নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের পক্ষে ৮৬% মানুষ
Published: 11th, February 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ। আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে মানুষের সাড়া একেবারেই কম।
বেশির ভাগ মানুষ সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে। তবে সেখানে সরাসরি ভোট চান তাঁরা।
সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৪–এ মানুষের এ মতামত উঠে এসেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে এ জরিপ করে। কমিশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে জরিপটি প্রকাশ করা হয়েছে।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, জরিপে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
দেশের ৬৪ জেলা থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে ৪৫ হাজার ৯২৫টি খানার (পরিবার) ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী মানুষের কাছ থেকে জনসংখ্যা অনুপাতে মতামত নেওয়া হয়েছে।
কমিশন আরও বলেছে, তারা বিভিন্নভাবে অংশীজনদের মতামত সংগ্রহ করেছে। তবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের প্রতিফলনের জন্য তারা জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
জরিপে প্রশ্নের একটি বিষয় ছিল নির্বাচনকালীন সরকার। এতে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ। আরও ৬ শতাংশের বেশি এ বিষয়ে না জানার কথা জানিয়েছেন। উত্তর দিতে রাজি হননি প্রায় ২ শতাংশ মানুষ। বাকি প্রায় ৮৬ শতাংশ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া উচিত বলে মত দেন।
১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর থেকে বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এরপর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে করেছে। নির্বাচনগুলো ছিল একতরফা, পাতানো ও প্রহসনের।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
হাইকোর্ট গত ১৮ ডিসেম্বর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেন।
রাজনৈতিক মহলে এখন ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুবারজরিপে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাতে রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৫ শতাংশ মনে করেন, ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুবারের পক্ষে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ। তবে ১০ শতাংশ বলেছেন, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ হওয়ার পক্ষে নন তাঁরা। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন, মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান পদে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন ৪৯ শতাংশ মানুষ। ৩৭ শতাংশের মত হলো, দুই পদে এক ব্যক্তি থাকতে পারেন।
জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পক্ষে নন সাধারণ মানুষ। পাঁচ বছর মেয়াদের পক্ষে ৭৮ শতাংশ, চার বছরের পক্ষে ১৬ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ।
সংসদ গঠনের ক্ষেত্রে নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে, সেই প্রশ্নে ৭৮ শতাংশ মানুষ প্রার্থীর প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন। মানে হলো, এখন প্রচলিত ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছেন তাঁরা। রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ গঠনের পক্ষে ৯ শতাংশের কম মানুষ।
সংসদকে দুই ভাগে (উচ্চ ও নিম্নকক্ষ) বিভক্ত করার পক্ষে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ। আর ৩৯ শতাংশ এর বিপক্ষে। ২৩ শতাংশের বেশি মানুষ এর উত্তর দিতে নারাজ।
বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদ সদস্যরা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়।
সংবিধান সংশোধনসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ।
নারী আসনের পক্ষে ৭৫% মানুষজাতীয় সংসদে এখন নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনসংখ্যা ৫০। তবে সেখানে সরাসরি ভোট হয় না।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ১৯ শতাংশের কিছু কম উত্তরদাতা। নারী প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ।
সংবিধানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সুরক্ষিত করার সুস্পষ্ট বিধানের পক্ষে ৯১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ।
নাগরিকদের মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতায় কোনো ধরনের বিধিনিষেধ সংবিধানে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৩ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ সাংবিধানিক বিধিনিষেধের পক্ষে।
সভা-সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দেওয়ার স্বাধীনতা সীমিত করার ক্ষমতা সংবিধানে থাকার পক্ষে ৬১ শতাংশের বেশি মানুষ। ২৯ শতাংশ মনে করেন, এ ক্ষমতা সংবিধানে থাকা উচিত নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন ন র দল য় ব যবস থ ত কর র ক ষমত মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
‘নিখোঁজ’ সুবা, টিকটক প্রেম এবং শিশুর সুরক্ষা
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গত ২ ফেব্রুয়ারি ১১ বছর বয়সী কিশোরী আরাবি ইসলাম সুবা নিখোঁজ হলে দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়। দুই দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নওগাঁ থেকে তাকে উদ্ধার করে জানায়, প্রেমের সম্পর্কের কারণে সেখানকার এক কিশোরের সঙ্গে পালিয়েছিল সুবা।
প্রায় একইভাবে গত ১৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রেমিকের সন্ধানে মাগুরায় আসে ১৪ বছরের এক কিশোরী। ১১ জানুয়ারি সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে নিখোঁজ হওয়া স্কুলপড়ুয়া কিশোরীকে (১৩) পাবনায় প্রেমিকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ২৯ ডিসেম্বর সকালে পরীক্ষার ফল জানার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সে। ৩০ জানুয়ারি সিলেটের মোগলাবাজার থেকে নিখোঁজ কিশোরী নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে প্রেমিকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে মাদ্রাসাপড়ুয়া এক কিশোরীর (১৭) সঙ্গে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার শিবপুরের মতিউর রহমান নামে এক তরুণের পরিচয় হয়। গত ১৯ জানুয়ারি ওই তরুণের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণের মামলা করেন কিশোরীর বাবা।
আরাবি ইসলাম সুবার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন উঠলেও অন্য ঘটনাগুলো তেমন আলোচনায় আসেনি। কিন্তু পাঁচটি ঘটনারই যোগসূত্র ‘টিকটক’। ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘদিনের পরিচয়, পরিচয় থেকে ঘনিষ্ঠতা-প্রেম। প্রেমের সম্পর্কের পরিণতি দিতেই অপরিণত বয়সে ঘর ছাড়ছে শিশু-কিশোররা! বাস্তবতা হচ্ছে, সব ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে না। কাজেই ধরে নেওয়া যায়, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। শুধু ঘরছাড়া কিংবা অপহরণেই সীমাবদ্ধ নেই; টিকটকে পরিচয় থেকে প্রেম এবং এ সম্পর্কের জটিলতায় গত দুই মাসে অন্তত চারজন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।
টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্রে অপরিণত বয়সে প্রেম সত্যিকার অর্থে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। শিশু-কিশোরদের বয়ঃসন্ধিকালে তাদের যে মনোসামাজিক পরিবর্তন ঘটে; টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো ডিজিটাল মাধ্যম এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে।
সুবা উদ্ধার হওয়ার পর অনেকেই তার চরিত্রের পোস্টমর্টেম করতে বসেছি। কিন্তু ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে ছেড়ে শিশুটির প্রেমিকের হাত ধরে চলে যাওয়া যে ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ! এ রোগে যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়ংকরভাবে আক্রান্ত, তা কি আমরা বুঝতে পারছি? এ রোগের দাওয়াই কোথায়?
দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩ কোটিরও বেশি, যার বড় অংশ তরুণ-কিশোর। তাদের আবার বড় অংশ ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। বর্তমানে দেশের চার কোটিরও বেশি মানুষ টিকটক ব্যবহার করছে। ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায় সাত কোটি। সামাজিক মাধ্যম যেমন নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট ও যুগোপযোগী করে তুলছে, তেমনি ঝুঁকিও তৈরি করছে। বিশেষ করে ভিডিওনির্ভর সামাজিক মাধ্যমের প্রতি বর্তমান প্রজন্ম বেশি আগ্রহী। শিশু-কিশোরের জন্য যে ধরনের ভিডিও প্রযোজ্য নয়, তেমন ভিডিও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম রিলসে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ভিডিও কনটেন্টের ছড়াছড়ি।
অশ্লীলতাসহ কমিউনিটি গাইডলাইন না মানায় টিকটক গত বছর বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের ১ কোটি ২১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৫টি ভিডিও ডিলিট করেছে। এই প্ল্যাটফর্মে কী সংখ্যক অশোভন কনটেন্ট আপলোড হয়, এ পরিসংখ্যানই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
সমস্যা কিংবা ঝুঁকি আছে– এটি বলে টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে ডিজিটাল বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ নেই। রোগ সারাতে মাথা না কেটে সামাজিক মাধ্যম, সামগ্রিক অর্থে ইন্টারনেটকে শিশুবান্ধব ও নিরাপদ করতে হবে। শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করে ইন্টারনেটের যে অপার সম্ভাবনা, সেটিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
সাধারণত ফেসবুক-টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর। কিন্তু প্রায় সব সামাজিক মাধ্যমেই বয়স লুকিয়ে যে কেউ এতে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। কেননা, বয়স কিংবা লিঙ্গ যাচাইয়ের কোনো সিস্টেম এতে নেই। টিকটক-ফেসবুকে ন্যূনতম কত বছর বয়স হলে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে, সেটি অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার ঠিক করে দিতে পারে। সেটি যদি ১৩ বছরও হয়, সে নিয়ম যেন মানা হয়, তা মনিটর করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের সহজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সাধারণত তারা যা দেখে কিংবা শোনে, যাচাই-বাছাই ছাড়া সহজেই তা বিশ্বাস করে। ফলে বিশাল এ সামাজিক মাধ্যমনির্ভর ইন্টারনেট-সমুদ্রে সমাজের নানা স্তরের দুর্বৃত্ত ওত পেতে থাকে। এরা নানাভাবে শিশু-কিশোর এমনকি সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কে গভীর জানাশোনা নেই এমন ব্যক্তিদের প্রলুব্ধ করে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি করে থাকে। সহজেই প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে শিকারে পরিণত হয়। অনলাইনে গেমস খেলার মাধ্যমে ডিভাইসসহ শিশুর মানসিক নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা অপরিচিত ব্যক্তি। গেমিংয়ের ছলে শিশুদের পর্নোগ্রাফিতে যুক্ত করারও ভূরি ভূরি নজির রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমসহ ইন্টারনেট সেবা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না; সেটা সমাধানও নয়। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে ইন্টারনেটে বিচরণ যতদূর সম্ভব নিরাপদ করা। এ ক্ষেত্রে নীতিমালাসহ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা জরুরি। অভিভাবক, শিক্ষকসহ সমাজের অংশীজনকে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে। প্রায় সব স্মার্টফোন ও কম্পিউটার ডিভাইসে সুলভ ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ ফিচার চালু করলে শিশু কী দেখছে, কী ডাউনলোড করছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শিশু দিনে ডিভাইসটি কতক্ষণ দেখতে পারবে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানিরও ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ সেবা রয়েছে। তবে এ ধরনের ফিচারের ব্যবহার অভিভাবকদের আগে শেখানো দরকার। এ ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত বাবা-মাকেই হিমশিম খেতে দেখছি। অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বাবা-মায়ের জন্য তো তা দুরূহ! ফলে এটি নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি জরুরি।
সবচেয়ে জরুরি ইন্টারনেট সেবাদাতা (ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট), ইন্টারনেটচালিত ডিভাইস স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ নির্মাতা ও পরিবেশক এবং টিকটক, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমকে শিশুর সুরক্ষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় বাধ্য করা। এসব কোম্পানি এমনিতেই কিন্তু বড় অঙ্কের ভ্যাট-ট্যাক্সে ছাড় পায়। এই ছাড় পেতে হলে করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) বাজেটসহ আয়ের একটা অংশ সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে খরচ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া যেতে পারে। এ কর্মসূচির আওতায় তৈরি হবে শিশু-কিশোরবান্ধব মজার ও শিক্ষণীয় কনটেন্ট। সরকারের আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং টেলিকম নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিটিআরসি এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; বিপথগামী না হয়; খড়কুটোর মতো ভেসে না যায়; সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অবারিত ইন্টারনেট-সমুদ্রে শিশুর সুরক্ষা সবার আগে– এই বাস্তবতা রাষ্ট্র যত দ্রুত বুঝবে ততই মঙ্গল।
হাসান জাকির: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
prantojakir@gmail.com