বলাৎকারে অভিযুক্ত শিক্ষককে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল কয়েক প্রভাবশালী
Published: 11th, February 2025 GMT
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভাগনেসহ একটি চক্র অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালীগ্রামের নুরুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ওই মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগের শিক্ষক। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারীর চিতারবাজার গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষককে বাঁচাতে ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন ও তার সহযোগী পাঁচকুল গ্রামের বাসিন্দা আসমত খাঁন, সাহাদাৎ মাতুব্বর ও গোয়ালবেড়া গ্রামের জামাল মোল্লা মাদ্রাসায় আসেন। সেখানে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দফারফা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে তাদের জিম্মায় নেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদ্রাসা পরিচালক মাওলানা নজরুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, গতকাল বিকেলে হিফজ বিভাগের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে আটকে বলাৎকার করেন আনোয়ার হোসেন। একপর্যায়ে শিশুটির চিৎকার শুনে অন্যরা দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়। বিষয়টি মীমাংসা করে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও সালাউদ্দিন খাঁন নামের এক ব্যক্তি ওই রাতেই শিক্ষককে তাদের জিম্মায় নিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তের মুখে আলকাতরা মেখে চুল কেটে দিয়েছে স্থানীয়রা। ঘটনাটি ধামাচাপার দেওয়ার চেষ্টা করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন ও তার একটি প্রভাবশালী চক্র। অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে প্রায় ১ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে মাদ্রাসা থেকে পালাতে সহযোগিতা করেন তারা। এতে মাদ্রাসা পরিচালক নজরুল ইসলাম ও মামুন রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মাদ্রাসার পাশের কয়েকজন দোকানি জানান, ঘটনার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে বরং তাকে সেখান থেকে গোপনে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলেন, ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুরা। তাই ওই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকসহ বিষয়টি ধামাচাপায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত বিচারের দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে কলে পাওয়া যায়নি।
চান্দ্রার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোনো দফারফার বিষয়ে অবগত নন তিনি। এ বিষয়ে তার ভাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন বলেন, গতকাল রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা মাদ্রাসায় গিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করলে সেখানে যাই। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিকটিমের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ওই রাতেই মাদ্রাসার পরিচালকদের নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করি। তবে, এতে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার থানায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য গ য গ কর ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শিশুটির মা, অপরাধীদের ফাঁসি চাইলেন বোন
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সন্তানের মৃত্যুতে শিশুটির মা আয়েশা অক্তার বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আহাজারি করে তিনি ধর্ষকদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন। শিশুটির বোনও অঝোরে কাঁদছেন। তিনি অভিযুক্ত ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক হয়ে পড়েছেন। পরিবারে অন্য সদস্যরাও কান্নাকাটি করছেন। এ মৃত্যুতে গ্রামবাসীরাও মর্মাহত।
স্থানীয় সব্দালপুর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি পরিবারটির পাশে আছেন। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
আট বছরের শিশুটি ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে শিশুটিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাকে মাগুরা আনা হয়। এরপর শহরের নোমানী ময়দানে প্রথম জানাজা, পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে দ্বিতীয় জানানা শেষে স্থানীয় সোনাইকুন্ডি কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, মৃত্যুর ঘটনায় তার ভগ্নিপতি হিটু শেখ, হিটু শেখের দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখের নামে শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আসামিদের মধ্যে হিটু শেখকে সাতদিন ও অন্যদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জ্ঞিাসাবাদ চলছে।