কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গুলি করে রাজু (২০) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের পদ্মানদীর চরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাজু ওই ইউনিয়নের ফারাকপুর ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ইব্রাহিম প্রামাণিকের ছেলে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সজীব নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে কী কারণে কে বা কারা তকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এলাকাবাসীর ধারণা, এলাকায় মাদক ব্যবসা ও বালু মহলের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
নিহতের স্বজনরা জানান, একই গ্রামের মতলব কসাইয়ের ছেলে সজীব সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে রাত ১টার দিকে রাজুকে গুলি করা হয়েছে বলে পরিবারের লোকজন জানতে পারে। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ।
এলাকাবাসী জানায়, চরাঞ্চলের ত্রাস সাঈদ বাহিনীর সহযোগী হিসেবে এক সময় কাজ করতেন নিহত রাজু। চরাঞ্চলে বালু, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সাঈদ বাহিনীর সদস্যরা। এ বাহিনীর সঙ্গে এখন রাজু কাজ করেন না। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সঙ্গে রাজু চলাফেরা করতেন। এ কারণে সাঈদের লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। রাজুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পূর্বেকার ঘটনার জের থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
স্থানীয় আরেকটি সূত্রের দাবি, নিহত রাজু মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাদক লুট করতে গিয়ে চোরাকারবারিদের ছোড়া গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
নিহতের স্বজন ও মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তাকে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে সাঈদ বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। হত্যার পরে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে তার দাবি।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, রাত সোয়া ১টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাজুকে দৌলতপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। বুকের বাঁ পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় সজীব নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ লতপ র
এছাড়াও পড়ুন:
চুরি-ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে হবিগঞ্জে দুজনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, শরীরে আগুন
হবিগঞ্জে ছিনতাই ও মুঠোফোন চুরির অভিযোগে এক তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করছেন কিছু লোক। পরে সেই তরুণের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী তরুণ চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামে। তবে একজন নয়, দুই তরুণের সঙ্গে গত শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণদের একজন আজ বৃহস্পতিবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেছেন।
বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগ করে দুই তরুণকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় আজ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার সিলিমনগর গ্রামের আবদুল কাইযুমের ছেলে সোহেল মিয়া গত শনিবার পশুর হাটে একটি গরু বিক্রি করে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত ৯টার দিকে উপজেলার কটিয়াদি বাজার থেকে বাড়িতে ফেরার পথে নির্জন রাস্তায় কয়েকজন ছিনতাইকারী সোহেলকে ঘিরে ধরে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তখন ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় সোহেল উপস্থিত লোকজনের কাছে সহিদুল ইসলাম (২৪) নামের এক তরুণকে দেখিয়ে দাবি করেন, তিনি ছিনতাই জড়িত। এরপর ওই তরুণকে ধরে সিলিমনগরে সোহেলের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। পরে সোহেল পাশের বনদক্ষিণ গ্রামের আরেক তরুণ জাহেদ আলীকে (২০) ফোন করে ‘জরুরি কাজ আছে’ বলে বাড়িতে ডেকে আনেন। জাহেদ তাঁর বাড়িতে গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তুলে গাছে বেঁধে নির্যাতন শুরু করেন। পরে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী দুই তরুণ বর্তমানে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, জাহেদ আলীর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসাধীন আরেক তরুণ সহিদুলের বাঁ হাতের কিছু অংশ ঝলছে গেছে।
জাহেদ আলী বলেন, তিনি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে কাজ করেন। তাঁকে মুঠোফোনে কল করে সোহেল বাড়িতে ডেকে নেন। যাওয়ার পর সোহেল দাবি করেন, তাঁর দুটি মুঠোফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে। চুরির সঙ্গে তিনি জড়িত। পাশাপাশি ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে সোহেল ও তাঁর স্বজনেরা অমানসিক নির্যাতন করেন। পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘আমি যদি জড়িত হতাম, তাহলে সোহেলের ফোনে তাঁদের বাড়িতে যেতাম না। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়।’
ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। ওই দিন রাতে কটিয়াদি বাজারে কাজে গেলে রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে সোহেলের নেতৃত্বে কিছু লোক তাঁকে ধরে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তাঁরা তাঁকে নির্যাতন করে জাহেদ আলীর নাম বলতে বলেন। তিনি নাম না বলায় নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে।
সিলিমনগর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘গত শনিবার রাতে আমরা গ্রামের আবদুল কাইযুমের বাড়িতে দুজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করার দৃশ্য দেখেছি। তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও মোবাইল চুরির অভিযোগ করেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল মিয়া বলেন, সহিদুল ও জাহেদ এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তাঁরা চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ওই দিন রাতে আজমিরীগঞ্জে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন সহিদুল ও জাহেদ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া আগের দিন তাঁর বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন চুরি হয়। ওই চুরির সঙ্গেও তাঁরাই জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।
বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই অপরাধে তাঁরা জড়িত কি না, তা তদন্তের বিষয়। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি চুরির মামলা আছে বাহুবল থানায়। ওসি বলেন, দুই তরুণকে নির্যাতনের ঘটনায় জাহেদ আলী বাদী হয়ে আজ হবিগঞ্জ আদালতে ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। মামলার পর আমির মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মামলার ৫ নম্বর আসামি।