সাতক্ষীরার শ্যামনগরে শ্রেণিকক্ষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ছয় বছরের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত রাফি (৬) ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। সে খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের আনিছুর রহমান ও সেলিনা আক্তার দম্পতির ছেলে। তার বাবা আনিসুর পেশায় গ্রামীণ চিকিৎসক; মা সেলিনা এনজিওতে চাকরি করেন। মায়ের চাকরির সুবাদে রাফি শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে থাকত।

জয়নগর প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল ওহাব জানান, বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে রাফি কোচিংয়ের ক্লাস করছিল। সেখানে সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে অফিসকক্ষে নিয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্কুলের শিক্ষক তাজুন নাহার বলেন, ‘কোচিং করার সময় মাথা ব্যথা করছে বলে জানিয়েছিল রাফি। তখন আমরা তাকে আলাদা করে বসিয়ে রাখি এবং মুঠোফোনে রাফির মাকে বিষয়টি জানাই। তার মা একটা ভ্যানে করে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেন। কিছুক্ষণ পর রাফি একবার বমি করে অচেতন হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাকির হোসেন বলেন, রাফি নামে এক স্কুলছাত্রকে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয় তিনি কিছু বলতে চাননি।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, হাসপাতাল থেকে শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয়ে একজন উপপরিদর্শককে পাঠানো হয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য মনগর চ ক ৎসক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ওসির ‘অনিয়মে’ জনতা অতিষ্ঠ, ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের আশ্বাস

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে টাকা আদায়, সংঘর্ষে আহতদের মামলা না নেওয়া, ফসলি জমি কাটায় জব্দকৃত ট্রাক্টর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তার এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিজয়নগরের চান্দুরা থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন ও তার ভগ্নিপতি মো. সালমানসহ চারজনকে আটক করেন ওসি। এক লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের মারধর করে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৫ রমজানের দিন উপজেলার ভিটিদাউদপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় রত্না আক্তারের ভাই সোহরাব মিয়া আহত হলে ওসি মামলা নেননি, বরং প্রতিপক্ষের মামলা নিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে মধ্যরাতে হরষপুর থেকে দুটি ট্রাক্টর জব্দ করার পর এক লাখ টাকা নিয়ে ওসি এসব ছেড়ে দেন। দ্বিতীয় দফায়, আরো তিনটি ট্রাক্টর জব্দের পর ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন।

ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘চাচাতো ভগ্নিপতি মো. সালমানকে সৌদিআরবে পাঠানোর জন্য বিজয়নগরের কাঠমিস্ত্রি ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী সালাম মিয়ার কাছে যাওয়ার সময় ওসি গাড়ি থামান। তল্লাশির সময় এক লাখ ১০ হাজার টাকা পাওয়া গেলে, ভগ্নিপতিকে মারধর করে থানায় নিয়ে যান। পরদিন ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার করে জামিন নেন। যদিও টাকা ফেরত দিতে ভিডিও করা হয়, তবু মাত্র ৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।’’ 

বিজয়নগরের সাতগাঁও উত্তরপাড়া গ্রামের শাহীন মিয়া জানান, ঈদের দিন সকালে পূর্ববিরোধের কারণে সাতজন তাকে মারধর করেন। এই ঘটনায় ওসি মামলা নথিভুক্ত করেননি। 

ভিটিদাউদপুর গ্রামের রত্না আক্তার অভিযোগ করেন, বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে পূর্ববিরোধে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তার ভাই সোহরাব মিয়াকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে, ওসি প্রতিপক্ষের মামলা নেন এবং তাদের মামলা নথিভুক্ত করেননি। 

সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নোয়াবাদী গ্রামের সালমা সুলতানার মাথায় ও হাতে দা দিয়ে কোপ দেয় প্রতিবেশী মাচ্চু মিয়া, তবে ওসি প্রথমে মামলা নথিভুক্ত করেননি। পরে, ভাতিজার মাধ্যমে তিনদিন পর মামলাটি নথিভুক্ত করেন।

এক গ্রামবাসী জানান, ফেব্রুয়ারিতে ওসি রওশন আলী দুটি ট্রাক্টর জব্দ করেন এবং এক লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে, আরো তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করা হলে ৬৭ হাজার টাকা নিয়ে ছাড় দেয়। 

বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের খাবিবুর রহমান মনির এবং চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁ গ্রামের মিলন মৃধা ফেসবুকে ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং দ্রুত ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের আইনজীবী নাসির মিয়া বলেন, ‘‘ওসি যদি মামলা নথিভুক্ত না করেন, তাহলে তাকে নোট দেওয়া উচিত।’’ 

তবে, বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী অভিযোগগুলোর সত্যতা অস্বীকার করেন। পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘যদি পুলিশের কেউ কোনো অপরাধ বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

চট্টগ্রাম পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, ‘‘ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’’

ঢাকা/মাইনুদ্দীন/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
  • জাজিরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবারও ‘খইয়ের মতো’ ফুটল ককটেল
  • ওসির ‘অনিয়মে’ জনতা অতিষ্ঠ, ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের আশ্বাস