মাটি ভরাটের জন্য পুকুর কেটেছিলেন, সেখান থেকেই মেয়ের লাশ তুললেন বাবা
Published: 11th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের মধ্যম জালিয়াকাটা এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ কিছুদিন আগে নতুন বসতভিটা তৈরি করেছেন। ভিটা ভরাটের জন্য পাশে একটি পুকুর কাটেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সবাই যখন ভাত খেতে ঘরে ঢোকেন, তখন তাঁর সাত বছর বয়সী শিশুকন্যা মিফতাহুল জান্নাত পুকুরটিতে পড়ে যায়। সাঁতার না জানায় সে আর উঠতে পারেনি।
ভাত খেতে বসে সবাই মিফতাহুলকে খোঁজ করে না পেয়ে এদিক-সেদিক খুঁজতে থাকে। পরে তার বাবা আবু হানিফ নিজে পুকুরে নেমে মেয়ের মরদেহ তুলে আনেন। এ ঘটনায় আবু হানিফসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা শোকে ভাসছেন।
নিহত মিফতাহুল স্থানীয় বারবাকিয়া এমএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মিফতাহুলের চাচা শওকত হোসেন বলেন, আবু হানিফ ভাত খাওয়ার পর মিফতাহুলকে না দেখে এদিক-সেদিক খুঁজতে থাকেন। কোথাও না পেয়ে তাঁর সন্দেহ হয়, মেয়ে পুকুরে পড়েছে। তখন তিনি পাশের পুকুরে নেমে পড়েন। একপর্যায়ে হানিফের পা মিফতাহুলের গায়ে ঠেকে। তখনই চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন হানিফ। পরে মরদেহটি কুড়িয়ে কূলে তুলে আনেন তিনি।
স্থানীয় বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচ এম বদিউল আলম বলেন, মাগরিবের নামাজের পর মিফতাহুলকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন শোকাহত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্বার্থে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য যুগপৎভাবে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ সামনে এনেছে। তাই জটিলতা আছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নাগরিক সমাজের সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে। আর সংলাপ শুধু আলোচনার স্বার্থে নয়। নিজেদের মধ্যে সংলাপ হতে হবে কার্যকর পদক্ষেপের জন্য।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ নিয়ে এ প্রত্যাশার কথা বলেছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা খোলাখুলিভাবে বাংলাদেশের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় ঢাকায় জাতিসংঘের দপ্তরের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সম্ভাবনা এবং উদ্বেগ নিয়ে তাঁরা কথা বলেছেন। অপতথ্য আর বিভ্রান্তিকর তথ্যের দৌরাত্ম্য কীভাবে বাংলাদেশের জন্য বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ছুড়ে দিয়েছে, সে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাই-আগস্টে রক্ত দেওয়ার পরও শ্রমিকদের অধিকারের জন্য প্রাণ দিতে হচ্ছে।
আলোচনায় এ বিষয়ও এসেছে যে দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের ফলে কাঠামোগত পরিবর্তন হলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বাংলাদেশের জনগণের এসব অংশের লোকজনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
আন্তোনিও গুতেরেস আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল। তবে ব্যবসা, বিনিয়োগের জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। তবু বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে তাঁর আরও জানা প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতি যে জটিল, তিনি এবার বাংলাদেশ সফরে এসে মতবিনিময়ের পর বুঝেছেন। তাই তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
আলোচনায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের মধ্যে সংখ্যাগুরু মুসলমান। কিন্তু এর মধ্যে সংখ্যায় অল্প হলেও বৌদ্ধ এবং হিন্দু রোহিঙ্গাও রয়েছে, যারা মিয়ানমার ত্যাগ করেছে। তাদের মানবাধিকারের বিষয়ও যেন বিবেচনায় নেওয়া হয়।
একজন আলোচক বলেন, এখন সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলোতে যথাযথভাবে বহুমাত্রিক দৃষ্টির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তাই আদিবাসী ও অনেক সংখ্যালঘু নাগরিকদের ভয় হচ্ছে যে অদূর ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় সংবিধানে আবারও এক ভাষার, এক সংস্কৃতির এবং এক ধর্মের ভাবধারা প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাসরিন হক, তাসনীম সিদ্দিকী, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়, শহিদুল আলম, কল্পনা আক্তার, আয়েশা কবীর, কল্পনা আক্তার প্রমুখ।