অতীতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে—এমন তথ্য–উপাত্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, কিছু ইঙ্গিত আছে—স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ বাস্তবায়ন করার জন্য তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিক আইনিভাবে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সেই জোড়া খুনের ১৩ বছর পূর্ণ হলো।

হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে ছিলেন মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম। ছিলেন সাগর–রুনির একমাত্র সন্তান মিহির সরওয়ার মেঘ। শিশির মনির মামলার বাদী নওশের আলমের আইনজীবী।

শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৩ বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ করে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা মনে করি, এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি বড় ধরনের ব্যর্থতার ফল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। উচ্চতর টাস্কফোর্স আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে তাদের তদন্তের সারবত্তা পেশ করবেন। এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।’ তিনি বলেন, সায়েন্টিফিক এবং ফরেন (বিদেশি) যেসব এভিডেন্স (প্রমাণ) আছে, সেগুলো এক্সামিন (খতিয়ে দেখা) করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। শিশির মনির বলেন, ‘যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কিছু ডেভেলপমেন্ট হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ডেভেলপমেন্টগুলো নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন সাবমিট (জমা) করা হবে।’

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, অতীতে এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য এবং সত্যিকার অর্থেই বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত তদন্ত রিপোর্ট আদালতের সামনে দাখিল করবেন—এটিই আমরা প্রত্যাশা করি।’

‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ’

এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে একটু স্পর্শকাতরতা (সেনসিটিভিটি) আছে। তদন্তের বিষয়টির সঙ্গে একধরনের গোপনীয়তা আছে। তিনি বলেন, ‘তারপরও এতটুকু জানাচ্ছি আমরা—যাঁদের এক্সামিন (জিজ্ঞাসাবাদ) করা হয়েছে, যাঁদের সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আলোচনা–আলাপ করেছেন, অন্য মামলায় জেলে আছেন, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলাপ করা হয়েছে। যাঁরা কিছুটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ব্যাপারে তাঁরা মুখ খুলেছেন।’

আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে এসব বিষয়ে পুরোটা বলছেন না বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি বলেন, তবে সেখানে কিছু আশা আছে, কিছু ইন্ডিকেশন (ইঙ্গিত) আছে, যেখানে অতীতে এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্টারেস্ট ইমপ্লিমেন্ট (স্বার্থ বাস্তবায়ন) করার জন্য এই তদন্তপ্রক্রিয়াকে সঠিক আইনিভাবে পরিচালিত হতে দেওয়া হয়নি। এগুলো তদন্তের অংশ হবে। তিনি আরও বলেন, কারা বাধা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন। আগে যাঁরা রিট করেছিলেন, তাঁরাই বা কেন রিট করেছিলেন। কেন র‌্যাবকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।.

.. সেটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আশা করা যায় ভালো কিছু হবে।

অপর প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, অতীতে উচ্চপর্যায় থেকে এখানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উচ্চপর্যায় চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হবে। আপাতত তদন্তের স্বার্থে এই উচ্চপর্যায়ের সুনির্দিষ্ট গতিবিধি বলাটা সমীচীন নয়।

আরও পড়ুনসাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর: ৬ বছর মামলার কার্যত কোনো তদন্ত হয়নি ১৪ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ র মন র তদন ত র আইনজ ব র বল ন পর য য় কর ছ ন সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারক এজলাসে ওঠেননি, সাইবার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার শুনানি হয়নি

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এজলাসে ওঠেননি সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নূরে আলম। আইনজীবী সমিতি বলছে, সংক্ষুব্ধ আইনজীবীরা ওই আদালতে শুনানি করতে যাননি।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার এক আসামির জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত। জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হন। আজ সকাল ১০টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য আদালতের কর্মচারীদের জানিয়ে দেন, বিচারক যদি এজলাসে ওঠেন, যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার দায় আইনজীবীরা নেবেন না।

এ বিষয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মিরাজ উদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকের বাতচিৎ হয়। আজ সকালে ঢাকা বারের বেশ কয়েকজন আইনজীবী আদালতে এসে কর্মচারীদের বলে যান, বিচারক যেন এজলাসে না ওঠেন। আইনজীবীদের ওই কথা বিচারককে জানানো হয়। ফলে মামলার কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।’

অবশ্য আইনজীবী শামসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জামিন আবেদন নাকচ করার বিষয় নিয়ে আদালতের সঙ্গে তাঁর কোনো বাতচিৎ হয়নি। জামিন দেওয়া না–দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। জামিনের বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনা ঘটেনি; বরং অনেক আইনজীবীর অভিযোগ, তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি। সাধারণ আইনজীবীরা ওনার আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, আগে থেকে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকের ব্যবহারে অনেক সাধারণ আইনজীবী অসন্তুষ্ট। বৃহস্পতিবার জামিন আবেদন নাকচের পর সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে বিচারকসুলভ আচরণ করেননি বলেও আইনজীবীরা সমিতির কাছে অভিযোগ করেছেন। এ জন্য সাধারণ আইনজীবীরা ওই আদালতে আজ শুনানি করতে যাননি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টিকে নিবন্ধন দিতে নির্দেশ হাইকোর্টের
  • মাইনরিটি জনতা পার্টিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
  • ফার্মগেট থেকে সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ খান গ্রেফতার
  • শিক্ষক ছবিরুলকে একাডেমিক–প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে স্থগিত
  • ভয় দেখিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে জয় করতে হয়
  • ফের ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন
  • ফের ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ মামুন
  • ৮০ শতক জমি নিয়ে ১৮ বছরের টানাপোড়েন
  • বিচারক এজলাসে ওঠেননি, সাইবার ট্রাইব্যুনালে কোনো মামলার শুনানি হয়নি