পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নতুন সভাপতি আব্দুল গণি, সম্পাদক আবুল হোসেন
Published: 11th, February 2025 GMT
১৮ বছর পর পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে আব্দুল গণি বসুনিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আবুল হোসেন মো. তোবারক নির্বাচিত হয়েছেন। আব্দুল গণি বসুনিয়া এর আগের কমিটির সদস্যসচিব এবং আবুল হোসেন মো. তোবারক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
গতকাল সোমবার রাতে দেবীগঞ্জ অলদিনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোটাভুটি শেষে কমিটির নাম ঘোষণা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন।
সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদে আইয়ুব আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে তৌকির আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হারুন অর রশীদ ও নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। ছয় সদস্যের এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ডেলিগেট, কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এতে ৬৭৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য পদগুলোতে আলোচনা সাপেক্ষে নেতা নির্বাচন করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের দেবদারুতলায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া অতিথিরা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। পরে সম্মেলন উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আব্দুল গণি বসুনিয়ার সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেশনের সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরহাদ হোসেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম উদ্বোধক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০০৬ সালে দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে আবু তোরাব সরকার সভাপতি এবং হাসমত আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই কমিটি নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধও ছিল। এরপর ২০১৯ সালে আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে আবু তোরাব সরকার আহ্বায়ক এবং আব্দুল গণি বসুনিয়াকে সদস্যসচিব করা হয়। প্রায় তিন বছর আগে আহ্বায়ক আবু তোরাব সরকার মারা যান। এর পর থেকে রহিমুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে আইয়ুব আলী ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব ল ইসল ম ব এনপ র সরক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাপথে অসুস্থ সাইদুলকে ঘরে রেখেই তাঁর দল ছোটে আসরে
অনেক সাধনার পর শেষ বয়সে বাদশাহর একটি ছেলে হয়। কিন্তু জন্মের পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে সেই ছেলে। জ্যোতিষীর কথা অনুযায়ী ছেলেকে বাঁচাতে জন্মের আড়াই দিনের মাথায় রাজদরবারে ‘অদেখা জিনিস দেখানো’র খেলার আয়োজন করেন বাদশাহ। সেখানে সুতার তৈরি ময়ূর নিয়ে খেলা দেখাতে আসেন জরিনা সুন্দরী। রাজার ছেলেকে নিয়ে উড়তে উড়তে দৃষ্টির বাইরে চলে যায় সুতার ময়ূর। সাত সমুদ্র পার হয়ে এক মালিনীর ফুলবাগানে গিয়ে পড়ে সুতার ময়ূর। সেখানেই বড় হতে থাকে রাজকুমার তোতা।
বাদ্যের তালে, নাচ আর গানে মঞ্চে গল্প চলতে থাকে। নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে ‘লোকনাট্য সমারোহ’ উৎসবে এটা ছিল সাইদুলের দলের পরিবেশনা। শুনতে এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এর মধ্যে কেউ কেউ আগে দেখলেও বেশির ভাগ দর্শকই প্রথমবারের মতো সাইদুলের কিচ্ছা দেখলেন।
গত সোমবার শুরু হয়েছে এই লোকনাট্য সমারোহ উৎসব। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমি মুক্তমঞ্চে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তিন দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উন্নয়ন বিভাগ নওগাঁর উপপরিচালক টি এম এ মোমিন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান।
নওগাঁ সদর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম উত্তর অঞ্চলের কিচ্ছা-কাহিনির কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত। রাতের পর রাত বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি বলে মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। সাইদুল ইসলাম দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। বর্তমানে তাঁর পথ ধরে বিয়ের গীত ও কিচ্ছা-কাহিনি পরিবেশন করে চলেছেন তাঁর শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। লোকনাট্য সমারোহ উৎসবে সোমবার রাতে ‘সুতার ময়ূর’ ও ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’ পালা পরিবেশন করেন মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিয়ের গীত পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন সাইদুলের আরেক শিষ্য বাবুল হোসেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মঞ্চে হাজির হয়ে সাইদুলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, এ অনুষ্ঠানে সাইদুলেরই আসার কথা ছিল। অনুষ্ঠানে আসার জন্য তিনি ইজিবাইকে উঠেছিলেনও। কিন্তু ইজিবাইকে ওঠার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাঁকে বাসায় রেখেই তাঁর দল এখানে কিচ্ছা পালা পরিবেশন করতে এসেছে। লোকশিল্পী সাইদুলের জন্য তিনি উপস্থিত সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, সাইদুলের কিচ্ছা পালা পরিবেশন করবেন তাঁর দুই শিষ্য মোস্তফা কামাল ও মাহতাব সরকার।
বন্দনাসংগীত শেষে মুখে ভারী মেকআপ, গায়ে রঙিন কুর্তি, গলায় ও হাতে জরির সুতা আর কোমরে ওড়না বেঁধে মঞ্চে আসেন সাইদুলের শিষ্য মোস্তফা কামাল।
হারমোনিয়াম বাজিয়ে টানা দেড় ঘণ্টা নেচেগেয়ে ‘সুতার ময়ূর’ কিচ্ছা শোনান মোস্তফা। রাত সাড়ে আটটার দিকে ওঠেন সাইদুলের আরেক শিষ্য মাহতাব সরকার। তিনি পরিবেশন করেন ‘দানবের কন্যা বেলবতী কিচ্ছা’। সেই কিচ্ছা পালায় উঠে আসে দানবের কন্যা মানুষের রূপ ধারণ করে কীভাবে মানুষের সমাজে মিশে যায়। বিয়ে করে রাজকুমারকে। সবার শেষে বিয়ের গীত গেয়ে শোনান লোকশিল্পী বাবুল হোসেন।
সাইদুলের কিচ্ছা দেখতে এসেছিলেন নাট্যশিল্পী মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ বলেন, ‘একটা সময় আলকাপের গান, সাইদুলের কিচ্ছা, পালাগান, বিয়ের গীতসহ লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার ব্যাপক চর্চা ছিল এ অঞ্চলে। চর্চা না থাকায় ধীরে ধীরে লোকসংস্কৃতির অনেক ধারাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে লোকসংস্কৃতির অনন্য এক ধারা তৈরি করেছেন লোকশিল্পী সাইদুল ইসলাম। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মনে করেছিলাম সাইদুলের কিচ্ছা পালা হয়তোবা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর শিষ্যদের কিচ্ছা পরিবেশন দেখে আমি আশাবাদী। এঁদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে সাইদুলের কিচ্ছা পালা বেঁচে থাকবে।’
আয়োজন সম্পর্কে নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তাইফুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ‘বহুভাষিক উৎসব ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলায় তিন দিনব্যাপী লোকনাট্য সমারোহ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিন গতকাল সোমবার সাইদুলের বিয়ের গীত ও সাইদুলের কিচ্ছা–কাহিনি পরিবেশন করেছে লোকশিল্পী সাইদুলের দল। উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার পালাগান পরিবেশন করেন লোকশিল্পী বিলকিস বানু ও বিল্লালের পালাগানের দল। শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপের গান পরিবেশন করবেন মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল।
আজ বুধবার শেষ দিন লোকশিল্পের আরেক ধারা আলকাপ গান পরিবেশন করবে মহামায়া পঞ্চরস নাট্যদল। সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।