ভ্যাট নিবন্ধন: ৬ মাসে এনবিআরের ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
Published: 11th, February 2025 GMT
গত জুলাই-আগস্টের ধাক্কা সামলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নতুন নিবন্ধন প্রদানে গত ৬ মাসে ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যদিও আগস্ট মাসে এ হার ছিল ২৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ভ্যাটের আওতা বাড়ানো এবং নতুন নতুন ভ্যাট দাতাকে ভ্যাট নেটের আওতায় আনার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার ফলে গত ছয় মাসে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি প্রতিষ্ঠানকে নতুন নিবন্ধনের মাধ্যমে ভ্যাট নেটের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে নতুন সংকটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য’
অনলাইনে রিটার্ন জমা ১০ লাখের বেশি
এনবিআর জানায়, জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্যে বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেজন্য নতুন ভ্যাট আওতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের ভ্যাট নিবন্ধন সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৪৪টি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে নিবন্ধন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২২৮টি। বছরের ব্যবধানে নতুন নিবন্ধন সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে যায়।
এদিকে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এনবিআরের নতুন প্রশাসন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নতুন ভ্যাটদাতা শনাক্তরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন। ফলে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে নতুন নিবন্ধনের হার ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নতুন ভ্যাট নিবন্ধন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এনবিআর ইতোমধ্যে ভ্যাটযোগ্য বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩ কোটি টাকা হতে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের আওতায় রাখা হয়েছে।
নতুন নিবন্ধন প্রদান ও আইনানুগ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের সাথে সেবামূলক মনোবৃত্তি বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৬ মাসে নতুন ভ্যাট নিবন্ধন সংখ্যা ৫০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছে এনবিআর।
ঢাকা/এনএফ/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব পেল একক প্রতিষ্ঠান
অনিয়ম, ব্যর্থতা এবং জালিয়াতির অভিযোগ থাকার পরও এককভাবে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতার অর্থ বিতরণ কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে না দেওয়ার আলোচনা শুরু হয়েছিল। এ নিয়ে কয়েকটি বৈঠকে আগের মতো উপকারভোগীর পছন্দের এমএফএস অ্যাকাউন্টে বিতরণের সুপারিশ এসেছিল। সেই সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষ ও সমমানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য তথ্য এন্ট্রির ক্ষেত্রে অভিভাবকদের শুধু নগদের অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এবং ভর্তি সহায়তার অর্থ ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে গত বছরের ২ জুন ত্রিপক্ষীয় চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রির ক্ষেত্রে শুধু ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট নম্বর এন্ট্রির প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল ট্রাস্টের আওতাধীন সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির ষষ্ঠ-দ্বাদশ ও সমমান শ্রেণির উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সব অনলাইন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ‘নগদ’-এ রূপান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে উপকারভোগীদের পছন্দের অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি নিতে আবার নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা পোহাতে হয়। ২০২৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানোর পরও সব শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট ‘নগদ’-এ রূপান্তর করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে ২৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দের অ্যাকাউন্টেই উপবৃত্তি দেওয়া হয়।
২০২১ সাল থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব উপবৃত্তি কার্যক্রম প্রধামমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে পরিচালনা করা হতো। এর অধীনে অভিভাবকদের পছন্দের অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি দেওয়া হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারিতে উপকারভোগী এবং তাদের অভিভাবকদের মতামত উপেক্ষা করে পছন্দের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে উপবৃত্তি পাঠানোর পরিবর্তে এককভাবে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের এই উপবৃত্তি পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেক জায়গায় এদের এজেন্ট নেই। আর নগদের অ্যাকাউন্ট খুলতেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক বসানোর পর নিরীক্ষায় উঠে এসেছে, নগদ লিমিটেডে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক অর্থ বা ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সরকারের আমলে নিয়মের বাইরে গ্রাহক বানানো, সরকারি ভাতা বিতরণসহ একচেটিয়া সুবিধা পায় নগদ। প্রতিষ্ঠানটিতে যখন এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়, তখন এর পরিচালনায় আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন। সবার চোখের সামনে এসব অনিয়ম হলেও চুপ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ডাক অধিদপ্তর।
গত ১১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, নিরীক্ষা চালানোর পর নগদে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ‘অনিয়মের’ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত ৬৪৫ কোটি টাকা ইলেকট্রনিক মানি (ই-মানি) তৈরি করেছে নগদ। বয়স্ক, উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি ভাতার অর্থ বিতরণ না করে নগদ সেই অর্থ অন্যখানে সরিয়েছে বলেও জানান গভর্নর। সম্প্রতি নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (সিইও) ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) স্মৃতি কর্মকার সমকালকে বলেন, উপবৃত্তি প্রদানে নগদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত রয়েছে। তার পরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চালানো হবে কিনা তা জানতে চেয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডাক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে নগদের মাধ্যমেই উপবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেয়। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।