নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এনডিইউবি) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হল। শনিবার রাজধানীর আরামবাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে জাঁকজমকপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এই বিশেষ দিন উপলক্ষে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে শুরু করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনের বিশেষ পোশাকে সদ্য স্নাতকদের পদচারণে মুখর হয় এনডিইউবি প্রাঙ্গণ।

সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরেই সামনে বড় মাঠে বসানো হয়েছিল ছবি তোলার কয়েকটি বুথ। সেখানে কখনো বন্ধুদের সঙ্গে, কখনো মা–বাবার সঙ্গে ছবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা আনন্দঘন পরিবেশে নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্ব সেরে নেন।

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের স্নাতক রাফাত ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমাদের বেশ কয়েকটি সেমিস্টার কোভিডের সময় হয়েছে। ওই সময় ক্যাম্পাস ও বন্ধুদের মিস করেছি। এ ছাড়া সার্বিক অভিজ্ঞতা দারুণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়ছে। এটাও ভালো দিক।’’

শোভাযাত্রার মাধ্যমে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কোরআন, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক থেকে ধর্মীয় বাণী পাঠ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফাদার প্যাট্রিক ডি.

গ্যাফনি অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।

এবারের সমাবর্তনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘তোমার আলোকে বিকশিত হতে দাও’। জ্ঞানের প্রতীকী উপস্থাপন হিসেবে অনুষ্ঠানের শুরুতে মোমবাতি জ্বালানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ১৯৭১ সালের শহীদ ও ২০২৪–এর বিপ্লবে আত্মত্যাগকারীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রিয় গ্র্যাজুয়েট, এখন আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময় তৈরি হয়েছে। তোমরাই এই বিপ্লবের অগ্রদূত। তাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হওয়া পর্যন্ত তোমাদেরই এটা রক্ষা করতে হবে।’’

ফাওজুল কবির খান আরো বলেন,  ‘‘মনে রাখবে, আমরা শুধু আমাদের নিজের, পরিবারের ও বন্ধুদের কেন্দ্র করেই চিন্তাভাবনা করি। তোমাদের আজকের অর্জনের পেছনে আরও অনেকের অবদান আছে। তাদের জন্যও কিছু করবে।’’

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটর ডেমের কিওঘ-হেসবার্গ অধ্যাপক আর স্কট অ্যাপলবি। তিনি বলেন,  ‘‘এনডিইউবির যাত্রা অল্প দিনের হলেও চমকপ্রদ। মাত্র ১১ বছরে এটি একাডেমিক উৎকর্ষের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। লালিত হচ্ছে সত্য, ন্যায় ও শান্তির মূল্যবোধ।’’

অ্যাপলবি আরো বলেন, ‘‘আপনারা আজ যা অর্জন করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন। আপনাদের অনেকে ভালোবেসেছে বলেই আজ আপনি এখানে। এই ভালোবাসার উপহার নিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের জন্য ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করার কাজ করতে হবে। গত আন্দোলনে তরুণদের প্রতিবাদী ও সাহসী সত্তা পুরো বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছে। সেটা নষ্ট করবেন না।’’

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দ্যেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফাদার প্যাট্রিক ডি গ্যাফনি বলেন, ‘‘অনেক গুণের মধ্যে আমি আপনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা (ক্রেডিবিলিটি) অর্জনে জোর দিতে চাই। এর দ্বারা আমি সততা, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের মতো গুণকে বোঝাচ্ছি। বিশ্বাসযোগ্যতা মানে বোঝায় নিজেকে নিয়ে ভাবার সক্ষমতা। আপনি যেন ভালো–মন্দের পার্থক্য করতে পারেন। এটি আপনার সুনাম ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করতেও সাহায্য করে।’’

সমাবর্তনে ১ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকে দুজনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল এবং সাতজনকে ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়। পাশাপাশি চারজনকে কুইনলিভান সিলভার মেডেল, তিনজনকে আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলি সিলভার মেডেল, সাতজনকে ফাদার বেনজামিন কস্তা ব্রোঞ্জ মেডেল এবং দুজনকে ফাদার পিশোতো ব্রোঞ্জ মেডেল দেওয়া হয়। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ক্যাটাগরিতে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র দত্তকে দেওয়া হয় ফাদার বাসিল অ্যান্থনি মেরি মরো গোল্ড মেডেল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আর্চবিশপ বিজয় এন ডি' ক্রুজ, ওএমআই ও এনডিইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. ফাদার জর্জ কমল রোজারিও, সিএসসি ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফাদার অসীম থিওটোনিয়াস গনসালভেস।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বেলা তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীনের পরিবেশনা হয়।

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র পর ব শ উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আর্থ-সামাজিক আবেদন ছিল চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখে

বাংলা নববর্ষ বরণের আর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হতো গ্রাম-বাংলায়। আর্থ-সামাজিক আবেদন আর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা ছিল সেই সব দিন। চৈত্র সংক্রান্তির সেসব অনুষ্ঠান এখন অনেকটাই ম্লাণ। প্রাধান্য পেয়েছে পহেলা বৈশাখ। আমরা দেখেছি চৈত্র সংক্রান্তি সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ছিল আর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবার কাছে প্রাধান্য পেত পহেলা বৈশাখ।

বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর জন্য গ্রাম বাংলায় নানা আয়োজন হতো। গ্রামে মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ চড়ক ঘোরানো। জীবন্ত মানুষকে বর্ষিতে গাঁথা হতো। তারপর বাঁশের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘোরানো হতো। তাকে আবার আগের দিন না খাইয়ে রাখা হতো। সে আবার ওই ঘূর্ণায়মান অবস্থায় একটি কবুতর দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে, সেটাকে নিচে ফেলে দিত। তারপরে পাঠা বলি হতো, কোনো কোনো জায়গায় মহিষ বলি হতো। বিভিন্ন গ্রামীণ মেলা হতো। বিশেষ করে চড়ক উৎসব যেখানে হতো, সেখানে। চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ বিশেষ জায়গা পূজাও হতো আবার মেলাও হতো। ওইসব মেলায় গৃহস্থলির জিনিসপত্র পাওয়া যেত। এই চড়ক উৎসবের আয়োজন করতো হিন্দুরা কিন্তু দৃশ্য উপভোগ করতে সবাই। আবার মেলার আয়োজন করতো হিন্দুরা কিন্তু গৃহস্থলির জিনিসপত্র—হাঁড়ি, পাতিল, কুলা, ডালা, সের এসব কেনার জন্য মুসলিমদেরও সরব উপস্থিতি থাকতো মেলায়। এখন যেমন পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ খাওয়া; এই রীতি তখন ছিল না। তখন চৈত্র সংক্রান্তিকেই মূলত একটা পার্বণ হিসেবে সমাদৃত হতো। মেলাকেন্দ্রিক লাঠিখেলা ঘিরে অসংখ্য মানুষের জমায়েত হতো।

বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিব-পার্বতী। একজন শিব সাজতো আরেকজন পার্বতী সাজতো। মেলাটার নাম ছিল শিব-গাজনের মেলা। শিব আর গাজনের ভক্ত নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্যদানব; এদেরও আবার প্রতিমূর্তি সাজতো অনেকে। তারপর শিব-পার্বতীর সঙ্গে নেচে চলতো। এরা নেচে নেচে বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি যেত। এছাড়াও হতো নীল পূজা, গম্ভীরা পূজা, শিবের গাজন, শাকান্ন।

চৈত্র সংক্রান্তিতে বিশেষ বিশেষ স্থানে শিরনীর আয়োজন হতো। ল্যাটকা খিচুড়ি, আখের গুঁড়ের ক্ষীর রান্না হতো। কলাপাতায় পরিবেশন করা হতো। মাঠে, স্কুলে কিংবা ক্লাবে এই সব আয়োজন হতো। সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া হতো। চৈত্র সংক্রান্তিতে বৈশাখ বরণের একটা প্রস্তুতিও লক্ষ্য করা যেত। ঘর বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হতো। বাড়ির বউ-ঝিরা কাঁচা ঘর লেপে চকচকে করতো। আবার গ্রাম বা মফস্বলের ছোট বড় দোকানগুলো সাজানো হতো। কারণ পরের দিন হালখাতা। হালখাতা উপলক্ষ্যে বাড়ির পুরুষেরা পণ্য বেচা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করতো। কারণ প্রত্যেকেরই একটা চেষ্টা থাকতো দোকানের বাকি শোধ করার। পুরো টাকা শোধ করতে না পারলেও যতোটা সম্ভব শোধ করতো তারা। হালখাতা উপলক্ষ্যে দোকানগুলোতে নতুন লাল টালিখাতায় দেনা-পাওনার হিসাব লেখা শুরু হতো। পহেলা বৈশাখে দোকানদাররা সাধারণত বাকি বিক্রি করতো না। তারা বলতো, বছরের প্রথম দিনে বাকি দেবেন না। হালখাতা উপলক্ষ্যে বাড়ির ছোট সদস্যরাও আনন্দিত হতো। তারা বড়দের হাত ধরে হালখাতা খেতে যেত। রসগোল্লা, পুরি, জিলাপি পেয়ে খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরতো। বৈশাখে গ্রাম বাংলার অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন গতি। তবে সবশেষে হালখাতা একটি সামাজিক অনুষ্ঠানও। এই অনুষ্ঠান  কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে সম্পর্ক আর দৃঢ় হতো। সত্যিকার অর্থেই প্রাণ-প্রাচুর্য ছিল সেই সামাজিক সৌহার্দে। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গানে-নাচে-আবৃত্তিতে বর্ষবিদায়
  • চট্টগ্রামে নববর্ষের পূর্ব নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান হবে: জেলা প্রশাসন
  • মারমাদের মাহা সাংগ্রাই উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
  • ‌‘তৌহিদী জনতার’ চিঠিতে বাতিল হলো শেষের কবিতা নাটকের প্রদর্শনী
  • চারুকলায় আগুন দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ
  • আর্থ-সামাজিক আবেদন ছিল চৈত্র সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখে
  • রাষ্ট্র ও সমাজকে পথশিশুদের প্রতি মানবিক হতে হবে
  • চন্দনাইশের ‘হাতপাখা’ গ্রামে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা
  • শহুরে পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ননসেন্স’
  • আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ