পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশিসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি
Published: 11th, February 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর আন্দোলনে ‘সক্রিয়’ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আউয়ালের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা তাঁদের দেখামাত্র মারধরসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি নাগরিকসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সভাকক্ষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ দাবি জানান। মতবিনিময় সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভূঁইয়া লিখিত বক্তব্য দেন। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শাহ আবদুল মওলা, নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মূসা মতিউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আবদুল হাসিব, নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) জার্জিস তালুকদার, সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মনি জিকো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী কয়েক মাস ধরে আট দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। ওই আন্দোলনে ‘সক্রিয়’ ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিষয়ক সহসম্পাদক ও উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল আউয়াল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নিখোঁজ হন। কলাপাড়া থানা–পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেলটি কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কের রজপাড়া মাদ্রাসা–সংলগ্ন সড়ক থেকে পার্ক করা অবস্থায় উদ্ধার করে। কিছুটা দূরে তাঁর হেলমেটও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করে তাঁর পরিবার। পরে রোববার সকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার আশরাফাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।
আজকের সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, গ্রামবাসীর আন্দোলন ও ছাত্রনেতা রবিউল আউয়ালের নিখোঁজের জেরে তাঁদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। নানা হুমকি, মামলা-মোকদ্দমা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা ৩১৭ জন বিদেশিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিরাপদবোধ করছেন।
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম। ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্থানীয় সুবিধাবাদী একটি চক্র বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয়দানকারী রবিউল আউয়াল। এমনকি আন্দোলনকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখামাত্র মারধরসহ গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিনষ্ট হচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-২–এর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ও চলমান ফেজ-২–এর কার্যক্রম বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সর্ববৃহৎ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে ছাত্রনেতা রবিউল আউয়ালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। রবিউলের বড় ভাই তুষার আল মামুন বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় তাঁর ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তাঁকে বরিশালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রবিউল এলাকাবাসীর স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাঁকে প্রলোভন দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু রবিউল প্রলোভনে পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, ঘটনার পেছনে কিন্তু ঘটনা আছে। অপশক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের মতো সাধারণ মানুষের টিকে থাকা মুশকিল। রবিউলকে অপহরণ করা হয়েছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন কে বা কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল, সে রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান তিনি।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এটি প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত এলাকা। এপিবিএনের ৬০ জন ও পুলিশের ৩০ জন সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর একটি দল আছে। এরপরও কলাপাড়া থানা–পুলিশ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করার কিছুই নেই।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশিসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর আন্দোলনে ‘সক্রিয়’ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল আউয়ালের রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা তাঁদের দেখামাত্র মারধরসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত বিদেশি নাগরিকসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সভাকক্ষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ দাবি জানান। মতবিনিময় সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভূঁইয়া লিখিত বক্তব্য দেন। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শাহ আবদুল মওলা, নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মূসা মতিউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আবদুল হাসিব, নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) জার্জিস তালুকদার, সহকারী ব্যবস্থাপক (তদন্ত) শাহ মনি জিকো প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী কয়েক মাস ধরে আট দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। ওই আন্দোলনে ‘সক্রিয়’ ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিষয়ক সহসম্পাদক ও উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল আউয়াল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নিখোঁজ হন। কলাপাড়া থানা–পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেলটি কলাপাড়া-পটুয়াখালী সড়কের রজপাড়া মাদ্রাসা–সংলগ্ন সড়ক থেকে পার্ক করা অবস্থায় উদ্ধার করে। কিছুটা দূরে তাঁর হেলমেটও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয় কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করে তাঁর পরিবার। পরে রোববার সকালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকার আশরাফাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।
আজকের সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, গ্রামবাসীর আন্দোলন ও ছাত্রনেতা রবিউল আউয়ালের নিখোঁজের জেরে তাঁদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। নানা হুমকি, মামলা-মোকদ্দমা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা ৩১৭ জন বিদেশিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিরাপদবোধ করছেন।
শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের দৈনিক বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম। ৫ আগস্ট–পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্থানীয় সুবিধাবাদী একটি চক্র বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয়দানকারী রবিউল আউয়াল। এমনকি আন্দোলনকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখামাত্র মারধরসহ গাড়ি ভাঙচুরের হুমকি দিয়েছেন। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিনষ্ট হচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-২–এর রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ও চলমান ফেজ-২–এর কার্যক্রম বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সর্ববৃহৎ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে ছাত্রনেতা রবিউল আউয়ালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। রবিউলের বড় ভাই তুষার আল মামুন বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় তাঁর ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে তাঁকে বরিশালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রবিউল এলাকাবাসীর স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাঁকে প্রলোভন দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু রবিউল প্রলোভনে পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, ঘটনার পেছনে কিন্তু ঘটনা আছে। অপশক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের মতো সাধারণ মানুষের টিকে থাকা মুশকিল। রবিউলকে অপহরণ করা হয়েছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন কে বা কারা তাঁকে অপহরণ করেছিল, সে রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান তিনি।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এটি প্রথম শ্রেণির কেপিআইভুক্ত এলাকা। এপিবিএনের ৬০ জন ও পুলিশের ৩০ জন সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর একটি দল আছে। এরপরও কলাপাড়া থানা–পুলিশ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা করার কিছুই নেই।