সৌদি আরবের সঙ্গে গত কয়েক বছরে গোপন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ইসরায়েল। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি খোলামেলা মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর পর থেকে নানা কিছু ঘটতে শুরু করেছে।

নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে চ্যানেল ১৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেন।

সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু দম্ভ করে বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে আমাদের মধ্যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের তরফে আমি ছাড়া আরও তিনজন এই সম্পর্কের কথা জানেন। তাদের (সৌদি) তরফেও অল্প কিছু লোক এটা সম্পর্কে জানেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারেও একই কথা।’

আরও পড়ুনওয়াশিংটনে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী: গাজা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ করেছে আরব দেশগুলো৯ ঘণ্টা আগে

নেতানিয়াহু মাঝেমধ্যে এই ধরনের বানোয়াট দাবি করে থাকেন। এটা যদি তেমনটি না হয়ে সত্য হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, তা অপর পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রকাশ করা হয়েছে বা সম্পর্কের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলেই তিনি তা প্রকাশ করেছেন। তাঁর এমন দাবির তৃতীয় সম্ভাবনা হলো ধমক দেওয়া। গত সপ্তাহে এই রকম অনেক ধমক দেওয়া হয়েছে।

তবে এটা বোঝা যায়, সৌদি ও ইসরায়েলের মধ্যে এ ধরনের সম্পর্ক হয়ে থাকলে তা রাষ্ট্রীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্পর্ক হয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) যুবরাজ হওয়ার আগে আর দশজন সাধারণ রাজপুত্রের মতো ছিলেন। তখন তাঁর এতটা পরিচিতি ছিল না। ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করতে গিয়ে তিনি রাজপরিবারের শক্তিশালী সদস্যদের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তখন তিনি বুঝেছিলেন, সৌদি আরবে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছাতে হলে তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের অনুগ্রহ লাভের বিকল্প নেই।

(বাঁ থেকে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে শিশুটির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনায় নিহত শিশুর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার নামাজ পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেকুল ইসলাম। এরপর কফিন নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে আসেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর অনুষ্ঠান শেষ হয়। 'ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ' এ গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। 

আজ বেলা একটার দিকে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট বছরের শিশুটি।

জানাজা শেষে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, শিশুটির মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। দ্রুত সময়ে এই ভয়াবহ হত্যার বিচার হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। শিশুটির জন্য পুরো জাতি দোয়া করছেন। তার মৃত্যু এই ক্রান্তিকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন। আর কোনো শিশু যেন হারিয়ে না যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা আইন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। তার মতো আর কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমাদের বোনের হত্যার ন্যায়বিচার আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। তার ধর্ষণ ও খুনের বিচার মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষকের সাহায্যকারীদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ষণকে কেবল শারীরিক শ্লীলতাহানি হিসেবে নয়, হত্যার সমপরিমাণ নিকৃষ্ট অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, যে পরিমাণ নিপীড়ন শিশুটির উপর হয়েছে, তাতে তার বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ হয়েছে শিশুটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা। ইতোমধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এ ঘটনার বিচার হতে হবে। আমরা এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ সময় ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- 

১. শিশুটির মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং এক মাসের মধ্যে তার ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন নিহতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।


৪. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।

৫. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।

এ দিকে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণের বিচার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ, আছিয়া হত্যার বিচারসহ একাধিক দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই মশাল মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি নীলক্ষেত হয়ে হলপাড়া ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মশাল মিছিলের পুর্বে তারা শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।

মশাল মিছিলে লড়াই লড়াই লড়াই চাই- লড়াই করে বাঁচতে চাই, শিশু হত্যাকারীদের- বিচার করো করতে হবে, খুন ধর্ষণ হয়নি শেষ- রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, আমার বোন মরলো কেন- রাষ্ট্র জবাব চাই, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার- অপসারণ করতে হবে, খুন ধর্ষণ যেখানে- লড়াই হবে সেখানে, খুন ধর্ষণ নিপীড়ন- রুখে দাও জনগন, হামলা মামলা হুলিয়া- নিতে হবে তুলিয়াসহ একাধিক স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।

মিছিল শুরুর পূর্বে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, আজ শিকার হয়ে আমাদের বোনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর সাথে আমরা কেউ প্রতারণা করবো না। এই স্বরাষ্ট্র পদত্যাগ করিয়েই আমরা আমাদের আন্দোলন শেষ করবো। একথা বলছি এজন্য যে, যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না তার এই পদে থাকার কোনো দরকার নেই। 

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ ৮ বছরের শিশুটি মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শিশুটির বোনের স্বামী, স্বামীর ভাই এবং স্বামীর মায়ের পাশবিক নির্যাতনের শিকার ৭ দিন হাসপাতালের বিছানায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পর ১৩ মার্চ সম্মিলিত সামরিক হাসতাপালে মৃত্যবরণ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ