টুইটারের (বর্তমানে এক্স) পর এবার ওপেনএআইয়ের ওপর চোখ পড়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেওয়া ওপেনএআইয়ের দখল নিতে ইলন মাস্ক বড় দর হাঁকিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ওপেনএআই কেনার জন্য দর হাঁকিয়েছেন ইলনের নেতৃত্বাধীন একদল বিনিয়োগকারী। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ৯ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ওপেনএআই কিনে নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রস্তাব দিয়েছেন ইলন মাস্কের নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারী। যদিও মাস্কের নেতৃত্বাধীন বিনিয়োগকারীদের এই প্রস্তাব যে তারা মেনে নিচ্ছে না, ওপেনএআই ঠারেঠোরে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। বরং উল্টো কাজ করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। মাস্কের হাতে থাকা টুইটার (বর্তমানে এক্স) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

ইলন ও অল্টম্যান উভয়েই ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। পরে কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়ান ইলন মাস্ক, কিন্তু অল্টম্যান থেকে যান। তাঁর হাত ধরেই আসে চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই প্রাথমিকভাবে অলাভজনক সংস্থা হিসেবে চালু হলেও চ্যাটজিপিটির সাফল্যের পর ওপেনএআইকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার চেষ্টা করছেন অল্টম্যান।

বাস্তবতা হলো, চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর বিশ্বের বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মাথা ঘুরে গেছে। সবাই বুঝে গেছে, ভবিষ্যৎ এআইয়ের হাতে। গুগল এই দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। ওপেনএআইতে বিনিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট। এই বাস্তবতায় ইলন মাস্কও এআই খাতে আসতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোম্পানি ‘এক্সএআই’ চালু করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর চোখ ওপেনএআইয়ের ওপর; সে জন্য বোধ হয় প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন স্যাম অল্টম্যানের নেতৃত্বের। এবার তো সরাসরি ওপেনএআই দখলে আনার চেষ্টা করছেন তিনি।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই ইলনের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। লিখেছেন, ধন্যবাদ। তবে তিনি যেটা মনে করছেন সেটা হচ্ছে না; বরং তিনি চাইলে ওপেন এআই ৯ হাজার ৭৪ কোটি ডলারে টুইটার কিনব।’ অর্থাৎ বিষয়টি স্পষ্ট, ওপেনএআই হাতছাড়া করতে রাজি নন অল্টম্যান। জবাবে টুইটার কেনার বিষয়ে অল্টম্যানের কৌতুক অবশ্য ভালোভাবে নেননি ইলন। অল্টম্যানের পোস্টের জবাবে ইলন শুধু লিখেছেন, ‘প্রতারক’।

এ প্রসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ইলন মাস্কের এক আইনজীবী বলেছেন, আগের মতো ওপেন সোর্স ও সুরক্ষা প্রদানকারী কোম্পানি হিসেবে আসার সময় হয়েছে ওপেনএআইয়ের; এটা নিশ্চিত করা হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে ইলন মাস্ক অবশ্য নৃশংস হিসেবে পরিচিত এই অর্থে যে তিনি যা করতে চান, তা করে ছাড়েন। টুইটার কেনার ঘটনার মধ্য দিয়ে তা বোঝা যায়। শুরুতে টুইটারের মালিক বিক্রি করতে রাজি না হলেও শেষমেশ ৪৪ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে মাস্কের কাছে তা বিক্রি করে দেন মালিক। এবার দেখা যাক, ওপেনএআই কেনায় মাস্ক কত দূর যেতে পারেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক ট ইট র ন ইলন

এছাড়াও পড়ুন:

কিডনি রোগির চিকিৎসার কী হবে

১৩ মার্চ ২০২৫ সমগ্র বিশ্বে কিডনি দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কিডনি সমিতি ও আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে দিবসটি পালন করে যাচ্ছে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে,‘আপনার কিডনি কি সুস্থ? দ্রুত শনাক্তকরণ ও কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন’। পৃথিবীর ১৬৫টি দেশ দিবসটি পালন করে থাকে।

সারা পৃথিবীতে রোগটি ছড়িয়ে ক্রমেই বাড়ছে। যেহেতু প্রাথামিক পর্যায়ে রোগটির কোনো উপসর্গ হয় না, ফলে এটা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। আর যখন প্রকাশ পায়, তখন দেখা যায় যে ৮০-৯০ শতাংশ আক্রান্তদের দুটি কিডনিই অচল হয়ে গেছে। বর্তমানে রোগটি সপ্তম মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং অচিরেই তা পঞ্চম মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা দেবে।

বাংলাদেশে ২০১০ সালে কিডনির রোগ ছিল ২ কোটি এবং ২০২৩ সালে রোগটি বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ। ফলে এখনো সময় আছে এটা প্রতিরোধ করার।

কিডনি রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। বর্তমানে নেফ্রাইটিসের চিকিৎসায় ওষুধের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, ফলে রোগটি আর বাড়ছে না; কিন্তু ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে ডায়াবেটিস ছিল ৬ শতাংশ, বর্তমানে তা হয়েছে ১২ শতাংশ আর উচ্চ রক্তচাপ ছিল ১০ শতাংশ, বর্তমানে তা হয়েছে ২৩ শতাংশের ওপরে।

দুর্ভাগ্যবশত, ৫০-৬০ শতাংশ রোগী জানেনই না যে তাঁর ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ফলে এঁরা কখনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না এবং যখন টের পান, তখন দেখা যায় যে ডায়াবেটিস থেকে তাঁর কিডনি আক্রান্ত হতে শুরু করেছে এবং একই অবস্থা হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে।

আবার যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। ফলে ক্রমে ১৫-২০ বছরের মধ্যে কিডনি আক্রান্ত হয়ে অকেজো হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে তাঁদেরও ২০-২৫ বছরে কিডনি আক্রান্ত হয়।

উন্নত বিশ্বে প্রতি ৫০ হাজারে রয়েছেন একজন কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ আর আমাদের দেশে আছেন ৪ লাখে একজন। সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো বাজেট বরাদ্দ করে না। স্বাস্থ্যসেবা করার জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্সের বিকল্প নেই

এ ছাড়া গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ১০০ রোগীর মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের ডায়াবেটিস ও ৩০ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৭০-৮০ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস যেমন নিয়ন্ত্রণে নেই, তেমনি উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার যাঁদের ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাঁদেরও আবার অনেকে রক্তচাপের বা ডায়াবেটিসের ওষুধ বন্ধ করে দেন। ফলে এঁরা কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

কিডনি অকেজো রোগীর চিকিৎসা বর্তমানে ১৭০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে।

সমগ্র বাংলাদেশে ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানে ডায়ালাইসিস করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০ শতাংশ সুবিধা রয়েছে, ৩২ জেলায় কোনো সুবিধা নেই, যা জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ। ৭টি জেলায় মাত্র ১টিতে ডায়ালাইসিসের সুযোগ রয়েছে এবং ৮টিতে ২টি জায়গায় সুযোগ রয়েছে। রাজধানী ঢাকার রয়েছে ৫০ শতাংশ সুযোগ, যেখানে সমগ্র বাংলাদেশের মাত্র ৮ শতাংশ লোক বাস করেন। ঘরে বসে সিএপিডি করার সুবিধা আছে মাত্র ১০টি।

ঠিক তেমনি কিডনি সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে মাত্র ১০টি। বর্তমানে তা কমে মাত্র ৪টি সেন্টারে এ সুযোগ রয়েছে, অথচ কিডনি অকেজো রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা কিডনি সংযোজন, দ্বিতীয় হচ্ছে সিএপিডি ডায়ালাইসিস আর সর্বনিম্ন চিকিৎসা হচ্ছে হিমোডায়ালাইসিস। সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে কোন পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করব।

একজন হিমোডায়ালাইসিস রোগী গড়ে বেঁচে থাকেন মাত্র ৪-৫ বছর, অথচ একজন সিএপিডি রোগী বাঁচেন ৫-৬ বছর আর একজন কিডনি সংযোজন রোগী বাঁচেন ১০ থেকে ৩০ বছর।

আমরা যদি হিমোডায়ালাইসিসের কথা চিন্তা করি, তবে এই ডায়ালাইসিসের খরচ হবে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা আর সিএপিডির জন্য খরচ হবে ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, কিডনি সংযোজন খরচ হবে মাত্র ৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। জীবনযাত্রার মধ্যে সবচেয়ে সফল চিকিৎসা কিডনি সংযোজন, তারপর সিএপিডি এবং সর্বনিম্ন হিমোডায়ালাইসিস। কিন্তু সিএপিডি ও কিডনি সংযোজন নেই বললেই চলে।
বর্তমানে প্রতিবছর ৪০-৪৫ হাজার রোগীর বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন প্রায়োজন হয়। সুতরাং সুযোগের অভাবে আবার অনেকেই ডায়ালাইসিস করতে সমর্থ হন না।

সরকারি পর্যায়ে মাত্র বিভাগীয় শহরে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে। যেখানে খরচ কম। বাকি ৯০ শতাংশ বেসরকারি পর্যায়ে এবং কিছু অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খরচ একেক ধরনের, বেশির ভাগ রোগীর সামর্থ্যের বাইরে। একটি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে একটি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে সরকারি ও অলাভজনক হাসপাতালে রোগীর ভিড় অত্যন্ত বেশি। এরপরও রয়েছে ওষুধ ক্রয়ের খরচ। ফলে প্রত্যেক রোগীর অতিরিক্ত খরচ অনেক বেশি; অর্থাৎ আউট অব পকেট খরচ ৬৫-৭৫ শতাংশ।  

কিডনি রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রায়োজন হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও ডায়েটিশিয়ান। বর্তমানে কিডনি রোগবিশেষজ্ঞও রয়েছেন মাত্র ৪৫০ জন, নার্স রয়েছেন ৪ হাজার-৫ হাজার এবং ডায়ালাইসিস ইঞ্জিনিয়ার ৫০-৬০ জন। কিডনি সংযোজন করার জন্য ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ২০-২৫ জন। প্রতিবছর ১০-১২ জন নেফ্রোলজিস্ট এবং আর ১০-১২ জন ইউরোলজিস্ট তৈরি হন, যা ১৮ কোটি মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। প্রতি ৪৪ হাজার কিডনির রোগীর জন্য মাত্র একজন নেফ্রোলজিস্ট আছেন।

উন্নত বিশ্বে প্রতি ৫০ হাজারে রয়েছেন একজন কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ আর আমাদের দেশে আছেন ৪ লাখে একজন। সরকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি চায়, কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো বাজেট বরাদ্দ করে না। স্বাস্থ্যসেবা করার জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্সের বিকল্প নেই।
 
ডা. হারুন আর রশিদ কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিডনি রোগির চিকিৎসার কী হবে
  • ডিমেনশিয়া রোগের আগাম সতর্কবার্তা দেবে এআই
  • পিএইচডি স্তরের এআই এজেন্ট কী, কতটা বাস্তবসম্মত