গণমাধ্যমকর্মীরা এখন বেশি চাপের মধ্যে কাজ করছেন: জিএম কাদের
Published: 11th, February 2025 GMT
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, “যেকোনো সময়ের চেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা এখন বেশি চাপের মধ্যে কাজ করছেন। গত কয়েক মাসে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় অসংখ্য কর্মী চাকরি হারানোর কারণে তাদের মাঝে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ার্ত পরিবেশে সেলফ সেন্সরশিপ চালু করেছে গণমাধ্যমগুলো।”
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
জিএম কাদের বলেছেন, “রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) ২০২৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বাংলাদেশ।”
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরো বলেন, “গেলো কয়েক মাসে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ১৫০ জনের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া থেকে প্রায় ২০০ কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। একই সময়ে বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীর চাকরি হারানো নজিরবিহীন। এরইমধ্যে চাকরিচ্যুত গণমাধ্যমকর্মীদের পরিবারে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রচ্ছন্ন চাপের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না তারা। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা বা সরকার অখুশি হবে, এমন সংবাদ প্রকাশে ভয় পাচ্ছে গণমাধ্যম। আমাদের ইন্টারভিউ করেও তা প্রকাশ করতে পারছে না গণমাধ্যমগুলো।”
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সার্বিকভাবে সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। ফলে, নিরপেক্ষ ও নির্ভীক গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ।”
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
তিনি আরো বলেছেন, “দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, নানা চাপ ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীরা কাজ করতে বাধ্য থাকেন। সাংদিকদের নিরাপত্তা ও সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন গঠন করা হয়। তারা সাংবাদিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নির্ভীক, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রসার ঘটাবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু মনে হচ্ছে, উক্ত পেশাজীবী সংগঠনগুলো অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের মতো দলীয় ভিত্তিতে বিভাজিত হয়ে আছে। এতে সার্বিকভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। ফলে, কোনো সরকারের আমলেই সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নিরপরাধ সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতিসহ নানা ধরনের হয়রানি ও হেনস্থার শিকার হতে দেখা যায়।”
সাংবাদিকদের নিরপত্তা এবং অযথা হয়রানি বন্ধ ও চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণম ধ যমকর ম র চ কর চ য ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কোলজুড়ে ফুটফুটে শিশু, চোখে আনন্দ অশ্রু
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২; সোমবার সকাল ৯টা। শেরপুর শহরের বেসরকারি একতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে তোয়ালে মোড়া সদ্যোজাত এক শিশুকে বের করে নিয়ে এলেন চিকিৎসক। নতুন পৃথিবীর নতুন আলোতে তখনও ছেলে শিশুটি ধাতস্ত হতে পারেনি; চোখ পিটপিট করছে তার। সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ধকলে শিশুটির মা জামেনা খাতুন তখনও অচেতন। চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষারত বাবা মো. মিজানের হাতে তুলে দিলেন সন্তানকে। তারপর যা হলো, সেটি সত্যি পৃথিবীর সেরা দৃশ্যগুলোর একটি হতে পারে। কাঁদতে কাঁদতে বাবা মিজান চুমু খেলেন সদ্যোজাত সন্তানের তুলতুলে হাতে। ওদিকে আজান দিলেন মিজানের ছোট বোনের স্বামী মো. মাসুদ।
শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রত্যন্ত গ্রাম পাইকারতলার বাসিন্দা মিজান ও জামেনা। জেলার সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষিকাজ। এর বাইরে রাজমিস্ত্রি ও টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন অনেক যুবক। শিক্ষায় অনগ্রসর এ গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো না। যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবার সুব্যবস্থা না থাকায় যেতে হয় শহরে। ফলে অনেকেই গ্রামের ধাত্রী বা দাই দিয়ে প্রসব করান। এতে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার এ গ্রামে বেশি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান মেম্বার। তবে পেশায় রাজমিস্ত্রির সহকারী মিজান সংসারে শত অভাবের মধ্যেও স্ত্রী জামেনার ব্যাপারে ছিলেন সচেতন।
মিজান জানান, রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে দৈনিক ৬০০ টাকা বেতন পান। তাঁর বাবা জালাল উদ্দিনও একই কাজ করেন। বাবা-মাকে নিয়ে তাদের যৌথ পরিবার। সংসারে অভাব অনটন লেগে আছে। তাদের প্রথম সন্তান জোবায়েদের বয়স ৫ বছর। স্ত্রী দ্বিতীয়বারের মতো যখন অন্তঃসত্ত্বা হলেন, তখন নানা অভাব অনটন সত্ত্বেও তাঁকে সর্বোচ্চ যত্নে রেখেছিলেন। প্রত্যন্ত গ্রামে অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ খুব কম। তাই স্ত্রীকে শেরপুর নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করিয়েছেন। গর্ভধারণের পর টিকাসহ চিকিৎসকের পরামর্শে সব ধরনের চিকিৎসা ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। সীমিত আয় থেকে একটু একটু সঞ্চয় করে সিজারের জন্য টাকা জমিয়েছেন। এসব করতে গিয়ে কষ্ট হয়েছে। এখন সেসব ভুলে গেছেন সন্তানের মুখ দেখে।
মিজান আরও জানান, রোববার রাত ২টার দিকে জামেনা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। প্রতিবেশী এক আত্মীয়ের ইজিবাইক ভাড়া করে ফজরের নামাজের সময় স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন শেরপুরের উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন, তাঁর স্বামী ও জ্যাঠাতো ভাইয়ের বউ। প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি যান নারায়ণপুরের একতা হাসপাতালে। ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক সকাল ৯টায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করায়।
দুই ছেলেকেই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা পোষণ করে মিজান বলেন, তাঁর স্বপ্ন ওরা দু’জনই ভবিষ্যতে নামকরা আলেম হবে। শিশুর কি নাম রেখেছেন জানতে চাইলে মিজান জানান, তাঁর ছোট ভাই মাদ্রাসার হুজুরের সঙ্গে কথা বলে নাম ঠিক করবেন। বাড়ি যাওয়ার পর নাম রাখা হবে।
মিজানের মা রোকেয়া বেগম সোমবার বিকেলে এসেছিলেন নাতি দেখতে। ফুটফুটে নাতিকে কোলে নিয়ে বলছিলেন, ‘ছেলের চেহারা আমার শ্বশুরের মতো হয়েছে। তিনি খুব ভালো মানুষ আছিলেন। নাতি আমার খুব ভাগ্যবান হবো। বছরের প্রথম দিন জন্ম নিছে। এইডা আল্লাহর রহমত। আল্লাহ ওরে সুস্থ রাখুক এই দোয়া করি।’
সোমবার রাতে কথা হয় জামেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, সোমবার যে বৈশাখের প্রথম দিন অর্থাৎ নববর্ষ ছিল জানতেন না। জ্ঞান ফেরার পর যখন নার্সের কাছে শুনলেন, নতুন বছরের প্রথম দিনে তিনি ওই হাসপাতালে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তখন কুব ভালো লেগেছে। মাশাআল্লাহ বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন।
জামেনা আরও বলেন, অভাবের সংসারে তাঁকে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি অনেক যত্নে রেখেছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর কোনো বাড়তি কাজের চাপ দেননি। সময় মতো ডাক্তার দিয়ে চেকআপ করেছেন। সবজির পাশাপাশি কষ্ট হলেও ডিম, দুধ, কলা খেয়েছেন নিয়মিত।
হাসপাতালের চিকিৎসক মাহবুবা কবীর স্বপ্না বলেন, মা ও শিশু দু’জনই ভালো আছে। শিশুটির ওজন হয়েছে ৩ কেজি ৭০০ গ্রাম। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানো হয়েছে। চারদিন পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।