কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার
Published: 11th, February 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ১৩ পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রাসেলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে একই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কারণে ওই ১৩ জনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পাথরবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনিক কারণে ১৩ পুলিশ সদস্যকে সিলেট পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার নির্দেশনার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা সেখানে সংযুক্ত হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দুজন উপপরিদর্শক (এসআই), দুজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও ৯ জন কনস্টেবল। তাঁরা হলেন এসআই খোকন চন্দ্র সরকার ও মিলন ফকির, এএসআই শিশির আহমেদ ও শামীম হাসান, কনস্টেবল নাজমুল আহসান, মুন্না চৌধুরী, নাইমুর রহমান, তুষার পাল, আবু হানিফ, সাখাওয়াত সাদী, সাগর চন্দ্র দাস, মেহেদী হোসেন ও কিপেস চন্দ্র রায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জে শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধভাবে পাথর তোলা হচ্ছে। ওই পাথর ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করা হয়। পাথরবোঝাই গাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি পাথরবোঝাই গাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। এরপর তাঁদের থানা থেকে প্রত্যাহার করা হলো।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দোষী পুলিশের সাজা দেখার অপেক্ষায় মায়ের ১১ বছর
‘আমার সামনে থেকে ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরেছে পল্লবী থানা পুলিশ। সেই ঘটনার ১১ বছর পূরণ হলো। এখনও আমি দোষীদের সাজা দেখার অপেক্ষায় আছি। জানি না, বিচার দেখে যেতে পারব কিনা।’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া ইশতিয়াক হোসেন জনির মা খুরশিদা বেগম। প্রিয় সন্তানকে হারানোর বেদনা এবং অসুস্থতার কারণে বয়সের চেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছে তাঁর শরীর। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যেই আমার ছোট ছেলের নানা রকম ক্ষতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসামিপক্ষ।’
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পল্লবী ১১ নম্বর সেকশনের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গাড়িচালক জনি ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকিকে আটক করে পুলিশ। তাদের পল্লবী থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি জনির মৃত্যু হয়। রকি ছাড়া পাওয়ার পর ওই বছরের ৭ আগস্ট এ ঘটনায় মামলা করেন। এটি ছিল নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে করা প্রথম মামলা।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে তিন পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন এবং দুই সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দণ্ডিত প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, জনি হত্যায় দণ্ডিতদের মধ্যে পুলিশের এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এখনও পলাতক। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর পুলিশের সোর্স মো. রাসেল গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে রয়েছেন। আর পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল হাসান ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে। তাদের আপিলের আংশিক শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারিক অধিক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এখন নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য আবেদন করা হবে। বেঞ্চ পেলে বাকি শুনানি শুরু হবে। এমনিতে বিচার শেষ হওয়ার পথে আর কোনো বাধা নেই। তবে আপিল শুনানিতে সাধারণত অনেক সময় লেগে যায়।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী রকি বলেন, অনেক চাপ ও হুমকি-ধমকির মধ্যেও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় লড়াই করে যাচ্ছি। আসামিপক্ষের লোকজন বিভিন্ন সময়ে ভয় দেখায়, ক্ষতি করার চেষ্টা করে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আমার গ্যারেজে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাকে ‘বাড়াবাড়ি’ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
নিহত জনির সন্তানদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানান রকি। আইনজীবীরা বলছেন, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি বা তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কল্যাণ তহবিল গঠন করা দরকার। সেই সঙ্গে মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীর পরিবার যে ভোগান্তির শিকার হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট নীতিমালা ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন।