তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, ‍“তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিস্তা আমাদের জীবনরেখা, এর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতেই হবে।”

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত প্রস্ততিমূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

আরো পড়ুন: তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন ২ উপদেষ্টা

আরো পড়ুন:

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস, আরো ৫ বিএনপি নেতা কারামুক্ত

ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছে ইসি

দুলু বলেন, “যারা গত ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, জনগণের দিকে তাকায়নি। আট হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল চীন। তারা সমীক্ষা ও ডিজাইনও করেছিল, কিন্তু সরকার ভারতের পররাষ্ট্র নীতির কাছে নতজানু হওয়ার কারণে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আর আমরা ভারতের কথা শুনব না। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিদেশ যদি সাহায্য না করে, বাংলাদেশের অর্থেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং সমস্বরে দাবি উত্থাপন করি, তাহলে যেকোনো সরকারই আমাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যারা বিএনপি করি, তারা এক জায়গায় দাঁড়াতে পারিনি। যেখানে গেছি, পুলিশ হামলা করেছে। আমরা যেখানেই দাঁড়িয়েছি, তারা আমাদের ধরে জেলে পাঠিয়েছে, খুন ও গুম করেছে। সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে পুলিশ। অনেকে পঙ্গু হয়েছে। তবু, বিএনপি জনগণের দাবি থেকে পিছিয়ে যায়নি। দাবি আদায় করেই ছেড়েছে। নতুন বাংলাদেশের উন্মোচন ঘটেছে। এখন আমরা কথা বলতে পারি, দাবি আদায় করতে পারব ইনশাআল্লাহ। সে কারণে আমি রংপুরবাসীকে বলি- ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “এই দাবির সঙ্গে তারেক রহমান ইতোমধ্যে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি ১৮ তারিখ সন্ধ্যায় বক্তব্য দেবেন। ১৭ তারিখ বিএনপির মহাসচিব অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। আশাকরি, আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি যদি আমাদের দাবির সঙ্গে সমস্বরে কথা বলেন, তাহলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।” 

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সভায় সংগঠনের নেতারা ও স্থানীয় বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা.

মইনুল হাসান সাদিক।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিকের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, সহ-সভাপতি শহীদুজ্জামান শহীদ, মোজহারুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল আরজু, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ, অধ্যাপক ডা. জিয়াউল হক জিয়া, সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপন।

ঢাকা/মাসুম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ এ প রকল প ব এনপ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ