লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 11th, February 2025 GMT
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন ‘পদবঞ্চিত’ নেতা–কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত বছরের ২৬ অক্টোবর লোহাগড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন হয়েছিল। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি এই দুই কমিটির ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়; কিন্তু এসব কমিটিতে ১৭ বছর ধরে মাঠে থেকে নির্যাতন সহ্য করে দলের জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা স্থান পাননি। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচারী জাতীয় পার্টির সক্রিয় কর্মী ও দোসররা দলে টাকা ও উপঢৌকন দিয়ে পদ পেয়েছেন।
এই পরিস্তিতিতে পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার সিঅ্যান্ডবি চৌরাস্তা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে লোহাগড়া বাজার ও বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে এসে সমবেত হয়। সেখানে কিছু সময়ের জন্য যশোর-কালনা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখেন তাঁরা। পরে যানজট সৃষ্টি হলে সড়কের এক পাশ ছেড়ে দেন তাঁরা।
সমাবেশে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাচ্চু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম শিকদার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ সাইফুল্লাহ মামুন, সদ্য সাবেক জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব ইনামুল হক চন্দন, লোহাগড়া উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন পারভেজ, নড়াইল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাইবুল হাসানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
ছাত্রদল নেতা তাইবুল হাসান বলেন, টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে পৌর ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর পদে বসেই দুটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছেন। কমিটিতে অযোগ্য, অদক্ষ ও আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট লোকদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা সাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর যাঁরা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, তাঁরা কমিটিতে স্থান পাননি। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন এবং মাশরাফিকে ফুল দিয়ে বরণ করা থেকে শুরু করে অবৈধ জাতীয় নির্বাচনে তাঁর পক্ষে প্রচার চালানো সুবিধাবাদী লোকগুলোকে বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে আনা হয়েছে। অনতিবিলম্বে লোহাগড়া পৌর ও উপজেলা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিক্ষোভকারীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.
পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, নেতা-কর্মীদের মতামতের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক নেতা–কর্মী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নাম দিয়েছিলেন, কিন্তু মাঠের নেতা–কর্মীদের স্থান দিতে তাঁদের সে নামগুলোকে কমিটিতে রাখা হয়নি।
মশিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার পর আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম, কমিটি নিয়ে কোনো সমস্যা মনে হলে প্রমাণ সাপেক্ষে আলোচনা ও যুক্তিতর্কের সুযোগ আছে। কিন্তু তাঁরা কেউ আসেনি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে স্থানীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্র হিসেবে তাঁরা আলোচনায় না বসে রাস্তায় মিছিল করছেন। এটা দল করা নয়, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। আর বিক্ষোভে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা বিএনপির কমিটি করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ব এনপ র স ও প র ব এনপ র কম ট ত আওয় ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়া বিএনপিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে আবার বিক্ষোভের ঘোষণা পদবঞ্চিতের
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা আগামী বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তখন তিন মাসের জন্য ওই কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমান কমিটি দ্রুত বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন পদবঞ্চিত ব্যক্তিরা।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘বর্তমান কুতুব-জাকির কমিটিকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি বললে ভুল হবে না। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর চলতে পারে না, পারে না, পারে না। কুষ্টিয়া বিএনপির রাজনীতিকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। ভঙ্গুর কমিটি বাতিল করতে হবে।’ তিনি ‘বিতর্কিত’ কমিটি ভেঙে যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাদের নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করেন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কমিটি করা হয়েছে। বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্চ কমিটি গঠনসহ যত কমিটি গঠন করেছে, সব কমিটিতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের নেওয়া হয়েছে। এসব তাদের নিজেদের ‘পকেট কমিটি’।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কমিটি ব্যর্থ কমিটি। এই কমিটির দ্বারা কুষ্টিয়া বিএনপির এক বিন্দু সাংগঠনিক কিছু হয়নি। বরং কুষ্টিয়ায় চারটি আসনে যে শক্ত অবস্থান ছিল তা ভেঙে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে চারটি আসনই হারাতে হবে।’
জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমান বলেন, কমিটি বাতিলের দাবিতে বারবার আন্দোলন করা হচ্ছে। অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জানানো হচ্ছে।
দাবি আদায়ে আগামী বুধবার বেলা ১১টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম (চাঁদ)। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রঘোষিত এক অনুষ্ঠান কুষ্টিয়ায় হয়। সেই অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে সবাই এক কাতারে ছিলাম। বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের পর পদবঞ্চিতদের পদ দেওয়া হবে। কিন্তু আর যোগাযোগ করা হচ্ছে না।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তার আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি বাতিল করা হয়। এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না। কমিটি বাতিলের দাবিতে গত ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একই দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ছাড়া ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।