লাঠিতে ভর দিয়ে টিসিবির ট্রাক খোঁজেন বিল্লাল সরদার
Published: 11th, February 2025 GMT
চার বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা বিল্লাল সরদার। তার পর থেকে তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর্থিক অনটনে এই শরীর নিয়েই দুই দিন ধরে লাঠিতে ভর দিয়ে টিসিবির ট্রাকের খোঁজে নামেন বিল্লাল সরদার।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কথা হয় বিল্লাল সরদারের সঙ্গে। এ সময় তিনি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রির ট্রাকের লাইনে ছিলেন।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গতকাল সোমবার আবারও ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। টানা ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামে আবার ট্রাকে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেই খবর জেনে রাজধানীতে বিল্লালের মতো অনেকেই টিসিবির ট্রাকের খোঁজে নেমেছেন।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে বিল্লাল সরদার জানান, আগে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় প্রতিবন্ধী হওয়ার পর ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না। সব সময় লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। বর্তমানে তিনি রিং রোডের একটি সবজির দোকানে খণ্ডকালীন সহযোগীর কাজ করেন।
গতকাল দুপুরে কাজ থেকে ফেরার পথে কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সামনে পণ্য বিক্রির ট্রাকের পেছনে দাঁড়ান। এক ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পারেননি। তার আগে ট্রাকের সব পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ আবার কারওয়ান বাজারে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়ান তিনি। ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রতিবন্ধী হিসেবে তাঁকে অন্যরা আগে পণ্য কেনার সুযোগ করে দেন। সেই সুযোগ পেয়ে পণ্য কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি।
বিল্লাল সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির ট্রাক থেকে দুবার পণ্য নিলে আমার পরিবারের এক মাস চলে যায়। তবে গত এক মাসের বেশি সময় টিসিবির বিক্রি বন্ধ ছিল। এতে আমাদের অনেক কষ্ট গেছে। গত পরশু শুনেছি, টিসিবির বিক্রি আবার শুরু হবে। এরপর কারওয়ান বাজার এলাকায় লাঠিতে ভর দিয়ে টিসিবির ট্রাক খুঁজেছি।’
বিড়ম্বনায় সাধারণ মানুষএকজন ভোক্তা টিসিবির ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। এসব পণ্য কিনতে ব্যয় হয় ৫৮৮ টাকা। বাজার থেকে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে এক হাজার টাকার মতো লাগে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য নিতে আসা অধিকাংশ মানুষকেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আজ কারওয়ান বাজারে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে টিসিবির ট্রাক আসে বেলা সাড়ে ১১টায়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেখানে ৫০–এর বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়ান। আর এক ঘণ্টায় উপস্থিতি বেড়ে আড়াই শ ছাড়িয়ে যায়। অথচ টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে।
অর্থাৎ পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ফলে বিকেল পৌনে পাঁচটায় যখন ট্রাকের পণ্য বিক্রি শেষ হয়, তখন অন্তত ৫০ জনকে খালি হাতে ফেরত যেতে দেখা গেছে। আবার অনেকে কাজ ফেলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আর্থিক লোকসানের কথাও জানিয়েছেন।
রাজধানীর বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা কহিনুর খাতুন কারওয়ান বাজারে কুড়িয়ে পাওয়া সবজি বিক্রি করেন। এতে তাঁর দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। আজ টিসিবির ট্রাক আসার খবর শুনে সবজি বিক্রি বন্ধ রেখে ট্রাকের পেছনে দাঁড়ান। পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার সুযোগ পান তিনি। কহিনুর খাতুন বলেন, ‘৪০০ টাকা বাঁচাতে এখানে (ট্রাকের পেছনে) দাঁড়িয়েছিলাম। অন্যদিকে পাঁচ ঘণ্টায় সবজি না বেচে উল্টো আমার ৫০০ টাকা লোকসান হলো।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ মঙ্গলবার ট্রাকে করে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। এসময় ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ক রওয় ন ব জ র ব ল ল ল সরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
রমজান মাসজুড়ে টিসিবির ট্রাক সেল চালু থাকবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসজুড়ে টিসিবির ট্রাক সেল চালু থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় সব বিভাগীয় সদর, দারিদ্র্যপীড়িত পাঁচটি এলাকাসহ মোট ১৩টি এলাকার ১২ লাখ পরিবারের মধ্যে টিসিবির এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘টিসিবি ৬৩ লাখ পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে। স্মার্ট কার্ড রূপান্তরের কাজে খুলনা অঞ্চলের সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকি কার্ড অ্যাক্টিভেশন সম্পন্ন হবে, এর মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়বে। এই সংখ্যাকে আরও বাড়াতে অতিরিক্ত ১২ লাখ পরিবারের জন্য রমজান মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ট্রাক সেল কার্যক্রম চালু থাকবে। এর মাধ্যমে বাজারে পণ্যমূল্য আরও সহনশীল হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন দিনের স্বপ্ন দেখি, যেদিন টিসিবির কার্যক্রম আর চালাতে না হয়। সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। সেটা হয়তো একটু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তার পরও আমরা সেটা অর্জন করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, টিসিবির কার্ডধারী একজন ভোক্তা ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কেজি চিনি এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হবে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা করে এবং খেজুর ১৫৬ টাকা দামে বিক্রি করবে টিসিবি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ, খুলনার পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ।