এনটিআরসিএ’র নিয়োগপ্রত্যাশীদের আন্দোলন স্থগিত
Published: 11th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত প্রথম থেকে ১২তম নিয়োগপ্রত্যাশীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জি এম ইয়াছিন এই ঘোষণা দেন। সচিবালয়ে বৈঠক শেষে শাহবাগে এসে তিনি এই ঘোষণা দেন।
জি এম ইয়াছিন জানান, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যার সমাধানের আশ্বাস পেয়েছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তাই তারা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে আন্দোলনরত নিয়োগপ্রত্যাশীদের আট প্রতিনিধিকে সচিবালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি গাড়িতে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সচিবালয়ে রওনা দেন।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন- আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা আমির আসহাব, প্রধান সমন্বয়ক জি এম ইয়াছিন, সমন্বয়ক আল মুমিন, সমন্বয়ক মো.
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুপারিশপ্রাপ্ত (তৃতীয় ধাপ) শিক্ষকরা এবং ১ থেকে ১২তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
দুপুর ১ টা ৫০ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে আন্দোলনকারীরা ফের জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটের দিকে পরপর বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
পুলিশের লাঠিপেটা আর জলকামান নিক্ষেপের পর ১ থেকে ১২তম এনটিআরসি নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন। তবে ৪টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে সায়েন্সল্যাবগামী সড়ক বন্ধ করে রাখেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
এরপর এদিন বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে মূল সড়ক ছেড়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এতে করে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় পর শাহবাগের চারটি সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এরপর পুনরায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনকারী দুটি গ্রুপ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। পরে রাতে আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারের দিকে চলে যান।
আজ আবারও জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন তারা। তবে এনটিআরসিএ’র নিয়োগপ্রত্যাশীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও প্রাথমিকের আন্দোলনকারীরা জাদুঘর থেকে সরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের উদ্দেশ্যে চলে গেছেন।
বিএইচ
উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে প্রবেশের গ্রেড হবে ১২তম
প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরিতে যোগদানের বর্তমান গ্রেড ১২তম করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান উন্নয়নে গঠিত কনসালটেশন কমিটি। পাশাপাশি শিক্ষকদের পদবিতেও আসবে পরিবর্তন। সেই সঙ্গে স্কুলগুলোর মান অনুযায়ী বিভিন্ন রঙে চিহ্নিত করা হবে।
এ ধরনের এক গুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দিয়েছে কনসালটেশন কমিটি। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিটির সদস্যরা। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং কনসালটেশন কমিটির আহ্বায়ক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ৯ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দেশের ১১টি জেলার ১২টি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্টেকহোল্ডার ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, এখন থেকে শুরুতেই একজন শিক্ষকের বিদ্যমান পদবি সহকারী শিক্ষকের পরিবর্তে হবে ‘শিক্ষক’। তারা ১২তম গ্রেডে যোগদান করবেন। চার বছর পর তিনি সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। তখন তাঁর গ্রেড হবে ১১তম। আর প্রধান শিক্ষকের গ্রেড হবে ১০ম। পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হবেন। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আঞ্চলিক অফিস থাকবে। শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলিরও সুযোগ থাকবে। বর্তমানে কেবল উপজেলার মধ্যেই বদলির বিধান আছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পদ্ধতির পরিবর্তে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্টের আদলে প্রতিটি বিদ্যালয়ের মান নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। মান অনুযায়ী স্কুলগুলো সবুজ, হলুদ ও লাল রঙে রূপান্তরিত করা হবে। মৌলিক দক্ষতা জরিপের মাধ্যমে এটা করতে হবে। প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হবে প্রতিটি স্কুলকে সবুজে পরিণত করা। প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সর্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য স্কুলগুলোতে প্যারা টিচার (শিক্ষা সহায়ক) নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে প্রয়োজন মনে করলে প্যারা টিচার নিয়োগ দিতে পারবে। এ জন্য সরকারের একটি বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি স্কুলে যত দ্রুত সম্ভব মিড ডে মিল চালু করতে হবে। শিশুদের জন্য খাতা, কলম ও ব্যাগ বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে দরিদ্র শিশুরা শিক্ষানুরাগী হয়।
বাংলা ও গণিত বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলা শুধু একটি বিষয় নয়, এটি অন্য সব বিষয়ে প্রবেশের চাবিকাঠি। গণিতে মৌলিক দক্ষতা অর্জিত না হলে, শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত পিছিয়ে থাকবে। এ জন্য প্রতিদিন এ দুটি বিষয়ে ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট শিখন সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির মধ্যেই একটি শিশু যেন সাবলীলভাবে তার মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করা শেখে। এ ছাড়া যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ যেন শিখতে পারে। কমিটির সুপারিশে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুর্নীতি, অসদাচরণ ও কর্তব্যে অবহেলা নিরোধের জন্য একটি হটলাইন স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা যেতে পারে। শিক্ষকদের প্রি সার্ভিস শিক্ষা ও যোগ্যতা অর্জন এবং নিরন্তর পেশাগত উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমদ বলেন, সব মিলিয়ে কমিটি শতাধিক সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আশু, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ আছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে সরকারেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করা যায়, আগামী বাজেটে এ সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটবে।
উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রাথমিক শিক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অন্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা লাগবে। কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন হবে।
আদালতের রায়ে কয়েক হাজার সুপারিশকৃত শিক্ষকের চাকরি না পাওয়ায় চলমান আন্দোলন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য আদালতে আপিল করা হবে।