যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 11th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প এবং সংস্কারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন।
সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কাজ স্থগিত করার বিষয়ে মার্কিন সিদ্ধান্তের ফলাফল নিয়ে আলাপ করেন।
আরো পড়ুন:
সহিংসতা-হানাহানি যেন না হয়, সজাগ দৃষ্টি রাখুন: প্রধান উপদেষ্টা
দুবাই যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং ট্রেসি জ্যাকবসন।
একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর তত্ত্বাবধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য তার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংস্কার ও জুলাই ঘোষণাপত্র বিষয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরে রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে।”
সাক্ষাতে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন বলেন, “নতুন সরকারের জন্য যে নির্বাচন হবে, তা অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত।”
তিনি সম্প্রতি দেশে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কেও জানতে চান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের অভিযানের সময় যেকোনো মূল্যে মানবাধিকার বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রতিশোধের চক্র ভেঙে দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি তৈরি করতে যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।”
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে বসবাসরত ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সহায়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা।”
প্রফেসর ইউনূস বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি’র জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে সহায়তা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্ত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে হাইতির মতো দেশগুলোতে ডায়রিয়া এবং কলেরাজনিত মৃত্যু প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআরবি’র ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ইউএসএআইডির সাথে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনর্গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন। এখন এটা বন্ধের সময় নয়।”
ঢাকা/হাসান/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সহ য ত ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে এখনো সংশয়ে বিএনপি
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো সংশয়ে আছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চলতি বছরে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখনো ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। খোদ সরকারের ভেতর থেকেই নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ব্যক্তিত্বকে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে তাঁর সরকার। নির্বাচন কমিশনও (সিইসি) সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবু ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন বিএনপির নেতারা। গত সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় নেতাদের বক্তব্য-পর্যালোচনায় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা উঠে আসে।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে কথা বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি, সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তিনি জাতির সামনে নির্বাচনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করবেন। এতে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য অনিশ্চয়তা কেটে যাবে, সর্বক্ষেত্রে স্বস্তি আসবে।’
সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দুটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় তিনি মনে করেন না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে। বিএনপির নেতারা এর মধ্যে ভিন্ন কিছুর আভাস দেখছেন। দলটির নেতারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর জন্য সরকারের প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা বা সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা দায়ী। এ অবস্থা চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হওয়ার লক্ষণ নেই। তাহলে কি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হলে নির্বাচন হবে না?
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির নেতারা শুরু থেকেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আসছেন। অন্যদিকে সরকার সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর মাধ্যমে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। দলগুলোকে চিঠি দিয়ে সংস্কারের বিষয়ে ‘ছক’ পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার মতামত পাঠানোর শেষ দিন।
বিএনপি আজ মতামত দিচ্ছে নাবিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো ছকে টিকচিহ্ন দিয়ে বিএনপি এখনই মতামত পাঠাচ্ছে না। তারা সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের আলোকে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে দলীয় মতামত জানাবে। এ জন্য তারা কমিশনের কাছে সময় চেয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু ছকে টিকচিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে গেলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই আমরা ছকের পাশাপাশি বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে মতামত জানাব।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়েও বিএনপিতে প্রশ্ন আছে। সংলাপ কাদের সঙ্গে হবে, শুধু নিবন্ধিত দল নাকি অনিবন্ধিত দলেরও হবে। নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে হলে জামায়াত ও তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা নয়। বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। কারণ, অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ হলে আরও অনেক দলকে আমন্ত্রণ জানাতে হয়।
কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি এবং সমালোচনা অব্যাহত রাখলেও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না বিএনপি। সরকারকে আস্থায় রেখেই নির্বাচনী সড়কে ওঠার দিকেই বিএনপির লক্ষ্য। তাই সরকার বিগড়ে যেতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না বিএনপি।