জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ক‌রে পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য একটি পেশাদারি পরিসংখ্যান সিভিল সার্ভিস গঠনের দাবি জানান।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এক প্রতিবাদলিপিতে এই দা‌বি জানান।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-

• পেশাদার পরিসংখ্যান ব্যবস্থার স্বার্থে বিদ্যমান বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সার্ভিস হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে;

• জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার ও অধিকতর জনমুখী করার লক্ষ্যে পৃথক ‘জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে;

• রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ অপসারণ করে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’-কে পুনর্গঠন করতে হবে।

প্রতিবাদ লি‌পি‌তে বলা হয়, বিদ্যমান সিভিল সার্ভিসগুলো পুনর্বিন্যাস করে বিভিন্ন সার্ভিস ও এর কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হলেও একমাত্র বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসগুলোর প্রস্তাবে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ পেশাভিত্তিক এ ক্যাডার সার্ভিসকে ‘অস্তিত্বহীন’ করার মতো অদূরদর্শী সুপারিশ বলে মনে করে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। এজন্য কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে অ্যাসোসিয়েশন।

এ‌তে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা প্রতিবেদনে বিদ্যমান সিভিল সার্ভিসগুলো পুনর্বিন্যাস করে বিভিন্ন সার্ভিস ও এর কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হলেও একমাত্র বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসগুলোর প্রস্তাবে ‘প্রযোজ্য নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। দাখিল করা সংস্কার প্রস্তাবে ১৯৮০ সালে সৃজিত গুরুত্বপূর্ণ পেশাভিত্তিক এ ক্যাডার সার্ভিসকে ‘অস্তিত্বহীন’ করার মতো অদূরদর্শী সুপারিশ আমাদের অত্যন্ত বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে।

সব বৈষম্য নিরসন ও গতিশীল জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টা এবং ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে এ সুপারিশ সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বলেও মনে করে অ্যাসোসিয়েশন।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, মূলত সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মাধ্যমে বিবিএস-এ নিযুক্ত মেধাবী পরিসংখ্যানবিদদের সমন্বয়ে গঠিত এ সার্ভিসকে অবমূল্যায়ন করে আরেকটি নতুন বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এ সুপারিশ করার আগে মূল স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কোনো প্রকার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি।’

‘এমনকি বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে লিখিত কতিপয় সংস্কার প্রস্তাব কমিশনে পাঠানো হলেও তা আমলে না নিয়ে একতরফাভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী সিভিল সার্ভিসকে অস্তিত্বহীন করার মতো সুপারিশ করে একটি দায়সারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়।’

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা, বাংলাদেশে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডারকে প্রস্তাবিত সার্ভিসগুলোর বাইরে রাখার অপকৌশল প্রকারান্তে প্রমাণনির্ভর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায়। কমিশনের এ সুপারিশ কতখানি পেশাদারি জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কেননা, দায়সারা ও অদূরদর্শী এ প্রতিবেদনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের পৃষ্ঠা নম্বর ১৩ এর ৬.

৮ নম্বর সুপারিশে একদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন’ হিসেবে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে; অন্যদিকে সংযুক্তি ৫, পৃষ্ঠা ১৮২-১৮৩-এ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়াধীন ‘পরিসংখ্যান বিভাগ’ বলবৎ রেখে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশনের ওপর বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের ছড়ি ঘোরানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়, তথ্য-উপাত্ত নির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় বিভিন্ন রাষ্ট্র যেখানে উত্তরোত্তর পরিসংখ্যান সার্ভিসকে আধুনিক ও শক্তিশালী করছে, সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে পরিসংখ্যান ক্যাডারকে পুনর্গঠিত সার্ভিসগুলোতে অন্তর্ভুক্ত না করার প্রহসনমূলক প্রস্তাব উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জুলাই বিল্পবের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বর্তমানে বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরত জনবলের ক্যারিয়ার প্ল্যান ও সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা প্রদান না করে এ কমিশন দায়সারাভাবে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, যা রাষ্ট্র থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

এ ধরনের প্রস্তাব জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা এবং বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস বলে মনে করে অ্যাসোসিয়েশন।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, এ অবস্থায় বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা একাত্মভাবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে দাখিল করা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, আমরা চাই শক্তিশালী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সার্ভিস গঠনের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য, সময়োপযোগী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। পরিসংখ্যান সার্ভিস তথা পেশাভিত্তিক জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে অস্তিত্বহীন করার এ হীন চেষ্টার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাহার করার জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় পর স খ য ন ব যবস থ পর স খ য ন স র ভ স ল দ শ পর স খ য ন পর স খ য ন ক দ খ ল কর ব স এস গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

মাটি ভরাটের জন্য পুকুর কেটেছিলেন, সেখান থেকেই মেয়ের লাশ তুললেন বাবা

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের মধ্যম জালিয়াকাটা এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ কিছুদিন আগে নতুন বসতভিটা তৈরি করেছেন। ভিটা ভরাটের জন্য পাশে একটি পুকুর কাটেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সবাই যখন ভাত খেতে ঘরে ঢোকেন, তখন তাঁর সাত বছর বয়সী শিশুকন্যা মিফতাহুল জান্নাত পুকুরটিতে পড়ে যায়। সাঁতার না জানায় সে আর উঠতে পারেনি।

ভাত খেতে বসে সবাই মিফতাহুলকে খোঁজ করে না পেয়ে এদিক-সেদিক খুঁজতে থাকে। পরে তার বাবা আবু হানিফ নিজে পুকুরে নেমে মেয়ের মরদেহ তুলে আনেন। এ ঘটনায় আবু হানিফসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা শোকে ভাসছেন।

নিহত মিফতাহুল স্থানীয় বারবাকিয়া এমএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মিফতাহুলের চাচা শওকত হোসেন বলেন, আবু হানিফ ভাত খাওয়ার পর মিফতাহুলকে না দেখে এদিক-সেদিক খুঁজতে থাকেন। কোথাও না পেয়ে তাঁর সন্দেহ হয়, মেয়ে পুকুরে পড়েছে। তখন তিনি পাশের পুকুরে নেমে পড়েন। একপর্যায়ে হানিফের পা মিফতাহুলের গায়ে ঠেকে। তখনই চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন হানিফ। পরে মরদেহটি কুড়িয়ে কূলে তুলে আনেন তিনি।

স্থানীয় বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচ এম বদিউল আলম বলেন, মাগরিবের নামাজের পর মিফতাহুলকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন শোকাহত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ