সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দেশের সর্ববহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরই এই ব্যাংকটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে। এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে ঋণের নামে ব্যাংকটি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়। একটা পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকের তালিকায় চলে আসে এক সময়ের শক্তিশালী এই ইসলামী ব্যাংকের নামও।

আর ঋণের নামে জালিয়াতি করে নেয়া টাকা উত্তোলনেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি এস আলমের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনাস এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্স। এসব প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে অস্বাভাবিক বিধিবহির্ভূতভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। আর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এসব হিসাবসমূহ হতে প্রায় ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়।

এছাড়া, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট ডেবিট করে এস আলম গ্রুপকে নগদ টাকা প্রদান ও এস আলম গ্রুপ পরিচালিত হিসাব হতে ইন্টার ব্যাংক ক্রেডিট এডভান্স (আইবিসিএ) এর মাধ্যমে প্রেরিত টাকা নিয়ে গুলশান সার্কেল-১ শাখায় প্রয়োজনীয় দলিলাদি, হিসাব গ্রহীতার স্বাক্ষর, হিসাব খোলার ফরম ব্যতীত বেনামে চারটি মুদারাবা ট্রার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (এমটিডিআর) খুলে নগদায়ন করা হয়েছে। আর এটা হয়েছে সরাসরি ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলার নির্দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। আর এসব সন্দেহজনক লেনদেন হলেও ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসটিআর হিসেবে দেখিয়ে কোনো রিপোর্ট দেয়া হয়নি। আর এসব লেনদেন পরিচালিত হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন ও আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে। হুন্ডির মাধ্যমে এসব টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০/০৪/২০২৪ তারিখে ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন এবং রেইনবো করপোরেশন এর হিসাব ডেবিট করে গুলশান সার্কেল-১ শাখার উপর শামীমা আকতার রিমি, পেশা। গৃহিনী, আয়েশা আকতার, পেশা। গৃহিনী, মিজানুর রহমান, পেশা: ছাত্র এবং সৈয়দ মারুফ উর রহমান, পেশা: ছাত্র, এর নামে প্রতিটি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে সর্বমোট ১০ কোটি টাকার ৪টি আইবিসিএ নং ২৯১০৬২৪০০২২০৪৩৬, ২৯১০৬২৪০০২২০৪৫০, ২৯১০৬২৪০০২২০৪৪০ ও ২৯১০৬২৪০০২২০৪৪৪ ইস্যু করা হয় এবং একই তারিখে গুলশান সার্কেল-১ শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক এ এস এম নাসির উদ্দিন (ফাহিম) এর নির্দেশে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ হিসাবগ্রহীতাদের স্বশরীর উপস্থিতি/ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্মুখে স্বাক্ষর প্রদান, হিসাব খোলার আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি ব্যতীত শুধুমাত্র এনআইডি এর তথ্যের ভিত্তিতে এবং শাখার জুনিয়র অফিসার বোরহান উদ্দিন এর মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে আইবিসিএ তে উল্লিখিত উপরিউক্ত ৪ জনের প্রত্যেকের নামে ২ কোটি ৫০ লাখ প্রতিটি টাকা করে, (প্রতিটি ৫০.

০০ লক্ষ টাকা করে ৫টি) সর্বমোট ১০.০০ কোটি টাকার ২০টি এমটিডিআর হিসাব খোলা হয়। তাছাড়া, আইবিসিএ সমূহে গ্রহীতার স্বাক্ষর পরিলক্ষিত হয়নি অর্থাৎ আইবিসিএ এর টাকা কে গ্রহণ করেছে তা স্পষ্ট নয়। শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার প্রদানকৃত তথ্য মোতাবেক তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক ফাহিম এর নির্দেশে হিসাবসমূহ খোলার পর শাখার জুনিয়র অফিসার বোরহান উদ্দিন এমটিডিআর ব্লকসহ হিসাব খোলার ব্লাঙ্ক ফরম ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর প্রিন্সিপাল অফিসার এস, এম, জামাল উদ্দীন (রাসেল) এর নিকট হস্তান্তর করলে তিনি এমটিডিআর ব্লকসমূহে রিসিভ স্বাক্ষর করে তা গ্রহণ করেন এবং তথায় উপস্থিত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এর তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন এর কাছে হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হিসাবসমূহের মধ্যে শামীমা আকতার রিমির নামে থাকা ২টি এমটিডিআর ২০/১০/২০২৪ তারিখে এবং ৩টি এমটিডিআর ২৭/১০/২০২৪ তারিখে নগদায়ন করে তার অর্থ যথাক্রমে বিল্ডিং টেকনোলজি এন্ড আইডিয়া লি. এর নামে ১ কোটি ০১ লাখ টাকার এবং হোসাইন এন্ড ব্রাদার্স এর নামে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। ব্যাংকটির বর্তমান সক্ষমতায়/পরিস্থিতিতে ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার এমটিডিআর নগদায়ন করার বিষয়টি সন্দেহজনক। এ বিষয়ে গুলশান সার্কেল-১ শাখা হতে জানা যায় যে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা শাখার জিবি ইনচার্জ এবং শাখা ব্যবস্থাপক-কে টেলিফোন করে উপরিউক্ত এমটিডিআর সমূহ নগদায়ন করার এবং হিসাব গ্রহীতার প্রতিনিধির কাছে পে-অর্ডার প্রদান করার নির্দেশ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, এমটিডিআর সমূহ নগদায়ন করার সময়ও হিসাগ্রহীতা স্বশরীরে শাখায় উপস্থিত ছিলেন না/ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্মুখে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে শাখায় জনৈক আবুল কালাম এর নামে অথোরাইজড লেটার প্রেরণ করেন।

এমটিডিআর সংক্রান্ত নথি যথা এনআইডি, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় উপরিউক্ত ৪ জন হিসাব্যগ্রহীতা শামীমা আকতার রিমি, আয়েশা আকতার ও মিজানুর রহমান এর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ঈদগাঁও, কক্সবাজার এবং সৈয়দ মারুফ উর রহমান এর ঠিকানা কক্সবাজার সদর অর্থাৎ সবাই একই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তা সত্ত্বেও এস আলম গ্রুপের হিসাব হতে প্রেরিত টাকা দিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে গুলশান সার্কেল-১ শাখায় ১০ কোটি টাকার এমটিডিআর করার বিষয়টি সন্দেহজনক। তাছাড়া, আইবিসিএ সমূহে গ্রহীতার স্বাক্ষর না থাকা, এমটিডিআর হিসাব খোলার সময় এবং এমটিডিআর নগদায়নের সময় হিসাবধারীর স্বশরীর উপস্থিতি না থাকা কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সম্মুখে হিসাবধারীর স্বাক্ষর গ্রহণ না করা, হিসাব খোলার সমায় ব্যাংক কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার, এমটিডিআর ব্লকসমূহ আকিজ উদ্দিন এর কাছে হস্তান্তর ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্ঠভাবে প্রমান করে যে হিসাবসমূহ বেনামে খোলা হয়েছে। ব্যাংকিং রীতি-নীতি পরিপালন না করে বেনামে খোলা এরূপ এমটিডিআর হিসাব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে নগদায়ন করা হয়েছে যা আমানতকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এবং তা ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ১৮(৭) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রাপ্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনিরুল মওলার মোবাইলে নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এম জি

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: এস আলম গ র প হ স বসম হ মন র ল ম আর হ স ব তৎক ল ন র রহম ন উপস থ ত আইব স এ ব যবস থ পর চ ল ন কর র এর ন ম আকত র ইসল ম গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

সদর উপজেলায় গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গ্রাম আদালত কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে দ্বি-মাসিক সমন্বয় সভা ও গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, উপ পরিচালক (উপসচিব), স্থানীয় সরকার, নারায়ণগঞ্জ। সভায় সভাপতিত্ব করেন, রদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ