জাতীয় ফুটবল দলের আনুষ্ঠানিকভাবে কিট স্পন্সর ছিল না কখনই। অবশেষে বাংলাদেশের ফুটবলে যুক্ত হলে কিট স্পন্সর। দুই বছরের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘দৌড়’-এর সঙ্গে মঙ্গলবার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী সিনিয়র–জুনিয়র জাতীয় দলের জন্য প্রথমবার কিট স্পন্সর হিসেবে দেখা যাবে দৌড়কে। ব্যাগ এবং জুতা ছাড়া জার্সি, ট্রাউজার থেকে শুরু করে বাকি সবগুলোই বাফুফেকে দেবে দৌড়। বুট এবং ব্যাগ ক্রয়ের অর্থও দেবে প্রতিষ্ঠানটি।
ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী দৌড়ের লোগো থাকবে ফুটবলারদের জার্সির মধ্যে। মঙ্গলবার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ও ফেডারেশনের সহ সভাপতি ফাহাদ করিম এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান দৌড়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আবিদ আলম চৌধুরী।
দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে ফুটবল ফেডারেশনে যুক্ত করতে পারায় তৃপ্ত সভাপতি তাবিথ, ‘আমরা জার্সির ক্ষেত্রে আবহাওয়া, সেলাই, ধৌত সকল কিছু বিবেচনা করেই কিট স্পন্সর প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করেছি। আমরা চাই বাংলাদেশের নাম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। আমরা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডের জার্সি পরে খেলি এটা অন্য দেশ ও ক্লাবগুলোকেও জানাব।’
বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি সামনে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে বাফুফে সভাপতির, ‘আমরা সামনে জার্সি কমার্শিয়ালি বিক্রি করবো। সেটা অনলাইন বা রিটেইল (খুচরা) উভয়ভাবে। এই বিষয়ে আরও কাজ করে বিস্তারিত বলতে পারবো।’
নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করে বাফুফে। তার একটি হলো মার্কেটিং বিভাগ। এই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দেশের ফুটবলে নতুনত্ব আনার চেষ্টা শুরু করেন ফাহাদ করিম। তারই ধারাবাহিকতায় কিট স্পন্সর হিসেবে ‘দৌড়’-এর মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছেন তিনি।
এই জন্য সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে ধন্যবাদ জানান ফাহাদ করিম। বাংলাদেশের অনেক কোম্পানিকে বিবেচনা না করে দৌড়ের মতো নতুনকে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে ফাহাদ করিম বলেন, ‘আমরা তাদের সক্ষমতা, আগ্রহ, যোগ্যতা সকল কিছুই যাচাইবাছাই করেছি। আমরা কোয়ালিটির সঙ্গে কোনো আপোষ করিনি। গত দুই মাস নারী দল ও একটি ক্লাব এই জার্সি পড়ে ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। দুই বছরের চুক্তি থাকলেও এক বছর পর পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরের বছরের সিদ্ধান্ত হবে।’
২৬ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচে দৌড়ের জার্সি পরে প্রথমবার মাঠে নামবে জাতীয় নারী ফুটবল দল। এরপর ভারতের বিপক্ষে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নামবেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা। এই জার্সি গায়ে উঠবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর মতো তারকার। তখন এই জার্সির মূল্যও অনেক বেড়ে যাবে।
‘জার্সি যখন কমার্শিয়ালি বিক্রি হবে সেটা অবশ্যই বাফুফের সাথে লভ্যাংশ ভাগাভাগি হবে’–বলেন ফাহাদ করিম। চুক্তি হওয়ার পর বাফুফে ফিফা-এএফসির অনুমোদনের জন্য আবেদন করবে। সেই অনুমোদন পেলে জার্সির এক পাশে আট ইঞ্চির মতো জায়গায় দৌড়ের লোগো বসবে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে ঢাকা ব্যাংক।
অনুশীলনে বাংলাদেশ নারী দল ঢাকা ব্যাংকের লোগো ব্যবহার করে। এর পাশাপাশি দৌড়ের লোগো ব্যবহারে সমস্যা হবে না বলে জানান ফাহাদ, ‘দৌড় জার্সি প্রভাইড করবে। এর ফলে এক অংশে তাদের লোগো স্থাপিত হবে এর বাইরে আমরা অন্য স্পন্সর ব্যবহার করতে অসুবিধা নেই।’
২০২০ সালে কোভিডের সময় স্পোর্টস ভিত্তিক ব্র্যান্ড দৌড়ের যাত্রা শুরু। মাত্র চার বছরের মধ্যেই বাফুফের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে দৌড়-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আবিদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আমরা আপোষহীন। আমরা আকর্ষণীয় ডিজাইনে জার্সি করব। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী এক ডিজাইনার এ নিয়ে কাজ করছেন। জার্সিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্য থাকবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল ফ হ দ কর ম ফ টবল দল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
বিলুপ্তপ্রায় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় সুস্বাদু দেশীয় গোটালি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল বিজ্ঞানী।
মিঠাপানির জলাশয় বিশেষ করে পাহাড়ী ঝর্ণা ও অগভীর স্বচ্ছ নদী এদের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, আত্রাই ছাড়াও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী, কংস, সিলেটের পিয়াইন, পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে এক সময় মাছটির প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। এখন মাছটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
মাছটির কৃত্রিম প্রজনন এবং পোনা তৈরির কলাকৌশল উদ্ভাবনের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিএফআরআইয়ের পাবলিকেশন অফিসার এসএম শরীফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ২৬১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছের মধ্যে গোটালি (বৈজ্ঞানিক নাম Crossochelius latius) একটি গুরুত্বপূর্ণ সুস্বাদু ছোট মাছ। মাছটি অঞ্চলভেদে কালাবাটা নামেও পরিচিত।”
তিনি আরও বলেন, “জলাশয় দূষণ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীতে বান ও কারেন্ট জালের ব্যবহার, খরা মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা, বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়াসহ নানা কারণে অন্যান্য দেশীয় ছোট মাছের ন্যায় এ মাছের প্রাপ্যতাও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য মতে, ২০১৫ সালে মাছটি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রজাতিটি বিপন্নের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা ২০২৩ সালে তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে মাছটি সংগ্রহ করেন। এরপর উপকেন্দ্রের গবেষণা পুকুরে অভ্যস্তকরণ ও কৃত্রিম প্রজননের জন্য গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশে প্রথমবারের মত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়।
এ গবেষণায় নেতৃত্বে দেন বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আজহার আলী। এছাড়াও গবেষক দলে ছিলেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. সোনিয়া শারমীন, মালিহা হোসেন মৌ ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শ্রীবাস কুমার সাহা।
এসএম শরীফুল ইসলাম বলেন, “বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এ মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় মাছটি চাষের আওতায় চলে আসবে। এতে উত্তর জনপদে তথা দেশের মৎস্য খাতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে এবং মাছটি বিলুপ্তির হাত থেকেও রক্ষা পাবে।”
ঢাকা/মেহেদী