শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া বিএনপির চার নেতা কারামুক্ত
Published: 11th, February 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পাওয়া চার বিএনপি নেতা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
ওই চারজন হলেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেছুর রহমান (বাবলু) ও সাবেক সভাপতি এ কে এম আখতারুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান (শাহীন) তাঁরা পাঁচ বছর সাত মাস ওই কারাগারের ফাঁসির সেলে বন্দী ছিলেন। ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ৪৭ জন নেতা-কর্মীর সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
চার নেতার মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে আজ সকালে ঈশ্বরদী বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী গাড়িবহর নিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা ফটকে উপস্থিত হন। কারাফটকে তাঁরা ফুলের মালা পরিয়ে তাঁদের বরণ করে নেন। গাড়িগুলোতে কারামুক্ত নেতাদের ছবিযুক্ত ব্যানার লাগানো ছিল। যাঁরা কারাফটকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন, তাঁদের নামও ব্যানারে লেখা ছিল।
কারাগার থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবি, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, যার মাধ্যমে দেশের মানুষ যেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন; যাতে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার কায়েম হয়।’
কারাগারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে যাঁরা বন্দী রয়েছেন, বিশেষ করে আমরা যাঁরা ফাঁসির সেলে পাঁচ বছর সাত মাস ধরে বসবাস করে আসলাম, এত জঘন্য পরিবেশ এই কারাগারে দেখলাম। এই কারাগারের পরিবেশটা ভালো করা উচিত। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, এই কারাগারে মধ্যে যে অচলাবস্থা, যে অব্যবস্থা তার দূর করতে হবে।’
১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়।মুক্তি পাওয়ার পর পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘হাসিনা নিজের ক্ষমতা বলে মিথ্যা ঘটনায় আমাকে পাঁচ বছর আট মাস জেল খাটালেন। অত্যন্ত অমানবিক ও বর্বরোচিত কাজ এটা। জেলের ভেতরে আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। এদিকে বাইরে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কেড়ে নিয়েছে।’
মুক্তি পাওয়া চারজনকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম জঘন্য রায় আর হয়নি। কোনো ধরনের ঘটনা ছাড়াই, কেউ আহত হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, সেই মামলায় ফাঁসি দেওয়া হলো, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
মামলা সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের জন্য দিলে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে নতুন করে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এই মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, আসামিরা আপিল করেন। সেই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ব এনপ র স র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা নদীতে ধরা পড়ল ৮মণ ওজনের শাপলাপাতা মাছ
মেঘনা নদীতে প্রায় ৮ মণ (৩১০ কেজি) ওজনের একটি হাউস মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। অনেকে এ মাছটিকে শাপলাপাতা মাছ এবং পানপাতা মাছ নামে চিনে থাকেন। তবে বিদেশিদের কাছে এটি “রেফিন ফিস/স্টিং ফিস নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার দিকে জেলেরা মাছটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৈদ্যেরবাজার ঘাটে নিয়ে আসলে মাছটি দেখতে উৎসুক জনতা এসে ভিড় করে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮ মন ওজনের মাছটি উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হারিয়া এলাকার জেলে হাবিবুল্লাহ মিয়ার জালে মেঘনা নদীর চাঁদপুর মোহনায় ধরা পড়ে।
মাছটি পিকআপ-ভ্যানে করে সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার-ঘাট এলাকায় মাছবাজারে নিয়ে আসলে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় কিনে রাখার পর মাছটি কেটে ৭ শত টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি।
সোনারগাঁ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, মেঘনা নদীতে প্রায় ৮ মন ওজনের একটি শাপলাপাতা মাছ জেলেদের জালে ধড়া পড়ার কথা শুনেছি। বাজারে মাছটির চাহিদা রয়েছে।
বিরল প্রজাতির এই সামুদ্রিক মাছটিকে স্থানীয়ভাবে হাউস মাছ বলা হলেও এর নাম রেফিন ফিস বা স্টিং ফিস। তবে এটি শাপলাপাতা মাছ নামেই পরিচিত।