ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক বুয়েট ভিসিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 11th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। গত রোববার বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী আল আরাফাত হোসেন এ মামলা করেন।
ঘটনার সময় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, হাসান সরোয়ার সৈকত, মিনহাজুল ইসলাম, নীলাদ্রি নিলয়, আকাশ দেবনাথ, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, রাউফুন রাজন ঝলক, রাফাত ইমতিয়াজ চৌধুরী, মেহেদি হাসান রবিন, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, জিয়া উদ্দিন রুবেল, অর্নব চক্রবর্তী সৌমিক, মেহেদি হাসান, সত্য প্রসাদ মজুমদারসহ ১০-১৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ছাত্র কল্যাণ পরিচালক সত্য প্রসাদ মজুমদার পরবর্তীতে দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন আর বুয়েট ছাত্রলীগের সেমসয়কার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল বর্তমানে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত।
এজাহারে বলা হয়েছে, বুয়েট ক্যাম্পাসের জিমনেসিয়ামের পেছনে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বিকেলে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কথা বলে বেধড়ক মারধর করেন মেহেদী হাসান রাসেলসহ ২০ থেকে ২৫ জন। এ সময় আল আরাফাত হোসেন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরলে আবার পেটাতে শুরু করে আসামিরা। এসময় মারধরকারীরা আল আরাফাত হোসেনকে এও বলেন, 'আর সময় পাবি না, কালিমা পড়ে নে।' পরেরবার জ্ঞান ফিরে আল আরাফাত নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ট্রেচারে শোয়া অবস্থায় দেখতে পান।
এজাহারে বলা হয়, রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজে একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পড়া সহপাঠী হাসান সরোয়ার সৈকত সেদিন আল আরাফাত হোসেনকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটান আর বলতে থাকেন, ‘তুই শিবির করতি, তুই শিবিরের মেসে থাকতি।’
মারধরের আগে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড.
ঘটনার সময় আল আরাফাত হোসেনের জুনিয়র আলি আম্মার মুয়াজ (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৬ ব্যাচ) এবং মুহাম্মাদ শামসুজ্জামান (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৬) প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলেও জানা গেছে।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. স্বপন মিয়া মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মুনসুরের কাছে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, বুয়েটে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
খুলনা জেলা কারাগারে বন্দী আওয়ামী লীগের এক নেতা মারা গেছেন। আজ রোববার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আক্তার শিকদার খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগে গত ৪ নভেম্বর তেরখাদা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার আসামি ছিলেন তিনি। আক্তার শিকদার গত ২৭ জানুয়ারি খুলনার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে খুলনা কারাগারে ছিলেন আক্তার শিকদার। আক্তার শিকদার দুপুরের দিকে মারা গেলেও ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে রাত সাড়ে আটটার পর।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মো. আবু সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা দেড়টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আক্তার শিকদার। এরপর তাঁকে প্রথমে কারাগারের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলার আরও বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকের কারণে আক্তার শিকদার মারা গেছেন। লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। আগামীকাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে আক্তার শিকদারের লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
আক্তার শিকদারের চাচাতো ভাই মিলন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তেরখাদা থানায় হওয়া একটি মামলায় আক্তার শিকদারসহ আরও ১০-১৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে খুলনার কারাগারে ছিলেন আক্তার শিকদার।
মিলন শিকদার আরও বলেন, আক্তার শিকদারের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে ঘটনা শোনার পর তিনি খুলনার উদ্দেশে রওনা হন।
তেরখাদা থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের মোকামপুর বাজার খেয়াঘাট এলাকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালের গাড়িবহরে হামলা করা হয়। ওই ঘটনায় গত বছরের ৪ নভেম্বর রাতে উপজেলা বিএনপির সদস্য আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।
তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, কারাগারে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি এই মামলার আসামি ছিলেন। এই মামলায় জামিনের আবেদন করে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন।