সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর ড. আলী রিয়াজ বলেছেন, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে কাঠামোগতভাবে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাকে স্থায়ী করা হয়েছে, সেগুলো কেবল প্রাণের বিনিময়ে অবিলম্বে দূর করতে পারব, এ রকম ভাবার সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আলী রিয়াজ বলেন, আজকে আমরা যে বৈষম্যের কথা বলছি, যেই আন্দোলনের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, যে দাবিতে, যে তাগিদে মানুষ প্রাণ দিয়েছে, সেটা আগামীকাল অর্জিত হবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। অনেকেই আশাহত হচ্ছেন এত প্রাণ গেল, এত কিছু হলো, কিন্তু বৈষম্য তো কমছে না।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। মেধা পরিশ্রম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কাণনে সবাইকে এখানে নিয়ে আসছে। অন্যদের সহযোগিতা ছাড়া এককভাবে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করতে হবে পর্দার অন্তরালের লোকদের। যাদের অবদানের কারণে এখানে আসছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকতে হবে। আপনি যদি স্বীকার করতে না পারেন তাহলে ব্যক্তির সাফল্যের উৎযাপন হবে। দেশের জন্য কোন কাজে আসবে না।

তিনি আরও বলেন, যদি অগ্রসর হতে চাই তাহলে সকলে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। মেধা, শ্রম ও জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতাই অনুপ্রাণিত করবে জ্ঞান অর্জনে। যে জ্ঞান কেবলমাত্র একক চিন্তায় আবদ্ধ করে সে জ্ঞান রাষ্ট্র চিন্তায় কোন কাজে আসে না।

আলী রিয়াজ বলেন, নতুন নতুন জ্ঞান সংযুক্ত করতে হবে। নতুন কোন চিন্তার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করবেন যেটি দেশের পরিবেশ চায় কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। পরিবেশকে রক্ষা করে না এমন বিজ্ঞান প্রযুক্তি মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়।  প্রাণ ও প্রকুতিকে রক্ষা না করতে পারলে বাংলাদেশ রক্ষা হবে না।

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহিদদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে শহীদ ও আহতদের জন্য দোয়া করা হয়।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড.

এস এম আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আকন্দ, কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মুহাম্মদ নাসরুল্লাহ, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পাবনায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নিশ্চিত করুন প্রকাশকের নিরাপত্তা

সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সব্যসাচী’ নামক এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী বিপণিকেন্দ্রে যেই ঘটনা ঘটিয়াছে, উহা কেবল নিন্দনীয়ই নহে; যথেষ্ট উদ্বেগজনক বটে। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক দল ব্যক্তি নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনের বই বিক্রয়ের অভিযোগ তুলিয়া হট্টগোলের সূচনা করে। প্রকাশক শতাব্দী ভব প্রতিবাদ করিলে হট্টগোলকারী জনতা তাঁহার উপর হামলা করিতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া প্রকাশককে স্বীয় জিম্মায় লইয়া বিপণিকেন্দ্রটি বন্ধ করিয়া দেয়। সামাজিক মাধ্যমে বিস্তৃত ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পুলিশের সুরক্ষা অবস্থাতেই কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি শতাব্দী ভবের উপর হামলা চালায়। গ্রন্থ বিপণনের ফলস্বরূপ এহেন দলবদ্ধ হট্টগোল ও হামলায় আমরা উদ্বিগ্ন না হইয়া পারি না। আমরা মনে করি, যেই কোনো গ্রন্থ লইয়া যে কাহারও ভিন্নমত বা আপত্তি থাকিতে পারে। দেশে সেই ভিন্নমত বা আপত্তি প্রকাশের আইনসংগত রীতিও প্রচলিত। আমরা মনে করি, কোনো অপছন্দনীয় লেখা বা শিল্পকর্মের জবাব লেখনী বা বক্তব্য পেশের মধ্য দিয়া প্রদান করাই উত্তম। তবে কেহ উক্ত বিষয়ে প্রচলিত আইনের আশ্রয় গ্রহণ করিলে আপত্তির কিছু নাই। কারণ সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আদালতে যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়াই ফয়সালা হইবে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে যেইভাবে প্রকাশকের উপর হামলা করা হইয়াছে; সংবিধানস্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার বা চিন্তাচর্চার জন্য উহা অশনিসংকেতস্বরূপ। 

স্পষ্টত, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে ব্যর্থ হইয়াছে। স্মরণ করা যাইতে পারে, একুশে গ্রন্থমেলায় বই বিক্রয়ের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রহিয়াছে। ‘সব্যসাচী’ সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করিলে মেলা কর্তৃপক্ষ তাঁহার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিত। তাহা না করিয়া কার্যত উক্ত প্রকাশককে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হস্তে তুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। কারণ, সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তসলিমা নাসরিনের গ্রন্থ বিক্রয়ের জন্য বিপণিকেন্দ্রটি গুঁড়াইয়া দিবার হুমকি পূর্বেই দেওয়া হইয়াছিল। অর্থাৎ গ্রন্থমেলায় সৃষ্ট আলোচ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা বা পরিহার কিংবা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করিতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সময় পাইয়াছিল। এই সুযোগ কেন গৃহীত হয় নাই– সেই প্রশ্নের জবাব কর্তৃপক্ষকে দিতেই হইবে। স্মরণে রাখিতে হইবে, প্রকাশকের এইরূপ হেনস্তা ও হামলা কেবল একটি বিপণিকেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকিবার নিশ্চয়তা কেহ দিতে পারে না; গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশকেরও নির্বিঘ্নে থাকিবার নিশ্চয়তা নাই।
এইবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হইতেছে এমন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, যথায় শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পূর্বেকার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাইতেছে। এই প্রেক্ষাপটে অনাকাঙ্ক্ষিত যেই কোনো পরিস্থিতি পরিহারের লক্ষ্যে অধিকতর সতর্কতা কাম্য ছিল। কেহ যাহাতে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইতে না পারে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, গ্রন্থমেলা কর্তৃপক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। অবশ্য সোমবার রাত্রিতে প্রদত্ত বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলোচ্য ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাইয়া বলিয়াছেন, একুশে গ্রন্থমেলা এই দেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের মিলনস্থল। তথায় এই প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ন করে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে। তিনি পুলিশ ও বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনিবার যেই নির্দেশ দিয়াছেন, উহা দ্রুত প্রতিপালিত হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ