‘পছন্দ মতো দপ্তরে বদলি-পদায়নে ডিও লেটার বিধিমালা অনুযায়ী অপরাধ’
Published: 11th, February 2025 GMT
সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের পছন্দমতো দপ্তরে বদলি ও পদায়ন চেয়ে আধা-সরকারি পত্র (ডিও লেটার) বা মৌখিকভাবে অনুরোধ করছেন। এটা কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী অপরাধ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক অফিস আদেশে এ কথা জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডার থেকে আসা উপসচিব এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বদলি ও পদায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বইমেলায় হট্টগোল, উপদেষ্টা ফারুকীর কড়া বার্তা
‘ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু কর্মকর্তা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বদলির জন্য উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব, সচিব বা অন্যান্য পর্যায় থেকে আধা-সরকারি পত্র বা মৌখিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করছেন, যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ২০ এর পর্যায়ভুক্ত অপরাধ।’
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ২০ এর পর্যায় অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না বলেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব: কানাডায় শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বর্জন
কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর আর দেরি করেনি। টরন্টোর একটি পানশালা তাদের মেনু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্য সরিয়ে নেয়।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, পানশালায় পানীয়সহ সব ধরনের খাবার অবশ্যই হতে হবে কানাডার উৎপাদিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের বিকল্প কোনো পণ্য যদি কানাডার না থাকে, তাহলে ইউরোপের অন্য কোনো দেশ বা মেক্সিকোর খাবার রাখা হবে। কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
টরন্টোর ম্যাডিসন অ্যাভিনিউ নামের পানশালার ব্যবস্থাপক লিয়া রুসেল বলছিলেন, মার্কিন পণ্য বর্জন নিয়ে চিন্তাভাবনার কিছু নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি এখন এমন যে এটাকে পরিবর্তন করা বেশ কঠিন হবে। এমনকি মার্কিন শুল্ক না থাকলেও পণ্য বর্জন অব্যাহত থাকতে পারে।
রুসেল গত বৃহস্পতিবার বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে আমরা মার্কিন পণ্য থেকে মুক্ত হচ্ছি এবং স্থানীয় ব্যবসাকে সহায়তা করার পথে এগোচ্ছি। আমি মনে করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার ওপর শুল্কারোপ এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে হুমকি দেওয়ার পর দেশটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ট্রাম্পের পদক্ষেপে কানাডার অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়তে পারে। তবে ট্রাম্প পুরো মাত্রায় বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করলে কানাডার পক্ষে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
মলসন কানাডিয়ান বিয়ারের একসময় বিজ্ঞাপন করেছিলেন কানাডার অভিনেতা জেফ ডগলাস, যাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কানাডীয়’। সম্প্রতি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্ত হতে বলেছিলেন ট্রাম্প। ওই বিষয়টিকে মাথায় রেখে জেফ ইউটিউবে একটি ভিডিও বানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও এমন বিষয় কানাডায় দেখা যাচ্ছে, যা অনেকটা প্রতীকী। যেমন মন্ট্রিয়লের একটি ক্যাফে তাদের মেনুতে ‘আমেরিকানো’ পরিবর্তন করে ‘কানাডিয়ানো’ করেছে। ক্যাফের মালিকেরা বলছেন, দেশ ও মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে তাঁরা এই প্রতীকী পরিবর্তন এনেছেন।ওই ভিডিওতে জেফ ঘোষণা দেন, ‘আমরা ৫১তম কোনো কিছুই না।’ তাঁর ওই ভিডিও কানাডায় ভাইরাল হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও এমন বিষয় কানাডায় দেখা যাচ্ছে, যা অনেকটা প্রতীকী। যেমন মন্ট্রিয়লের একটি ক্যাফে তাদের মেনুতে ‘আমেরিকানো’ পরিবর্তন করে ‘কানাডিয়ানো’ করেছে। ক্যাফের মালিকেরা বলছেন, দেশ ও মানুষের প্রতি সমর্থন জানাতে তাঁরা এই প্রতীকী পরিবর্তন এনেছেন।
এমনকি কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিবিসি মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করেছে। এতে কানাডার নাগরিকদের প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্প যে বারবার কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেটা নিয়ে তাঁরা কী মনে করেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে কানাডার মানুষ ট্রাম্পকে ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’, ‘বেইমান’ বলে আখ্যায়িত করেন।
অবশ্য চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প কানাডার কিছু পণ্যের ওপর থেকে আরোপিত শুল্ক তুলে নিয়েছেন। আবার কিছু কিছু শুল্ক ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। তাতে কানাডার মানুষের ক্ষোভ কমেনি। অনেক কানাডীয় বলছেন, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদেরকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য, আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গভর্নর বলে ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার প্রতি ব্যাপক মাত্রায় অসম্মান দেখিয়েছে।’
কানাডার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশের নেতা ডাউ ফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ লাখ বাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।কানাডার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশের নেতা ডাউ ফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ লাখ বাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন।
স্থানীয় এক বেতারকে ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে ডাউ ফোর্ড বলেন, ‘আমি মার্কিন নাগরিকদের কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ, মার্কিন নাগরিক বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নন—একজন মাত্র ব্যক্তির কারণে এত কিছু হচ্ছে।
ফোর্ড বলেন, ‘তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের, ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পেছনে লেগেছেন। এতে উভয় পক্ষের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।’
কানাডার নাগরিকেরা সে দেশের সরকারের পাল্টা শুল্কারোপকে পুরোপুরি সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, যত দিন যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ বাতিল না করছে, তত দিন কানাডার সরকারের উদ্যোগের প্রতি তাঁদের সমর্থন থাকবে।
টরন্টোর লিকার কন্ট্রোল বোর্ড অব অন্টারিওর দোকানি অ্যান্ড্রু বলছিলেন, ‘প্রতি রাতে আপনি ঘুমাতে যাচ্ছেন এবং আপনার কোনো ধারণাই নেই যে আপনি কোথায় আছেন, কী অবস্থান নিচ্ছেন।’ অ্যান্ড্রুর পানশালায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি থেকে আসা বোরবর্ন হুইস্কি রাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্ড্রু প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি শুল্ক আরোপ কিছুটা বিলম্ব করবেন। কিন্তু তাঁর এই কথার কী অর্থ থাকতে পারে?’
যুক্তরাষ্ট্র যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বলবৎ রাখে, তাহলে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মহামন্দা দেখা দিতে পারে।অ্যান্ড্রু বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পানীয় তত দিন পানশালায় রাখা বন্ধ রাখব, যত দিন না বিষয়টির সুরাহা হচ্ছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর কানাডায় গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ পণ্য মার্কিন কোম্পানি ও মক্কেলদের কাছে রপ্তানি করা হয়, তারা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ বলবৎ রাখে, তাহলে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মহামন্দা দেখা দিতে পারে।
ট্রাম্পের এই শুল্কারোপের প্রভাব যথেষ্ট বিপর্যয়কর হতে পারে। এ কারণেই কিনা কানাডার সরকার ইতিমধ্যে কোভিডের সময়ের মতো উদ্বেগ নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে শুল্কারোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও নীতির সহকারী অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ বব গিলেজাউ বলেন, শুল্কারোপ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হলেও যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আমি আনন্দিত যে আমরা মার্কিন পণ্য থেকে মুক্ত হচ্ছি এবং স্থানীয় ব্যবসাকে সহায়তা করার পথে এগোচ্ছি। আমি মনে করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ—লিয়া রুসেল, ব্যবস্থাপক টরন্টোর ম্যাডিসন অ্যাভিনিউকানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুল্কারোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দেওয়ার ট্রাম্পের পরামর্শের নিন্দা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার অটোয়ায় গণমাধ্যমকে ট্রুডো বলেন, ‘ট্রাম্প কানাডার অর্থনীতিকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখতে চান। কারণ, সেটা হলে কানাডাকে তাঁর দেশের অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে।’
অধ্যাপক গিলেজিউ বলেন, যাকে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ মিত্র ভেবে থাকে, সেই প্রতিবেশী দেশ থেকে এমন আচরণ কানাডার জন্য গভীর ক্ষত বৈকি।
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা কয়েক শ বছর ধরে ঘনিষ্ঠ মিত্র। কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আচরণ করছে, কেবল তা নিয়ে তারা হতাশ নন, বরং ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ নিয়েও তারা হতাশ।
অধ্যাপক গিলেজিউ বলেন, ‘আমরা ভদ্র, সম্মানিত মানুষ। আমরা আমাদের মিত্রদের পাশে দাঁড়াই। কানাডার মানুষের মধ্যে আমরা যে ক্ষোভ দেখছি, সেটার কারণ হচ্ছে মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ।’
কানাডার মার্কিন পণ্য বর্জনের প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। কানাডার গণমাধ্যম গ্লোবাল নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইট সেন্টার কানাডার তথ্যমতে গত বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে কানাডীয়দের ভ্রমণের বুকিং ৪০ শতাংশ কমেছে। স্থলপথে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও ওয়াশিংটন স্টেটের মধ্যেও কানাডার মানুষের ভ্রমণ বেশ কমে গেছে।
শুল্কারোপের আগে কানাডীয়দের ভ্রমণের প্রধান গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কেবল ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটনশিল্পে কানাডার নাগরিকদের অবদান ছিল প্রায় ২ হাজার ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।
এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে গিলেজাউ বলেন, কানাডার মানুষ সাধারণত প্রতিবেশীর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু সেটা না হলে কানাডার ‘অন্য যেকোনো জায়গার’ বন্ধু থাকা দরকার। কানাডার মানুষ সবাই এ বিষয়ে একমত।