কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুল হত্যা: ৪ আসামির পরিবারের সংবাদ সম্মেলন, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে ফাঁসানোর দাবি
Published: 11th, February 2025 GMT
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় বেসামরিক ছয়জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছে তাঁর পরিবার। আসামিদের মধ্যে চারজনের বাবা-মা আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, তাঁদের সন্তানেরা সম্পূর্ণ ‘নির্দোষ।’ সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাঁদের ‘ফাঁসানো’ হয়েছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মোক্তল হোসেন। তিনি তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহারের করা হত্যা মামলার ৩ থেকে ৫ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান, খায়রুল হাসান ও সাইদুল হাসানের বাবা।
সংবাদ সম্মেলনে মোক্তল হোসেনের স্ত্রী পেয়ারা বেগম, মামলার ২ নম্বর আসামি ইটাল্লা গ্রামের তানজিল উদ্দিনের বাবা-মা ফজলুর রহমান ও মরিয়ম বেগম উপস্থিত ছিলেন। এই চার আসামি তৌহিদুলের প্রতিবেশী।
৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহার। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আদর্শ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম। আর ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে উপজেলার বামইল গ্রামের পেয়ার আহমেদের ছেলে সোহেলকে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিরা সিভিল পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। মামলার পর সাত দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মোক্তল হোসেন বলেন, ৩১ জানুয়ারি যৌথ বাহিনী গুরুতর আহত অবস্থায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তৌহিদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন তৌহিদুলের মরদেহের বিভিন্ন স্থানে অমানবিক নির্যাতন ও জখমের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন থাকায় পরবর্তী সময়ে আইএসপিআরের বিবৃতিতে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা, তৌহিদুলের পরিবারের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেওয়া এবং তৌহিদুলের পরিবারটিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যৌথ বাহিনী বা সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট এ মর্মান্তিক ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনকভাবে তৌহিদুলকে হত্যার অভিযোগে বেসামরিক লোকজন; অর্থাৎ তাঁদের সন্তানদের আসামি করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে তৌহিদুলের পরিবারের জায়গা-সংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে, যা সমাধানযোগ্য। কিন্তু এর জেরে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেওয়া কিংবা বেসামরিক লোক হয়ে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গিয়ে অভিযান চালানো এবং তৌহিদুলকে তুলে নিয়ে নির্যাতনে হত্যার মতো নির্মম ঘটনা সংঘটিত করার মতো ভিত্তিহীন অভিযোগ করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা কতটুকু যৌক্তিক, প্রশ্ন তোলা হয়। পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে সেনা ক্যাম্পে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলেও জানানো হয়।
মোক্তল হোসেন বলেন, ‘আমরা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছি, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমরা যেকোনো শাস্তি মেনে নেব। আমরা মনে করি, তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনাটি কারা বা কী কারণে সংঘটিত হয়েছে, তা ঘটনার পর সুস্পষ্টভাবে তাঁর পরিবারের বক্তব্য, যৌথ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে ইতিমধ্যে অনেকটাই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের সন্তানদের এ মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বর্তমানে আমরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ও হয়রানির শিকার হয়ে বাড়ি-এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা চাই, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিরপরাধ বেসামরিক ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া হোক এবং প্রকৃত জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার মূল হোতা মামলার ২ নম্বর আসামি তানজিল উদ্দিন। তানজিলই ঘটনার সময় মামলার প্রধান আসামি ও তাঁদের আত্মীয় সাইফুল ইসলামকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাঠিয়েছেন। সাইফুলকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে শত শত মানুষ দেখেছেন। তাঁকে আর তানজিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, আসামিরা এলাকা থেকে পলাতক। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কে জড়িত আর কে জড়িত নয়, সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
নিহত তৌহিদুল আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক এবং ওই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বাবার কুলখানি আয়োজনের প্রস্তুতি চলাকালে তৌহিদুলকে বাড়ি থেকে তুলে নেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ জানায়, ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশকে তৌহিদুলকে নিতে বলা হয়। পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় তৌহিদুল অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র ঘটন র স উপজ ল র ল ইসল ম ল র পর তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলা ১৪৩২ বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দল-মত ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বর্ষবরণ সফল করতে বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহে সকাল ৮ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া প্রাঙ্গণ থেকে আরেকটি বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা দুটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মাহবুবুর রহমানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি শেষে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বেলুন উড়িয়ে শুভ নববর্ষের ঘোষণা করেন। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পদযাত্রা ও নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপস্থিত ক্লাব সদস্যদেরকে বিনামূল্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিকেলে সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলা, রশি টানাটানি ও হা-ডু-ডু প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হবে।