গণঅভ্যুত্থানের ফল পেতে দেশের জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী তারুণ্যের উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

আসিফ মাহমুদ বলেন, “দেশের জনগণ একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পরেও ধৈর্য সহকারে যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে, বড় ধরনের কোনো রক্তপাত হয়নি, আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছে সেখান থেকে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। আমরা আশা করি, দেশের জনগণ দেশ পুনর্গঠনেও ধৈর্য এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই গণঅভ্যুত্থানের যেই ফসল দেশের মানুষ পেতে চায় তা বাস্তবায়নে সবাই সহযোগিতা করবে।” 

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও বিচারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক উত্তরায়ণের যে দায়িত্ব নিয়েছে সেই কাজে দেশবাসী সহযোগিতা করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণরা যেভাবে আত্মত্যাগ করেছে দেশের জন্য, দেশ পুনর্গঠনেও একইভাবে এগিয়ে আসবে এমন আশা প্রকাশ করে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, “প্রত্যেকটা সেক্টরে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দেবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তারা তাদের সর্বোচ চেষ্টাটা করবে।” 

তিনি আরো বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান জাতিকে একটি স্বপ্ন দেখিয়েছে একটি নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। কমিশনগুলো তাদের প্রস্তাবনা পেশ করেছে। স্টেকহোল্ডার কনসালটেশনের মাধ্যমে সে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামোর যে অঙ্গগুলো ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে সেগুলোকে পুনর্গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাবার পথে অগ্রসর হবে।”

ঢাকা/রায়হান/ইভা   

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংবাদমাধ্যম কেন ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হতে পারছে না?

ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে সংসদীয় বিতর্কের সময় তাত্ত্বিক এডমন্ড বার্ক ১৭৮৭ সালে প্রথমে ‘ফোর্থ এস্টেট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তখন ইউরোপীয় সমাজে তিনটি প্রধান স্তম্ভ ছিল; ফার্স্ট এস্টেট–অভিজাত শ্রেণি, সেকেন্ড এস্টেট– ধর্মযাজক শ্রেণি এবং থার্ড এস্টেট– সাধারণ মানুষ। ইতিহাসবিদ টমাস কার্লাইল তাঁর ‘বুক অব হিরোজ অ্যান্ড হিরো-ওরশিপ’ বইয়ে লিখেছেন, বার্ক সেদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘এই সংসদে আজ তিনটি স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কিন্তু ওই যে গ্যালারিতে বসে আছেন সাংবাদিকরা, তারা এই সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। তারা কিন্তু এদের সবার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।’ সেই থেকে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের ফোর্থ এস্টেট বলার প্রচলন শুরু। কথাটি আপেক্ষিক ও তাত্ত্বিক হলেও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নৈতিক ভিত্তি তৈরিতে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল।  
সংবাদমাধ্যম তার নৈতিক ও নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে। শাসকের অন্যায় প্রকাশ করে জনমত তৈরি করেছে।
বিশ্বে যাব কেন? বাংলাদেশের কথাই বলি। এখানে সংবাদমাধ্যমের উজ্জ্বল ভূমিকার অনেক নজির রয়েছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সংবাদমাধ্যম বাঙালির ন্যায়সংগত দাবির পক্ষেই ছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, পরবর্তী সময়ে দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, পূর্বদেশ, জনপদ, পিপলস প্রভৃতি পত্রিকা পূর্ববাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষেই শুধু থাকেনি; আন্দোলনকেও গতিশীল করেছিল। এ জন্য ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে তিন দফা জেল খাটতে হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এসব পত্রিকার ওপরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করে সামরিক জান্তা, কিন্তু তারা নীতি থেকে সরে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার কারণে সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সারের মতো সাংবাদিককে হত্যা করা হয়।

আশির দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার পথেই হেঁটেছে। সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু, দমন-পীড়নের মুখেও সাহস দেখাতে পিছপা হয়নি। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গণমানুষের সারিতে নেমে এসে দেশের সব পত্রিকা প্রকাশ একযোগে বন্ধ রাখেন সাংবাদিকরা। স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়।
গণতন্ত্রের বিজয়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার কালো আইনটি বাতিল ও সংবাদপত্র প্রকাশ সহজীকরণ করেন। বড় বিনিয়োগ বাড়ে তথ্যশিল্পে। দেশের সাংবাদিকতা তখনও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের মতোই ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, বর্তমানে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হতে গিয়ে এডমন্ড বার্ক যে অর্থে ফোর্থ এস্টেট আখ্যা দিয়েছিলেন, সেখান থেকে সংবাদমাধ্যম বিচ্যুত। গণমানুষের চিন্তা ও স্বার্থ সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন শতাব্দীতে বাংলাদেশে বিকশিত হতে থাকে বেসরকারি টেলিভিশনের জগৎ। এ মাধ্যমে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে বড় বড় করপোরেট হাউস। সরকারের আনুকূল্যে থেকে টেলিভিশনের লাইসেন্স পায়; সম্প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকরা হয়ে যান করপোরেট চাকরিজীবী। সরকারকে রুষ্ট না করার নীতিই এসব প্রতিষ্ঠানের মূলনীতি। অবশ্য তার ‘যৌক্তিক’ কারণও আছে। সরকার চাইলেই যে কোনো পত্রিকা বন্ধ করে দিতে পারে না, কিন্তু চাইলে এক সেকেন্ডের মধ্যে টেলিভিশন ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করে সম্প্রচার অন্ধকার করে দিতে পারে। এ ছাড়া পত্রিকার ডিক্লারেশন দেওয়া হয় সম্পাদকের নামে; কিন্তু টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয় 
বিনিয়োগকারীকে।

এ পরিস্থিতিতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে না পেরে বেশির ভাগ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দর্শকদের সমালোচনার মুখে পড়ে। বিশেষত বেশ কয়েক বছর থেকে সরকারের অলিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী হয়ে দিনের পর দিন বিরোধী দলের খবর কমিয়ে এবং সরকারের ‘সাফল্য’ বাড়িয়ে প্রচার করার প্রবণতা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে রাষ্ট্রযন্ত্রের খবরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। হাতেগোনা কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল সাহস দেখিয়ে পেশাদারিত্ব বজায় রাখলেও অধিকাংশই পেশাদারিত্বের ধারেকাছে থাকতে পারেনি। 

গণঅভ্যুত্থানকালে বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ঝুঁকি নিতে না পারার যুক্তিও ছিল কর্তৃপক্ষের কাছে। সরকার এক সেকেন্ডের মধ্যে সম্প্রচার বন্ধ করে দিলে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্ট হবে। হুমকিতে পড়বে তার অন্যান্য ব্যবসাও। সে জন্য অবশ্য এখনও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সম্প্রচার মাধ্যমের কালাকানুনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে দরকার অভ্যন্তরীণ সংস্কার। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সে রকম কর্মকাঠামো উপহার দেবে। 
সংবাদমাধ্যম এখন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল– এই তিন মাধ্যমে বিভক্ত। সোশ্যাল বা নিউ মিডিয়া আবার দু’রকম– প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক। ব্যক্তি বা কয়েকজন মিলে অপ্রাতিষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া যেমন– ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব চালিয়ে থাকে। আবার সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পত্রিকা ও টেলিভিশন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করে। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে অপ্রাতিষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া ভূমিকা রাখতে পেরেছে। কারণ তার আইনগত বাধা ছিল না। আইনি বাধ্যবাধকতা বা কর্তৃপক্ষীয় সীমাবদ্ধতার কারণে পিছিয়ে পড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক 
সোশ্যাল মিডিয়া।

এডমন্ড বার্ক সতেরো শতকে যখন সাংবাদিকদের ফোর্থ এস্টেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন তখন নিউ মিডিয়া ছিল না। তবে তিনি নিঃসন্দেহে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যমের কথাই বলেছেন। এই সংবাদমাধ্যমকে গণমানুষের পক্ষে ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে, সেই সঙ্গে মানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরতে হবে। এটি করতে না পারলে অপ্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক মাধ্যম জায়গা বিস্তার করবে। এতে অপতথ্য, ভুল তথ্য ও মিথ্যা তথ্যের প্রসার ও পসার বাড়বে। রাষ্ট্র গঠনে তাই প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বও আছে, যার স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছিলেন এডমন্ড বার্ক। সে দায়িত্ব পালন মাঝে মাঝে হোঁচট খেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সময় শেষ হয়ে যায়নি।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য শুধু মুক্তিযুদ্ধই করেনি, বারবার রক্ত ঝরেছে। তবুও সেই স্বপ্ন এখনও অদৃশ্য রয়ে গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম একে অন্যের পরিপূরক। সংবাদমাধ্যমকে যখন তখন এবং যেখান সেখান থেকে হস্তক্ষেপ যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য কালাকানুন অনুকূল নয়। এ তো গেল রাষ্ট্রের জন্য বাণী। তবে সংবাদকর্মীদেরও দায়িত্বশীল ও গণমুখী হতে হবে। তবেই এডমন্ড বার্কের ফোর্থ এস্টেট বা চতুর্থ স্তম্ভের আখ্যা যথার্থতা পাবে।

রাশেদ আহমেদ: প্রধান বার্তা সম্পাদক, মাছরাঙা টেলিভিশন
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমা করিস না মা, দ্রোহ হয়ে ছড়িয়ে পড়িস
  • তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারি
  • সাংবাদিকদের বেতন বাড়াতে আরেকটি আন্দোলন করা উচিত: প্রেস সচিব
  • তিন দিন কর্মস্থলে আসছেন না এডিসি রাশেদ, ফোন বন্ধ
  • পুলিশের সেই এডিসি রাশেদ তিন দিন ধরে অফিসে আসছেন না
  • পুলিশের সেই এডিসি রাশেদ ‘আত্মগোপনে’
  • ‘কিংস পার্টি’ গঠনের তাত্ত্বিক বাস্তবতা
  • গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা
  • সংবাদমাধ্যম কেন ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হতে পারছে না?
  • পররাষ্ট্রনীতির পুনর্বিন্যাস অনিবার্য