদী জনতা শব্দের ব্যবহার নিয়ে ব্যাখা দেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, “তৌহিদী জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দিইনি, সতর্ক করেছি। কেন করেছি? গত পনের বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সব নাগরিকদের মতোই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরকেই এ সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে।”
তিনি লেখেন, “আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতোই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী মুসলিম হিসাবে তৌহিদবাদী, কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সহনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।”
উপদেষ্টা লেখেন, “বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘এ কঠোরতার হুঁশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে। কিন্তু, আগে যেভাবে ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হত, যার শিকার আমিও হয়েছি- তা কোনোমতেই আর পুনরাবৃত্ত হবে না।”
মাহফুজ আলম লেখেন, “আলেম উলেমা, মাদরাসার ছাত্ররা গত ১৫ বছর নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন, এবারের অভ্যুত্থানেও রক্ত দিয়েছেন, কিন্তু যে স্বাধীনতা এতো রক্তাক্ত, সে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রজ্ঞা না দেখালে যে যুলুম নেমে আসবে- এ সতর্কতা উচ্চারণ যদি ভুল হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি জালিম বা মজলুম- দুইটা হওয়া থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।”
তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তি আক্রমণ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আক্রমণ বা সন্দেহ তৈরি, পরিবারের সদস্যদের হুমকি বা বেইজ্জতি ইত্যাদি কাজগুলো নবীজির অনুসারী হিসাবে সবার পরিত্যাগ করা উচিত। চলুন, বিভাজন আর ঘৃণা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সবার করে গড়ে তুলি। পরস্পর সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্কই বাংলাদেশের ভিত্তি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট ব ভ জন আপন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে খানির বার্ষিক পরিকল্পনা সভা
ঢাকার আদাবরে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার বিষয়ক প্রচারাভিযান প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খানি সেক্রেটারিয়েট সংগঠন পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক- প্রান এর আয়োজনে শনিবার এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় খাদ্য অধিকার বিষয়ে কর্মরত খানির সদস্য সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এ পরিকল্পনা সভায় যোগ দেন।
এই সভায় খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার উপায়, সুযোগ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকটসহ মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে কীভাবে দেশের খাদ্য ও নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। খানির সহসভাপতি ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্সের প্রধান মোহন কুমার মণ্ডল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন- লিডের প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান, এনজিও ফোরাম অন এডিবির প্রধান নির্বাহী রায়ান হাসান, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান জান্নাতুল মাওয়া, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো. আলাউদ্দিন শিকদার প্রমুখ। তারা সকলেই দেশের সর্বস্তরের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামী এক বছরের সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
রায়ান হাসান বলেন, আজকের এ সভায় খাদ্য অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সম্পৃক্ত অনেক বিষয় উঠে এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে খানির বিভিন্ন সদস্য সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে। খানির সদস্যরা একটি অভিন্ন লক্ষ্য নিশ্চিত করে তা বাস্তবায়নে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিই আমাদের মূল কাজের ক্ষেত্র হওয়া উচিত। রাজনৈতিক অর্থনীতির লেন্স থেকে সাপ্লাই ভ্যাল্যু চেইন স্পষ্টভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি।’
রেজাউল করিম সিদ্দিকী বলেন, বাজারে যখন কোনো কিছুর দাম বেড়ে যায় আমরা সবাই উদগ্রিব হয়ে পড়ি, কিন্তু বাজারে কোনো কিছুর দাম পড়ে গেলে যখন কৃষককে তার উৎপাদিত ফসল ফেলে দিতে হয় তখন আমরা আর কিছু বলি না। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে বড় অবদান যে কৃষকের, তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা তৈরি করতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে কোন ফসল কতটা চাষ করতে হবে। বাজার বলতে আমরা শুধু ঢাকাকেই বুঝি। তাই প্রান্তিক কৃষকেরাও তাদের ফসল নিয়ে স্থানীয় বাজার ছেড়ে ঢাকামুখী হতে চায়। আমাদের স্থানীয় চাহিদা অনুসারে বাজার তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে।
খানির সেক্রেটারিয়েট ও পরিকল্পনা সভার আয়োজক প্রানের প্রধান নির্বাহী নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আমরা যারা কৃষকদের পক্ষে কথা বলছি, আমাদের মাথায় এখনও খোরপোশের কৃষি রয়ে গেছে। আমরা নতুন পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। অনেক জায়গায় সমাধান হিসেবে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং আসছে, তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এটা আসলে কর্পোরেট ফার্মিংয়ের প্রথম স্টেজ।
অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা প্রান্তিক কৃষক, দরিদ্র কৃষক, আদিবাসী কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে জোর দিতে চাই। তাই আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক খসড়া তৈরি করছি যেখানে ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারে’ -এমন ধারার পরিবর্তে, ‘রাষ্ট্র খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে’, ব্যবহার করা হবে। এতে খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িত ও বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এই পরিকল্পনা সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল খানি বাংলাদেশের সদস্যদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলা, যা বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাগুলোকে দৃঢ় করবে। এছাড়া আলোচনায় বক্তারা নারী কৃষকের স্বীকৃতি, তরুণদের কৃষি ও খাদ্য প্রচারাভিযানের সঙ্গে যুক্ত করা, নদী রক্ষা, কৃষকদের পানি বণ্টন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ ও বীজ বণ্টন, কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করেন। সভায় ত্রিশটিরও বেশি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি