পাবনার ঈশ্বরদীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পাওয়া চার বিএনপি নেতা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।

ওই চারজন হলেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেছুর রহমান (বাবলু) ও সাবেক সভাপতি এ কে এম আখতারুজ্জামান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক আজিজুর রহমান (শাহীন) তাঁরা পাঁচ বছর সাত মাস ওই কারাগারের ফাঁসির সেলে বন্দী ছিলেন। ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ৪৭ জন নেতা-কর্মীর সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।

চার নেতার মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে আজ সকালে ঈশ্বরদী বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী গাড়িবহর নিয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা ফটকে উপস্থিত হন। কারাফটকে তাঁরা ফুলের মালা পরিয়ে তাঁদের বরণ করে নেন। গাড়িগুলোতে কারামুক্ত নেতাদের ছবিযুক্ত ব্যানার লাগানো ছিল। যাঁরা কারাফটকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন, তাঁদের নামও ব্যানারে লেখা ছিল।

কারাগার থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবি, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন, যার মাধ্যমে দেশের মানুষ যেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন; যাতে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার কায়েম হয়।’

কারাগারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে যাঁরা বন্দী রয়েছেন, বিশেষ করে আমরা যাঁরা ফাঁসির সেলে পাঁচ বছর সাত মাস ধরে বসবাস করে আসলাম, এত জঘন্য পরিবেশ এই কারাগারে দেখলাম। এই কারাগারের পরিবেশটা ভালো করা উচিত। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, এই কারাগারে মধ্যে যে অচলাবস্থা, যে অব্যবস্থা তার দূর করতে হবে।’

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়।

মুক্তি পাওয়ার পর পৌর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘হাসিনা নিজের ক্ষমতা বলে মিথ্যা ঘটনায় আমাকে পাঁচ বছর আট মাস জেল খাটালেন। অত্যন্ত অমানবিক ও বর্বরোচিত কাজ এটা। জেলের ভেতরে আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। এদিকে বাইরে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কেড়ে নিয়েছে।’

মুক্তি পাওয়া চারজনকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম জঘন্য রায় আর হয়নি। কোনো ধরনের ঘটনা ছাড়াই, কেউ আহত হয়নি, কেউ নিহত হয়নি, সেই মামলায় ফাঁসি দেওয়া হলো, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

মামলা সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের জন্য দিলে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে নতুন করে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের আসামি করা হয়।

২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এই মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, আসামিরা আপিল করেন। সেই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ব এনপ র স র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

কথা বলবেন পুতিন-ট্রাম্প

ইউক্রেন যুদ্ধে সাময়িক বিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে পুরোপুরি সম্মত নন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তাই শিগগিরই দুই পরাশক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলাপচারিতা শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মস্কো গিয়েছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিফ উইটকফ। পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর পুতিন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এর আগে তিনি বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ইউক্রেনের জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ‘ভালো হবে’ এবং ‘আমরা এর পক্ষে।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে কিছু ‘সূক্ষ্মতা’ আছে।

শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে উইটকফের বৈঠক প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, বৈঠকে ‘রাশিয়াকে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হয়েছিল’ এবং ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য নিজস্ব ‘তথ্য ও অতিরিক্ত সংকেত’ দিয়েছিলেন।

তিনি জানান, দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু উইটকফ ফিরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি অবহিত করার পরেই কেবল সময় নির্ধারণে একমত হবেন পুতিন ও ট্রাম্প।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ