সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে পোষ্য কোটা বাতিল করেছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এখনো বহাল রয়েছে।

ন্যূনতম পাস নম্বর পেলেই প্রতি বছর চরম বৈষম্যমূলকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন পোষ্য কোটাধারীরা। অতীতে ন্যূনতম পাস নম্বর না পেয়েও ভর্তি হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। ফলে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অযোগ্যতার ভারে পরবর্তীতে একাডেমিক ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এতে সেশনজটের মতো নানা একাডেমিক বিপত্তি সৃষ্টি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেশনজট নিরসনে মানবিক দিক বিবেচনায় এসব কোটাধারীদের পাস করিয়ে দেন শিক্ষকরা।

এজন্য গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির (জিএসটি) কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এ কোটা বাতিল না করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়।এছাড়া ইবির ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়। ফলে অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও ২৪ ও ৩০ নম্বর পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন পোষ্য। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিচ্ছে ইবি প্রশাসন।

এমনকি ন্যূনতম পাস মার্ক না থাকলে ভর্তি কমিটির সভা করিয়ে নম্বর আরো কমিয়ে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভর্তি কমিটির মিটিং বসিয়ে জোরপূর্বক শর্ত শিথিল করা ও পাস না করেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগ করেছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। 

শর্ত শিথিলের জন্য বিগত প্রশাসনের আমলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.

শেখ আবদুস সালাম বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করেন। এর বিপরীতে তখন পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। তবে তৎকালীন প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেয়নি। এছাড়া শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও শর্ত শিথিলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। 

২০২৩-২৪ বর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করে চরম বৈষম্যমূলক চিত্র দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা ও আইসিটি সেলের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ সায়েন্স বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ছিল ১৮ হাজার ৭৫২তম (গুচ্ছ পরীক্ষার পজিশন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

অন্যদিকে, একই বিভাগ থেকে ৪৮ হাজার ৫৯৮তম পজিশনে থেকেও পোষ্য কোটায় প্রথম সারির ‘আইসিটি’তে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে সর্বশেষ ৬ হাজার ১৩তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী ২৬ হাজার ৮১২তম পজিশন নিয়েও পোষ্য কোটায় আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়া বাণিজ্য বিভাগ থেকেও সর্বশেষ ৫ হাজার ৬৬তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ১৯ হাজার ৩০০তম পজিশন নিয়েও পোষ্য কোটায় হিউম্যাস রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এমনকি অন্য সব কোটার তুলনায়ও সর্বনিম্ন মার্ক নিয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার কারণে একাডেমিক কার্যক্রমে বেগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের সভাপতি।

তারা জানান, কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গুটিকয়েক একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলেও অনেকের একাডেমিক পথচলা ভালো হয় না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। কেউ কেউ রিটেক পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেন না। পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষকরা তাদের পাস করিয়ে দেন।

দীর্ঘদিন ধরে পোষ্য কোটাকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “এ পদ্ধতি ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি। ২৪ ও ৩০ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা অনতিবিলম্বে এ কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “জিএসটি কেন্দ্রীয়ভাবে পোষ্য কোটা রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেদিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। যদি পোষ্য কোটা বাতিল না করা হয়, তাহলে সেদিন থেকেই আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। এমন বৈষম্যমূলক নীতিকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

শিক্ষকদের অবস্থানের বিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় সভা পোষ্য কোটা না রাখার বিষয়ে সুপারিশ ও প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি জিএসটি না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও বাতিল করে দেব।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন য নতম প স এক ড ম ক হয় ছ ন পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশাখের আনন্দ তিনগুণ বেড়ে গেছে, কেন বললেন বুবলী

ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এম রাহিমের সিনেমা ‘জংলি’। রোববার রাতে রাজধানীর একটি মাল্টিপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয় সিনেমাটির বিশেষ প্রদর্শনী। বিশেষ প্রদর্শনী শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ‘জংলি’র অভিনেত্রী শবনম বুবলী।

বুবলী বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) পয়লা বৈশাখ, সবাইকে শুভ নববর্ষ। পয়লা বৈশাখের আনন্দ আরও দ্বিগুণ-তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে আজকের এই আয়োজন।’

‘জংলি’ সিনেমায় তিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বুবলী। দর্শক নন-গ্ল্যামারস লুকে বুবলীকে পছন্দই করেছেন। পুরোমাত্রার বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি অফট্র্যাক চরিত্র তিনি ভালো সামলাতে পারেন, সে প্রমাণ ‘টান’ বা ‘দেয়ালের দেশ’-এ পাওয়া গেছে। ‘জংলি’র ইন্টার্ন চিকিৎসকের চরিত্রটিও তেমনই।

‘জংলি’ এখন আবেগের নাম উল্লেখ করে বুবলী আরও বলেন, ‘সিনেমার বড় প্রচারটা হয় দর্শকের মুখ থেকে। অন্যদের বলছে, সে কারণে শো দ্বিগুণ হচ্ছে। এটিকে পারিবারিক সিনেমা, কমেডি সিনেমা, পাশাপাশি মিউজিক্যাল সিনেমা বলা যায়। সিনেমাটি দর্শক দেখবে, আমাদের এমন বিশ্বাস ছিল। সবার ভালোবাসা দেখে আমরা অভিভূত।’

এর আগে বুবলী বলেন, ছোট ছোট বাচ্চারা থেকে আশি বছরের দর্শক ‘জংলি’ দেখছে। বিশেষ করে বলতে হয় আমাদের সিনিয়র সিটিজেন হলে ফিরেছেন। তারা পরিবার নিয়ে আসছেন সিনেমা দেখতে। এটা খুবই ইতিবাচক। পরবর্তী কাজের জন্য আবার খুব চ্যালেঞ্জ। আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি গল্পই আলাদা মানুষকে কাঁদানো-হাসানো কঠিন কাজ। সেখানে বাংলা সিনেমা জংলি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন দর্শক। তারা হাসছেন, কাঁদছেন। পরবর্তী সিনেমা করতে দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

‘জংলি’র প্রধান চরিত্রে আছেন সিয়াম আহমেদ। সিয়াম, বুবলী ছাড়াও এ ছবিতে দেখা গেছে নৈঋতা হাসিন রৌদ্রময়ী, দীঘি, দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপুকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার আশঙ্কার কথা জানাল ফেডারেল রিজার্ভ সান ফ্রান্সিসকো
  • বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প কি সত্য বলছেন, তাঁর চিন্তা কি পশ্চাৎপদ
  • দাবি আদায়ে অনড় কুয়েট শিক্ষার্থীরা, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা
  • আমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে
  • ইকুয়েডরে আবার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রক্ষণশীল দলের নোবোয়া
  • বৈশাখের আনন্দ তিনগুণ বেড়ে গেছে, কেন বললেন বুবলী
  • গ্রামে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
  • গাজা সিটির একমাত্র সচল হাসপাতালে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • গাজায় এ পর্যন্ত ৩৫টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইন্টারনেটের ব্যবহার কম উৎপাদনশীল খাতে