ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে মোশাররফ হোসেন (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আহত হয়েছেন ৭ জন।
আহতরা হলেন, হাকিমপুর গ্রামের খাবির মন্ডলের ছেলে নাসির উদ্দীন, হানেফ আলী, আব্দুল খালেক, বিলাত আলীর ছেলে আরব আলী, আব্দুল খালেকের ছেলে রবিণ, আব্দুস সোবাহানের ছেলে কাওছার মন্ডল ও তার ভাই আব্দুল আলীম। এদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় চাঁদপুর ইউনিয়নের মেম্বার আশরাফ উদ্দীন স্বপন জানান, সামাজিক দ্বন্দ্বের জের ধরে সোমবার রাতে বিএনপির দেলোয়ার হোসেন দলু ও সাঈদ সমর্থিত সামাজিক দলের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনার জের ধরে আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হাকিমপুর গ্রামের ব্রিজের উপর দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। আহতদের মধ্যে দলু গ্রুপের ৫ জন ও সাঈদ গ্রুপের দুইজন রয়েছে।
একটি ধর্মীয় সভায় অতিথি করা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হরিণাকুন্ডু থানার ওসি এম এ রউফ খান জানান, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিরোধে মোশাররফ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করা হলে হাসপাতালে তিনি মারা যান। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/শাহরিয়ার/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে হবিগঞ্জে দুজনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, শরীরে আগুন
হবিগঞ্জে ছিনতাই ও মুঠোফোন চুরির অভিযোগে এক তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করছেন কিছু লোক। পরে সেই তরুণের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী তরুণ চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামে। তবে একজন নয়, দুই তরুণের সঙ্গে গত শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণদের একজন আজ বৃহস্পতিবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেছেন।
বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে দুই তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় আজ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামের আবদুল কাইযুমের ছেলে সোহেল মিয়া গত শনিবার পশুর হাটে একটি গরু বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত ৯টার দিকে উপজেলার কটিয়াদি বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নির্জন রাস্তায় কয়েকজন ছিনতাইকারী সোহেলকে ঘিরে ধরে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তখন ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সোহেল উপস্থিত লোকজনের কাছে সহিদুল ইসলাম (২৪) নামের এক তরুণকে দেখিয়ে দাবি করেন, তিনি ছিনতাই জড়িত। এরপর ওই তরুণকে ধরে সিলিমনগরে সোহেলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে সোহেল পাশের বনদক্ষিণ গ্রামের আরেক তরুণ জাহেদ আলীকে (২০) ফোন করে ‘জরুরি কাজ আছে’ বলে বাড়িতে ডেকে আনেন। জাহেদ তাঁর বাড়িতে গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলে গাছে বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন। পরে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী দুই তরুণ বর্তমানে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, জাহেদ আলীর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসাধীন আরেক তরুণ সহিদুলের বাঁ হাতের কিছু অংশ ঝলছে গেছে।
জাহেদ আলী বলেন, তিনি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন। তাঁকে মুঠোফোনে কল করে সোহেল বাড়িতে ডেকে নেন। যাওয়ার পর সোহেল দাবি করেন, তাঁর দুটি মুঠোফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে। চুরির সঙ্গে তিনি জড়িত। পাশাপাশি ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে সোহেল ও তাঁর স্বজনেরা অমানসিক নির্যাতন করেন। পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি যদি জড়িত হতাম, তাহলে সোহেলের ফোনে তাঁদের বাড়িতে যেতাম না। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়।’
ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। ওই দিন রাতে কটিয়াদি বাজারে কাজে গেলে রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে সোহেলের নেতৃত্বে কিছু লোক তাঁকে ধরে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তাঁরা তাঁকে নির্যাতন করে জাহেদ আলীর নাম বলতে বলেন। তিনি নাম না বলায় নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে।
সিলিমনগর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘গত শনিবার রাতে আমরা গ্রামের আবদুল কাইযুমের বাড়িতে দুজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার দৃশ্য দেখেছি। তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও মোবাইল চুরির অভিযোগ করেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল মিয়া বলেন, সহিদুল ও জাহেদ এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তাঁরা চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ওই দিন রাতে আজমিরীগঞ্জে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন সহিদুল ও জাহেদ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আগের দিন তাঁর বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন চুরি হয়। ওই চুরির সঙ্গেও তাঁরাই জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।
বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই অপরাধে তাঁরা জড়িত কি না, তা তদন্তের বিষয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চুরির মামলা আছে বাহুবল থানায়। ওসি বলেন, দুই তরুণকে নির্যাতনের ঘটনায় জাহেদ আলী বাদী হয়ে আজ হবিগঞ্জ আদালতে ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। মামলার পর আমির মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার ৫ নম্বর আসামি।