নড়াইলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবে মেতেছেন স্থানীয়রা। শীতকালে খাল ও বিলে পানি কমে গেলে পলো বাওয়া উৎসবে মেতে উঠেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময়ে প্রায় প্রতি দিনই গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন ছেলে-বুড়ো মিলে সবাই।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কালনা-নড়াইল-বেনাপোল-ঢাকা মহাসড়কের তুলারামপুর এলাকার একটি খালে দলবেধে পলো বাইতে দেখা গেল স্থানীয়দের। উৎসবের আমেজে তারা কচুরিপানার মধ্যে পলো দিয়ে মাছ ধরেন। সারিবদ্ধভাবে খালের পানিতে পলো নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন মাছ ধরার উৎসবে। বড় আকারের শোল, টাকি, খয়রা, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন দেশি মাছ মিলছে খালে।
সলেমান শেখ, শরিফুল ইসলাম, রিজাউল করিমসহ অনেকেই জানান, এই পলো বাওয়া উৎসবে মাছ ধরার আনন্দ অন্যরকম। কে কতগুলো মাছ পেলো সেটা বড় কথা নয়, মূলত গ্রামবাসী সবাই একসঙ্গে আনন্দ করতে পারেন এই উৎসবে। গ্রামীণ ঐহিত্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখাটাই বড় কথা।
পৌষ ও মাঘ মাস জুড়ে নড়াইলের বিভিন্ন খাল, বিল ও ডোবায় দলবেধে পলো দিয়ে মাছ ধরেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্যে, আগের চেয়ে খাল-বিলে দেশি মাছ কম পাওয়া যায়। দেশি মাছের ঐহিত্য বাঁচিয়ে রাখতে মৎস্য বিভাগসহ সবাই কাজ করলে আরো বেশি মাছ মিলবে। এতে পলো বাওয়ার আনন্দও আরো বেড়ে যাবে।
ঢাকা/ শরিফুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পূর্ণসেবা ও নতুন শিষ্যত্ব দিয়ে ভাঙল সাধুর হাট
সাধুসঙ্গ, রাখালসেবা, অধিবাস, পূর্ণসেবাসহ নানা রীতি ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাঙ্গ হলো ফকির লালন শাহ স্মরণোৎসব। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্যের মাধ্যমে শুরু হয় সাধুসঙ্গ। সর্বশেষ শক্রবার দুপুরে লালন ভক্ত সাধু-গুরুদের পূর্ণসেবার মাধ্যমে উৎসব শেষ হয়েছে। সকালে বাল্যসেবায় পায়েস ও মুড়ি দেওয়া হয় ফকির বাউল ভক্তদের। দুপুরে পূর্ণসেবায় ছিল ভাত, ডাল, সবজি, মাছ ও দই। এর পর লালন মতে দীক্ষিতদের খেলাফত (শিষ্যত্ব) প্রদান করেন তাদের নিজ নিজ গুরুরা।
দোল পূর্ণিমা তিথিতে প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় ফকির লালন শাহর স্মরণোৎসব। সাধু-গুরু, লালন ভক্তদের সরব উপস্থিতি, গান ও গ্রামীণ মেলায় জমজমাট হয়ে ওঠে আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমি এ উৎসবের আয়োজন করে। এবার রমজানের কারণে এক দিনই লালন স্মরণোৎসব হয়েছে। ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন। ফলে উৎসবে লালন ভক্ত বাদে অন্য লোকজনের উপস্থিতিও ছিল কম।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে লালন একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ওই দিন রাত ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে খণ্ড খণ্ড দলে ভাগ হয়ে আসর বসিয়েছেন বাউল সাধুরা। একতারা বাজিয়ে গানে গানে তারা স্মরণ করছেন ফকির লালন শাহকে। এ সময় তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।
উৎসবে আগত ফকির রাজ্জাক শাহ বলেন, ‘সাঁইজি (ফকির লালন) পূর্ণিমা তিথিতে সাধুসঙ্গ করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও এমন আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছি। অষ্টপ্রহরব্যাপী গুরুকার্য, রাখালসেবা, অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার মাধ্যমে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। এবার সাধুসঙ্গে আসল বাউলরা অংশ নেওয়ায় কোনো ভিড় বা ঠেলাঠেলি ছিল না। এতে খুশি আমরা।’
ফকির হৃদয় শাহ বলেন, ‘আমরা চাই পারস্পরিক উৎসবে আসা সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হোক। প্রেমের জায়গা গভীর হোক ও ঘৃণা দূর হোক। দোল পূর্ণিমা তিথিতে লালন শাহ তাই করতেন।’
আখড়াবাড়ির ভারপ্রাপ্ত খাদেম মশিউর রহমান বলেন, দুপুরে পূর্ণসেবার মাধ্যমে শেষ হয়েছে সাধুসঙ্গ। এবারও লালন ভক্ত অনুসারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল আখড়াবাড়ি। আসছে ১ কার্তিক ফকির লালনের তিরোধান দিবসে আবার মিলনমেলায় শরিক হবেন লালন ভক্ত ও প্রেমীরা।