যশোরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ২ গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ৪
Published: 11th, February 2025 GMT
মাইকে ঘোষণা দিয়ে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামে সংঘর্ষটি হয় বলে জানান যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি কাজী বাবুল।
আহতরা হলেন- রাজু (৪৪), শামীম (৩৬), জিয়া (৩৫) এবং পাপ্পু।
আরো পড়ুন:
দুই দফা সংঘর্ষ শেষে শান্ত আইডিয়াল ও সিটি কলেজ
বগুড়ায় বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৩
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুরামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের চাষাবাদের জমি রয়েছে হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামে। যাদের জমি রয়েছে বড় হৈবতপুর গ্রামে তাদের মধ্যে রয়েছেন চুরামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বর ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিছুর রহমান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আনিছুর নিজের জমিতে সেচের পানি দিতেন। তিনি হৈবতপুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জমির আইল কেটে দিতেন। আজ সকালে অন্যের সেচ কাজের পানি নিজের জমিতে নিতে আইল কেটে দেন আনিছুর ও তার লোকজন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে আনিছুর গ্রামের এলাকার মসজিদের দুইটি মাইকে ঘোষণ দিয়ে লোকজন ডাকেন। অন্যদিকে, বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীও চলে আসেন।
এসময় দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন যুবদল নেতা রাজু। দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসাও হয়ে যায়। যখন বড় হৈবতপুরের লোকজন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন আনিছুরের নেতৃত্বে শফিক, তৌহিদ এবং রমজানসহ অন্যরা বড় হৈবতপুরের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। ফলে গুরুতর আহত হন চারজন। পরে বড় হৈবতপুরের লোকজন এগিয়ে এলে আনিছুরের লোকজন চলে যায়। পরে স্থানীয়রা পাপ্পু বাদে অন্যদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসন আমলে আনিছুর মেম্বার যা ইচ্ছে তাই করেছেন। গড়ে তুলেছিলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, হৈবতপুরের মাঠ থেকে সাধারণ মানুষের ফসল তুলে নিযে যাওয়া, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবিসহ নানা ধরণের অপকর্ম সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন হৈবতপুরবাসী। থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। সরকার পতনের পর থেকে আনিছুর চক্র আত্মগোপন করে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আনিছুরের বাহিনী।”
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার মিঠুন কুমার বলেন, “আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় কয়েকটি ক্ষত রয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।”
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি কাজী বাবুল বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।”
যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, “আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদ করায় গ্রামবাসীর ওপর হামলা হয়েছে।”
ঢাকা/রিটন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ আহত র র ল কজন স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রামে মোগল স্থাপত্যরীতির এক মসজিদ
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ইসলামগাঁথী তিন গম্বুজ মসজিদ। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইসলামগাঁথী গ্রামে আত্রাই নদের তীরে অবস্থিত মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। মসজিদের পাশেই আছে কারুকার্যখচিত একটি মঠ। প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাচীন এই স্থাপনা দুটি অনেকটা দৃষ্টির আড়ালে পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে স্থাপনা দুটি।
পুরোনো এই মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। মসজিদটি ঠিক কত সালে বা কে নির্মাণ করেছিলেন, এ সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নওগাঁ জেলা তথ্য বাতায়ন ও আত্রাই উপজেলা তথ্য বাতায়নেও এই মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।
বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, মসজিদ সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে নির্মিত। সুবেদার ইসলাম খানের আমলে (১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সাল) মসজিদটি স্থাপন করা হয় বলে ধারণা পাওয়া যায়। মসজিদের পাশে অবস্থিত মঠটিও একই সময়ে নির্মাণ করা হয়। লোকশ্রুতি আছে, এই মসজিদ ও মঠটি এক রাতেই জিনেরা নির্মাণ করেন। এ জন্য মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে জিনের মসজিদ নামে পরিচিত।
মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর স্থাপত্যশৈলী মধ্যযুগীয় অন্য সব স্থাপনার মতোই। মসজিদের মূল ভবনটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বায় ১৭ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ৪ হাত। ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি মসজিদের দেয়াল প্রায় এক ফুট পুরু। মসজিদের সম্মুখভাগে আছে একটি দরজা। ছাদের ওপর একই সারিতে আছে তিনটি গম্বুজ। তিনটি গম্বুজের আকৃতি একই সমান। দুই কাতারে মসজিদটিতে একসঙ্গে ১৬ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। পরে ১৯৮০ সালের দিকে মসজিদের পূর্ব দিকে নতুন আরেকটি মসজিদ ভবন তৈরি করেন স্থানীয়রা। নতুন এই মসজিদে শতাধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
ইসলামগাঁথী গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আমার তো দূরের কথা, আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এই মসজিদ ও মঠ কবেকার।’
১০ বছরের বেশি সময় মসজিদটিতে ইমামতি করেন আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এখানে নামাজ আদায় করেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও আত্রাই কলকাকলী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘শুনতেছি মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য নাকি মসজিদ ও মঠ ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ মসজিদ ও মঠ ভেঙে না ফেলে বরং এই স্থাপনা দুটি সংরক্ষণে প্রশাসনের ভূমিকা নেওয়া উচিত। যেহেতু ইসলামে মসজিদ স্থানান্তরের বিধান আছে, তাই প্রয়োজনে অন্যত্র নতুন করে মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে।’