বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানকে এই বছরের শুরুতে তার বাড়িতে চুরি করতে আসা এক অনুপ্রবেশকারী ছয়বার ছুরিকাঘাত করেছিল। সুস্থ হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে অভিনেতা পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন- কীভাবে এটি ঘটেছিল, তার পরিবার কীভাবে এটি মোকাবিলা করেছিল, হাসপাতালে কী ঘটেছিল, এবং তারপর কী হলো।

জনপ্রিয় বলিউড তারকা সাইফ বোম্বে টাইমসকে বলেন, পুরো ঘটনাটি একটি বলিউড সিনেমার দৃশ্যের মতো লাগছিল, শুধু পার্থক্য হলো, এখানে তিনি আহত হয়েছিলেন এবং বড় অস্ত্রোপচারের জন্য যেতে হয়েছিল।

কীভাবে অনুপ্রবেশকারী তাকে আক্রমণ করেছিল প্রশ্নের জবাবে সাইফ জানান, তিনি ও কারিনা ঘুমিয়ে ছিলেন তখন তাদের এক গৃহপরিচারিকা ছুটে এসে জানান যে একজন অনুপ্রবেশকারী জেহ'র (সাইফ-কারিনার ছোট ছেলে) ঘরে দাঁড়িয়ে আছে। 

অভিনেতা জানান, তিনি দ্রুত জেহ'র ঘরে যান, সেখানে দুই হাতে ছুরি ধরা এক ব্যক্তিকে দেখতে পান এবং তাকে ধরতে দৌড় দেন। সে দুই হাতে একটি করে ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং মুখে মাস্ক ছিল। এটি ছিল অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য। আমি কিছু না ভেবেই তাকে ধরে ফেলি। আমি ছুটে গিয়ে তাকে নিচে ফেলে দিই, এবং তারপর আমরা লড়াই করতে থাকি। সে আমার পিঠে যত জোরে পারছিল আঘাত করছিল, আর আমি শুধু থাপ্পরের শব্দ শুনছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এটি।

কারিনা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন জানতে চাইলে সাইফ জানান, যখন তিনি অনুপ্রবেশকারীর সঙ্গে লড়াই করছিলেন, তখন কারিনা দ্রুত জেহকে ঘর থেকে বের করে এনে তৈমুরের ঘরে নিয়ে যান। তিনি তখনও বুঝতে পারেননি যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন যে, আমাদের গৃহপরিচারিকা গীতা এসে আমাকে সাহায্য করেন এবং অনুপ্রবেশকারীকে তার কাছ থেকে সরিয়ে দেন।। আমরা তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিই। তখন আমি পুরো রক্তে ভেসে যাচ্ছিলাম, আর আমার ডান পায়ে অনুভূতি হারাচ্ছিলাম।

আঘাতের ব্যাপারে সাইফ জানান, তখনই তিনি বুঝতে পারেন তার ঘাড়, তালু, কব্জি ও হাতে ছুরির আঘাত লেগেছে। তিনি আরও জানান, আমার তালু, কব্জি ও হাতে কেটে যাওয়ার দাগ ছিল। পুরো ব্যাপারটাই ছিল প্রচণ্ড সহিংস। 

তৈমুর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন প্রশ্নে সাইফ বলেন, সাত বছর বয়সী তৈমুর পরিস্থিতি বোঝার মতো বড় হয়েছে এবং সে তার বাবার পাশে থাকতে চেয়েছিল। সাইফ বলেন, গীতা অনুপ্রবেশকারীকে জেহ'র ঘরে আটকানোর চেষ্টা করলেও সে পালিয়ে যায়। গীতা বাইরে থেকে দরজা আটকে রেখেছিল তাই আমরা ভেবেছিলাম সে ঘরের ভেতর আটকে আছে। কিন্তু সে সেখান থেকেও পালিয়ে যায়, যেমনভাবে এসেছিল ড্রেন পাইপ বেয়ে উঠে বাচ্চাদের বাথরুম দিয়ে ঢুকে ছিল। 

সাইফ বলেন, আমি যখন রক্তে মাখামাখি ছিলাম, আর আমরা হাতে দুটি ডেকোরেটিভ তরবারি ছিল তখন তৈমুর আমাকে দেখতে পায়। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি মারা যাবে?’ আমি বললাম, ‘না।’

হাসপাতালে যাওয়া এবং চিকিৎসা বিষয়ে বলতে গিয়ে সাইফ বলেন, কারিনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য ডাকছিলেন, এবং একটি অটোরিকশা থামলে তারা লীলাবতী হাসপাতালে যান। অটোচালক বিশেষভাবে রাস্তার গর্ত এড়িয়ে গাড়ি চালান।

আমার স্ত্রী তৈমুরকে পাঠিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে তার উপস্থিতি আমাকে মানসিকভাবে শক্তি দেবে। হয়তো তখন সেটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমি তাতে স্বস্তি পেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, যদি খারাপ কিছু হয়, তবে আমি চাইবো সে আমার পাশে থাকুক। এবং সেও থাকতে চেয়েছিল। তাই আমরা আমি, তৈমুর আর হরি রিকশায় করে হাসপাতালে গেলাম।

সাইফ আরও বলেন, তিনি রক্তমাখা অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পরও হাঁটতে পারছিলেন, যা ডাক্তারদের জন্য বিস্ময়কর ছিল। ওখানে একজন ডাক্তার ছিল, যিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালের প্রধানও আসেন। আমি বাথরুমে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা ক্যাথেটার দিতে চেয়েছিল। আমি বললাম, ‘না, আমি নিজে যাব।’ তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না যে আমি হাঁটতে পারছি, কারণ তখনই তারা আমার পিঠ পরীক্ষা করে দেখেছিল।

ডাক্তাররা একটি এমআরআই করার পর জানান, ছুরিটি সাইফের কাঁধের হাড়ের পেছন দিয়ে ঢুকে তার মেরুদণ্ডের খুব কাছাকাছি চলে গেছে। 

সাইফ জানান, তারা (ডাক্তার) জানিয়েছিল, ছুরি তিন-চার ইঞ্চি ঢুকেছিল, আর এটি মেরুদণ্ডের আস্তরণের খুব কাছ দিয়ে গিয়েছে। মেরুদণ্ডের তরল বের হচ্ছিল, আর এটাই আমার পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণ ছিল। মাত্র এক মিলিমিটার আর ভেতরে গেলে আমি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতে পারতাম। আর সার্জারি ছয় ঘণ্টা ধরে চলে।

মা শর্মিলা ঠাকুর কী বললেন প্রশ্নে সাইফ জানান, কারিনা খুব সাহসী ছিলেন এবং ছেলেদের যত্ন নিচ্ছিলেন। তার মা শর্মিলা ঠাকুর তাকে বলেন যে, তিনি তার সন্তানদের রক্ষা করার জন্য যা করেছেন, সেটাই তিনিও করতেন। জেহ আমাকে একটি প্লাস্টিকের তরবারি দিয়েছে এবং বলেছে, ‘এটি তোমার বিছানার পাশে রাখো, পরের বার যখন চোর আসবে তখন ব্যবহার করবে।’ সে বলে, ‘গীতা আব্বাকে বাঁচিয়েছে, আর আব্বা আমাকে।’

যারা ঘটনাটিকে ভুয়া বলেছে তাদের উদ্দেশে সাইফ বলেন, বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া থাকবেই, আর এটি স্বাভাবিক। কেউ বিশ্বাস করবে, কেউ মজা করবে। এটাই জীবনকে রঙিন করে তোলে। যদি সবাই শুধু সহানুভূতি প্রকাশ করত, তাহলে জীবন অনেক একঘেয়ে হয়ে যেত। আমি জানতাম এমন কিছু প্রতিক্রিয়া আসবে, তাই এতে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার দরকার নেই। রিকশাচালক থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মচারী পর্যন্ত সবাই যেন দেবদূতের মতো ছিল। এই দুনিয়ায় অনেক দয়া আছে, আবার অনেক বোকামিও আছে। তবে এটিই জীবনকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

সাইফ এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন এবং কিছু পেশাগত দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি তার নতুন সিনেমা "Jewel Thief"-এর লঞ্চ ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং মামলার তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ল আম র প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বেরোবিতে রাবি ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া একই শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আঞ্চলিক পাঁচটি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বেরোবিসহ রংপুর অঞ্চলের দুইটি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৯৩২ জন এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। দুই কেন্দ্রে মোট উপস্থিত পরীক্ষার্থীর হার ৮৮.৩১ শতাংশ।

এছাড়া বিকেলে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কৃষি গুচ্ছভুক্ত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা রংপুর অঞ্চলের তিনটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৮২ জন, দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৩৮ জন এবং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫৪৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তিন কেন্দ্রে মোট উপস্থিত পরীক্ষার্থীর হার ৯৬.১৮ শতাংশ।

বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. শওকাত আলী পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা প্রথমবারের মতো বেরোবি কেন্দ্রে উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রংপুরসহ সমগ্র উত্তর অঞ্চলের পরীক্ষার্থীরা বেরোবিতে পরীক্ষা দিতে পারায় তাদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আগত অভিভাবকবৃন্দের জন্য প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধান ফটকের পাশে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পরিদর্শন চলাকালে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ প্রামানিক, প্রক্টর মো. ফেরদৌস রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. তানজিউল ইসলাম, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের গ্রন্থাগারিক মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিল্পকলায় প্রথমবার চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজনে ব্যান্ড শো
  • বেরোবিতে রাবি ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
  • প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়া গেলেন গবির ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
  • ৬৪ বছর বয়সে অভিষেক, ইতিহাস গড়লেন জোয়ানা চাইল্ড
  • আজ ঢাকায় গাইবেন ‘কালাবাজ দিল’ গায়িকা আইমা বেগ