কুড়িগ্রাম সীমান্তে সিসি ক্যামেরা খুলে নিতে সম্মতি দিয়েছে বিএসএফ
Published: 11th, February 2025 GMT
কুড়িগ্রামের দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্ত গ্রামে ভারতের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে গাছের উপরে লাগানো সিসি ক্যামেরা খুলে নিতে সম্মতি দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
মঙ্গলবার দুপুরে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দক্ষিণ বাঁশজানি গ্রামে বাংলাদেশের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থিত আলমগীর হোসেনের বাড়ির আঙ্গিনায় পতাকা বৈঠকে এই সম্মতি জানানো হয়।
বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে ১৬২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট অনিল কুমার মনোজ এবং বিজিবির পক্ষ থেকে কুড়িগ্রামস্থ ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
এছাড়াও একই স্থানে বিজিবির দিয়াডাঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ির আয়োজনে জন সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিএসএফ অতি গোপনে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৯৭৮ এর ৯এস সাব পিলারের পাশে ভারতের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে গাছের উপরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম সীমান্তে সোমবার দিনভর বিএসএফ এবং বিজিবির ক্যাম্প ও কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সুরাহা না হওয়ায় মঙ্গলবার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াকফ আইনবিরোধী আন্দোলনে ফের রণক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ
ওয়াকফ আইনের বিরোধীতা করে কলকাতায় অবরোধ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় কলকাতায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে মুসলিম সমাজ। গতকাল শুক্রবার ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠে সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদ।
বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে জেলাটির বিভিন্ন এলাকায়। আগুনে পোড়ানো হয়েছে একাধিক প্রাইভেট গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক এবং পুলিশের গাড়িও। জঙ্গিপুরের পর সুতিতেও আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। ইট ছোড়া হয় পুলিশকে। ট্রাফিক কিয়স্ক, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক কিশোর।
এদিন মুসলিম নেতাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বলা হয়, আমরা এ আইন মানি না, এ আইন মুসলিমবিরোধী। এ আইনে আমাদের মসজিদ, কবরস্থান, দরগা নিয়ে নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন:
ছয়জন ভারতে ঢুকে ফিরলেন ৫ জন, কুটি মিয়ার কী হলো
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: বেনাপোল বন্দর থেকে ফেরত গেছে ৪ ট্রাক
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বেলা বাড়তেই অশান্তি চরমে পৌঁছায়। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভ ক্রমশ শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান, সুতি সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
তবে শনিবার সকালে পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শান্তি ফেরাতে টহল দিচ্ছে বিএসএফ।
শুক্রবার অশান্তির মধ্যে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। আক্রান্ত যুবকের নাম মোশারফ হোসেন। তার বাবা জানান, গোলমালের সময় ছেলে রাস্তায় জিনিস কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তার বুকে গুলি লাগে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অঞ্চলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।”
শুক্রবারের বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গেছে, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্র্যাক অবরোধের জেরে এদিন অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়েছে। এর আগে, ৮ এপ্রিল একই ইস্যুতে জঙ্গিপুরের উমরপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। বিএসএফের দাবি, রাজ্যের আবেদনেই তারা অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে।
মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। ভিডিও বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, “কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের। তবে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
শনিবার সকাল থেকে একাধিক জায়গায় মোতায়েন করা হয়ছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মোয়াতেন রয়েছেন বিএসএফও।
গতকালের সংঘর্ষের পরে আজ সামশেরগঞ্জে বন্ধ প্রায় সব দোকান বাজার বন্ধ। পুলিশের সঙ্গে জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে র্যাফ। একই অবস্থা সুতির সাজুরমোড়েও।
এদিকে, প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি যে সরকার চালাচ্ছে, সে সরকার শুধু মুসলমানদের খারাপ চাইছে। সরকার যে ওয়াকফ বিল নিয়ে এসেছে সেই বিলের কোনো দরকার ছিল না। স্বাধীনতার আগে থেকেই ভারতে ওয়াকফ বিল ছিল।
তাদের দাবি, এই ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলমানদের সম্পত্তি ছিল, আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে।
ভারতে মুসলমানদের দান করা শত শত কোটি ডলার মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও বহু বছরের পুরনো পরিচালনা পদ্ধতি সংশোধন করে গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিল পাস হয়।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার জন্য এই বিল আনা হয়।
কিন্তু বিরোধী দল এবং প্রায় সব মুসলিম সংগঠনই বলছে, এই বিলটি আনাই হয়েছে ভারতের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করতে।
বিলটি পাস হওয়ার দিন থেকেই ভারতজুড়ে এর প্রতিবাদ চলছে, যার প্রভাবে শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল কলকাতা। শুক্রবারও সেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা যায়।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ