‘পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে’ গানে টিকটক করা আ.লীগ নেত্রী গ্রেপ্তার
Published: 11th, February 2025 GMT
নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার মূল ফটকের সামনে ‘পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে’ গানে নেচে গেয়ে টিকটক ভিডিও বানানোর অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গ্রেপ্তার ওই নেত্রীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বড়াইগ্রাম থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেত্রীর নাম শিউলী খাতুন (৪২)। তিনি নাটোর জেলা শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও বড়াইগ্রাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। শিউলি খাতুন বড়াইগ্রাম পৌরসভার লক্ষ্মীপুর মহল্লার জিয়াউর রহমানের সাবেক স্ত্রী। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হন।
আরো পড়ুন:
হবিগঞ্জের সাবেক এমপি মজিদ খান গ্রেপ্তার
মোটরসাইকেল গ্যারেজ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহাবুবুর রহমান বলেন, “থানার কমপাউন্ডের ভেতর মূল ফটকের সামনে ‘পুলিশ চোরের প্রেমে পড়েছে’ গানে টিকটক ভিডিও বানান বড়াইগ্রাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিউলি খাতুন। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গতকাল রাতেই অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে শিউলি খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
গ্রেপ্তারের আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী শিউলি খাতুন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “টিকটক করা আমার নেশা। সে কারণেই ভিডিওটি ধারণ করেছিলাম। পরে বুঝতে পারেছি, থানার সামনে কাজটি করা ঠিক হয়নি।”
বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সবার অগোচরে ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি সংবাদকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
ঢাকা/আরিফুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ গ র প ত র কর ট কটক আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সারা দেশে ভাঙচুর-হামলা থামানোর আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘তৌহিদী জনতা’ শব্দ নিয়ে চটেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে দলটির রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে উপদেষ্টার ওই বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে গণসমাবেশের আয়োজন করে খেলাফত মজলিসের জেলা শাখা। ওই মঞ্চে দুই কেন্দ্রীয় নেতা উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, ‘তৌহিদ মানে কি? যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে তাদের বলা হয় তৌহিদী জনতা। আজকে দুর্ভাগ্য, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা, যার নাম মাহফুজ আলম তিনি গতকালকে এই তৌহিদী জনতাকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছেন। অর্থাৎ উনি গোটা মুসলমানকে উগ্রবাদ বলে সম্বোধন করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “রাজশাহীর সমাবেশ থেকে পরিষ্কার বলতে চাই, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আপনাকে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আপনাকে মুখ সামলে কথা বলতে হবে। যদি বাংলাদেশের মুসলমান গর্জে ওঠে, আপনি পালাবার পথ পাবেন না। এ জন্য আপনি মুখ সামলে কথা বলবেন। আপনি মুসলমানদেরকে উগ্র বলবেন, এটা এই ৫ আগস্টের পরে এ দেশের জনগণ কোনোভাবে মেনে নেবে না। তাই পরিষ্কার বলি- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
সমাবেশে এ ব্যাপারে কথা বলেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীনও। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল বিভাজনের রাজনীতি। দেশটাকে দুইভাগে বিভক্ত করেছিল। এক শ্রেণি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার ঠিকাদার মনে করত। আর বিরোধী দল এবং অন্য মতের মানুষকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করত। আজকে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আমরা এই বিভাজনের রাজনীতি কিছুটা দেখতে পাচ্ছি।’
তিনি বলেন বলেন, “সরকারের চেয়ারে বসে একজন উপদেষ্টা, তাকে আবার মাস্টারমাইন্ডও বলা হয়। কিন্তু কোনোদিন আন্দোলনের প্রথম সারি তো দূরের কথা, পেছনের কাতারেও দেখিনি। সে তৌহিদী জনতা বলে, তৌহিদী জনতাকে আলাদাভাবে বিভাজন করার চেষ্টা করছে।”
আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ‘পরিষ্কার বক্তব্য- তৌহিদী জনতা ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তি কখনো টিকে থাকবে না। এই জন্য তৌহিদী জনতা বলে কটাক্ষ যদি তুমি করো, তোমার ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। তোমার শেখ হাসিনার চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।”
রাজশাহীর সমাবেশে এই বক্তব্য আসার পরপরই ফেসবুকে তৌহিদী জনতা শব্দের ব্যবহার নিয়ে ব্যাখা দেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, “তৌহিদী জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দিইনি, সতর্ক করেছি। কেন করেছি? গত পনের বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সব নাগরিকদের মতোই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরকেই এ সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে।”
তিনি লেখেন, “আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মতোই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী মুসলিম হিসাবে তৌহিদবাদী, কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সহনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসাবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।”
উপদেষ্টা লেখেন, “বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, ‘এ কঠোরতার হুঁশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে। কিন্তু, আগে যেভাবে ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হত, যার শিকার আমিও হয়েছি- তা কোনোমতেই আর পুনরাবৃত্ত হবে না।”
মাহফুজ আলম লেখেন, “আলেম উলেমা, মাদরাসার ছাত্ররা গত ১৫ বছর নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন, এবারের অভ্যুত্থানেও রক্ত দিয়েছেন, কিন্তু যে স্বাধীনতা এতো রক্তাক্ত, সে স্বাধীনতা রক্ষায় প্রজ্ঞা না দেখালে যে যুলুম নেমে আসবে- এ সতর্কতা উচ্চারণ যদি ভুল হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি জালিম বা মজলুম- দুইটা হওয়া থেকেই আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।”
তিনি লেখেন, ‘ব্যক্তি আক্রমণ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আক্রমণ বা সন্দেহ তৈরি, পরিবারের সদস্যদের হুমকি বা বেইজ্জতি ইত্যাদি কাজগুলো নবীজির অনুসারী হিসাবে সবার পরিত্যাগ করা উচিত। চলুন, বিভাজন আর ঘৃণা বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে সবার করে গড়ে তুলি। পরস্পর সম্মান ও মর্যাদার সম্পর্কই বাংলাদেশের ভিত্তি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ