নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন ‘পদবঞ্চিত’ নেতা–কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত বছরের ২৬ অক্টোবর লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি এই দুই কমিটির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়; কিন্তু এসব কমিটিতে ১৭ বছর ধরে মাঠে থেকে নির্যাতন সহ্য করে দলের জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা স্থান পাননি। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচারী জাতীয় পার্টির সক্রিয় কর্মী ও দোসররা দলে টাকা ও উপঢৌকন দিয়ে পদ পেয়েছেন।

এই পরিস্তিতিতে পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার সিঅ্যান্ডবি চৌরাস্তা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে লোহাগড়া বাজার ও বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে এসে সমবেত হয়। সেখানে কিছু সময়ের জন্য যশোর-কালনা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে যানজট সৃষ্টি হলে সড়কের এক পাশ ছেড়ে দেন তাঁরা।

সমাবেশে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাচ্চু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম শিকদার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ সাইফুল্লাহ মামুন, সদ্য সাবেক জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ইনামুল হক চন্দন, লোহাগড়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন পারভেজ, নড়াইল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাইবুল হাসানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
ছাত্রদল নেতা তাইবুল হাসান বলেন, টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে পৌর ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর পদে বসেই দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন। কমিটিতে অযোগ্য, অদক্ষ ও আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট লোকদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি নেতা সাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর যাঁরা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, তাঁরা কমিটিতে স্থান পাননি। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং মাশরাফিকে ফুল দিয়ে বরণ করা থেকে শুরু করে অবৈধ জাতীয় নির্বাচনে তাঁর পক্ষে প্রচার চালানো সুবিধাবাদী লোকগুলোকে বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে আনা হয়েছে। অনতিবিলম্বে লোহাগড়া পৌর ও উপজেলা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিক্ষোভকারীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.

আহাদুজ্জামান ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান। তাঁদের দাবি, অর্থের বিনিময়ে কোনো কমিটি করা হয়নি। কমিটি হয়েছে সবার মতামত নিয়ে।

পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, নেতা-কর্মীদের মতামতের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক নেতা–কর্মী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নাম দিয়েছিলেন, কিন্তু মাঠের নেতা–কর্মীদের স্থান দিতে তাঁদের সে নামগুলোকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

মশিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম, কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা মনে হলে প্রমাণ সাপেক্ষে আলোচনা ও যুক্তিতর্কের সুযোগ আছে। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেনি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে স্থানীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্র হিসেবে তাঁরা আলোচনায় না বসে রাস্তায় মিছিল করছেন। এটা দল করা নয়, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর বিক্ষোভে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ব এনপ র স ও প র ব এনপ র কম ট ত আওয় ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন, পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিতরা।

কমিটি গঠনে বৈষম্য হয়েছে দাবি করে সোমবার দিনভর ঢাকা-রাজশাহী-রংপুর মহাসড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। 

আন্দোলনে পদবঞ্চিতদের সমন্বয়ক মুন্তাসির মেহেদী হাসান বলেছেন, জেলা কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যমূলক পকেট কমিটি করা হয়েছে। যে কারণে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক প্রতিনিধিরা আন্দোলন করছেন। ইতোমধ্যে ঘোষিত কমিটি থেকে ৫৩ জন পদত্যাগ করেছেন। যার কপি দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানো হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা অনেকেই কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নামে বৈষম্যের বিষয়টি আমরা অবগত করার চেষ্টা করেছি। কেউ তাতে গুরুত্ব না দেওয়ায় মহাসড়ক ব্লকেড করেছেন পদবঞ্চিতরা।

বিষয়টি নাকচ করে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক সজীব সরকার বলেন, আগামী ৬ মাসের জন্য জেলা, ৯টি উপজেলা ও থানার সমন্বয়ে জেলার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে সব উপজেলা, থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় ছাত্রদল ও শিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। সরকার পতনের পর সবাই যার যার সংগঠনে ফিরে গেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দিতে চাইলে অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ নেই। যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই দুই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তারাও কমিটিতে পদ পাননি। পাশাপাশি কিছু ছাত্র প্রতিনিধি বাদ পড়েছেন যারা উপজেলা, থানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক কমিটিগুলোতে স্থান পাবেন।

ব্লকেড প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। এরপর ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবারো অবরোধ শুরু করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে।

প্রসঙ্গত, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত ২৮৪ সদস্য বিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্য সচিব, ইকবাল হোসেন রিপনকে মুখ্য সংগঠক ও টি এম মুশফিক সাদকে মুখপাত্র করা হয়। এরপর থেকে এ কমিটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন, পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ