মিটারে না চললে অটোরিকশাচালকের জরিমানা হতে পারে ৫০ হাজার টাকা
Published: 11th, February 2025 GMT
সিএনজি বা পেট্রলচালিত অটোরিকশার চালক মিটারের বেশি ভাড়া আদায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সড়ক পরিবহন আইনে ভাড়াসংক্রান্ত অপরাধে চালকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সই করা এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গ্যাস বা পেট্রলচালিত ফোর-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা রুজু করার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আরও বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ধারা ৩৫(৩) অনুযায়ী কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন এবং মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় হলে আইনের ধারা ৮১ অনুযায়ী অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে।
বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক জমা নির্ধারিত আছে ৯০০ টাকা। তবে চালকেরা বলছেন, মালিকেরা দিনে দুই বেলায় চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী প্রায় ২৮ হাজার অটোরিকশার জন্য পৃথক নীতিমালা রয়েছে। এসব অটোরিকশাকে কন্ট্রাক্ট ক্যারিজ বা ভাড়ায় চালিত যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নীতিমালা অনুসারে, সিএনজি ও পেট্রলচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও মালিকের দৈনিক জমা নির্ধারিত রয়েছে।
বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক জমা নির্ধারিত আছে ৯০০ টাকা। তবে চালকেরা বলছেন, মালিকেরা দিনে দুই বেলায় চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।
অটোরিকশার বর্তমান সর্বনিম্ন (প্রথম দুই কিলোমিটার) ভাড়া ৪০ টাকা; অর্থাৎ একজন যাত্রী চাইলে ৪০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করার সুযোগ পাবেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ১৫০ টাকার নিচে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করা যায় না। দুই কিলোমিটারের পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তা কেউ মানেন না।
২০০৩ সালের দিকে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে বেবিট্যাক্সি তুলে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালু করে তৎকালীন চার–দলীয় জোট সরকার। মিটারে নির্ধারিত ভাড়া ও যাত্রীদের চাহিদামতো গন্তব্যে চলাচল করতে বাধ্য থাকবে, এই ছিল মূল শর্ত। কিন্তু নগরবাসী বলছেন, কখনোই শর্তগুলো মানা হয়নি। ভাড়া নির্ধারিত হয় চালকের ইচ্ছেমতো। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই চালকেরা অনীহা দেখান।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার নীতিমালা অনুসারে, মালিকেরা অটোরিকশা কিনে চালকদের চালাতে দেবেন। বিনিময়ে সরকার নির্ধারিত হারে দৈনিক জমা পাবেন তাঁরা। আর চালকেরা মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অপহৃত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে গোপন স্থানে ডেকেছে অপহরণকারীরা
খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা।
অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের রিশন চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ অপহৃতদের বাবা-মায়ের বরাতে বিষয়টি জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ
চবির সমাবর্তনে ড. ইউনূসকে ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে
চবি প্রক্টর রাইজিংবিডিকে বলেন, “চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থীর চারজনের বাবা-মার সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, অপহৃতরা ভালো আছেন। অপহরণকারীরা তাদের বাবা-মাকে একটি গোপন স্থানে যেতে বলেছেন। তারা সে জায়গায় যাচ্ছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে এখনো কথা হয়নি।”
এর আগে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে চবির পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বহনকারী গাড়ির চালককেও অপহরণ করা হয়।
এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) ছাত্র সংগঠন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চবি ইউনিট বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ-প্রসীত) দায়ী করেছে।
পিসিপি চবি ইউনিটের প্রচার সম্পাদক রিবেক চাকমা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে অপহৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে বলা হয়েছে, বিজু উৎসব উপলক্ষ্যে চবির পাঁচ শিক্ষার্থী বন্ধুদের সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে পৌঁছান।
চট্টগ্রামগামী বাস না পাওয়ায় কুকিছড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটান তারা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকালে অটোরিকশায় করে শহরে ফেরার পথে গিরিফুল এলাকায় পৌঁছালে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাদের অটোরিকশাসহ অপহরণ করে নিয়ে যায়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট রাঙামাটি সদর এলাকা থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে ইউপিডিএেফর সশস্ত্র সদস্যরা অপহরণ করে। এর তিনদিন পর তাদের বেধড়ক মারধর করে ছেড়ে দিয়েছিল।
তবে অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফ । সংগঠনটির জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে ইউপিডিএফের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি আমাদের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে।”
অপহৃত ছাত্রী দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান তার ফেসবুকে লিখেছেন, “খাগড়াছড়িতে আমার মেয়ে দিব্যি চাকমা তার সহপাঠীদের সঙ্গে বিজুতে গিয়েছিল। ফেরার পথে গিরিফুল থেকে অপহৃত হয়। প্লিজ, কারো মায়ের বুক খালি কইরেন না। দোষ থাকলে শাস্তি দিন, কিন্তু সন্তান হারানোর বেদনা যেন আর কোনো মায়ের কপালে না জোটে। আমি হাতজোড়ে অনুরোধ করছি, ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।”
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, “চবি শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে অপহরণের কথা শুনেছি। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি সত্য বলে মনে হচ্ছে। এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি এবং অপহৃতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী