তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে চার রিভিউ আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে
Published: 11th, February 2025 GMT
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানি দুই সপ্তাহ পিছিয়েছে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার দুই সপ্তাহের জন্য শুনানি মুলতবি করেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আবেদনকারীর পক্ষে সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলো আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএনপির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো.
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ আবেদনগুলো শুনবেন। তাই আবেদনগুলোর শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।
এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন। পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। দুই সংশোধনী নিয়ে পৃথক পাঁচটি রিভিউ আবেদন আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত বছরের অক্টোবরে একটি রিট করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে রুল হয়।
রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১১ স ল র গত বছর র র জন য ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
৮০ শতক জমি নিয়ে ১৮ বছরের টানাপোড়েন
সিলেট নগরীর রিকাবীবাজারের পুলিশ লাইন লুসাই গির্জা সমিতির ৮০ শতক জমির মালিকানা নিয়ে ১৮ বছর ধরে টানাপোড়েন চলছে। ২০০৭ সালে সেখানে একটি টাওয়ার নির্মাণকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আইনি লড়াই। পরে চলে দখল-পাল্টা দখল। সিরাজুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীর সঙ্গে সমিতিসহ একাধিক পক্ষের দুই ডজন মামলার পরও বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা কমিটির সমন্বয়ক তৌহিদুল ইসলাম। ভূমি বিরোধের প্রেক্ষাপটে পুলিশ লাইন লুসাই গির্জা সমিতি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও লিজগ্রহীতার সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।
উভয় পক্ষের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, লুসাই সম্প্রদায়ের কিছু লোক রিকাবীবাজার পুলিশ লাইন এলাকায় বসবাস করতেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী এ সম্প্রদায়ের হারেঙ্গা লুসাই ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর সুবেদার। ১৯৪৭ সালে ১ দশমিক ৩৭ একর জমি লুসাই সম্প্রদায়ের প্রার্থনা ও মৃতদেহ সমাহিত করতে বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে ৪৪ শতক জমি সিলেট স্টেডিয়াম অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ১৯৭৪ সালে গির্জা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হারেঙ্গা লুসাইয়ের নামে জমিটি রেকর্ড হয়। ১৯৮৬
সালে তিনি মারা গেলে তাঁর মরদেহ সেখানে সমাহিত করা হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সিলেট জেলা বারের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম ২০০৬ সালে জাল আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গির্জা সমিতির ইজারাকৃত জমির মধ্যে ৮০ শতক ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেড কোম্পানির নামে দলিল সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শেয়ার ও ফ্ল্যাটের বিপরীতে তিনি কয়েক কোটি টাকা আদায় করেন। তাঁর নামে দুদকের একটিসহ থানা ও আদালতে ১১টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে সিরাজ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সংখ্যালঘু লুসাই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভূমি দখলকারী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লুসাইরা যেন তাদের জায়গায় শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। উপস্থিত ছিলেন গির্জা সমিতির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান জমিংথাংগা লুসাই, ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম, এম এ সাত্তার, সেলিনা সুলতানা, রুহিন খান ও কামরান আহমদ।
অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, আমি বৈধভাবে জমি কিনে সেখানে ভবন করি। লুসাই সম্প্রদায়ের কোনো সমিতি নেই। জায়গার মালিক ছিলেন হারেঙ্গা লুসাই। তাঁর উত্তরাধিকারীরা বিক্রি করে দিয়েছে।