একজন ডাগআউটে টর্নেডোর মতো অস্থির হয়ে এদিক-সেদিক ছুটছেন। আঙুলের ইশারায় শিষ্যদের কড়া নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার কিছু একটা মনমতো না হলে মাথা কুটে মরছেন। কখনো কখনো আবেগ সামলাতে না পেরে সাইডলাইনে বসেও পড়ছেন, এমনকি পারলে শুয়েও পড়েন!

বিপরীতে অন্য ডাগআউটের কোচটির মধ্যে কোনো কিছুই নিয়েই যেন কোনো হেলদোল নেই। তিনি যেন শতবর্ষীয় এক সন্ত। মুখে চুইংগাম নিয়ে চোয়ালটাকে অনন্তকাল ধরে নাড়িয়েই চলেছেন। দল গোল খেলেও আবেগে কোনো তারতম্য হয় না, আবার গোল দিলেও ভাবগতিকে কোনো পরিবর্তন আসে না। অদ্ভুত এক নির্লিপ্ততা যেন।

ডাগআউটে দুই কোচের এমন বিপরীতমুখী অবস্থান গত কয়েক বছরে আমাদের সময়ের ক্ল্যাসিক চিত্রগুলোর একটি। সেই দুজন কোচের নাম বোধ হয় আলাদা করে বলে না দিলেও চলে। তা–ও অবশ্য বলে দেওয়া ভালো। অস্থির সেই কোচের নাম পেপ গার্দিওলা আর শান্ত-সুবোধ ‘বালক’টি কার্লো আনচেলত্তি।

সামনের দিনগুলোয় আধুনিক ফুটবলের ধ্রুপদি দ্বৈরথের কথা বললে ম্যানচেস্টার সিটি-রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা গার্দিওলা-আনচেলত্তির লেখা গল্পগুলো ওপরের দিকেই থাকবে। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে ইউরোপীয় ফুটবলের রোমাঞ্চের পারদটাকে বেশ ওপরে দিকেই নিয়ে গেছেন তাঁরা। যেখানে মুখোমুখি লড়াইগুলো ফুটবলীয় নন্দনের চিরকালীনতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আজ রাতে ইতিহাদে মাঠে নামার আগে দুই দলের লড়াইকে ‘ক্লাসিকো’র মর্যাদা দিচ্ছেন রিয়াল কোচ আনচেলত্তিও। তিনি বলেছেন, ‘এটা এখন ক্লাসিকোর মতোই। কারণ, আমরা দুই দল অনেক দিন ধরে একে অপরের বিপক্ষে খেলছি।’

আরও পড়ুনসেই অর্থের ছায়াতলেই সিটির ভাগ্য বদলাতে চাইছেন গার্দিওলা২৪ জানুয়ারি ২০২৫

এবারসহ গত চার মৌসুম ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি হয়ে আসছে সিটি-রিয়াল। তবে আগের লড়াইগুলোর সঙ্গে এবারের লড়াইয়ের মৌলিক পার্থক্যও আছে। শেষ তিন বছরের দুবার এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল সেমিফাইনালে এবং একবার কোয়ার্টার ফাইনালে। এর মধ্যে ২০২১-২২ এবং ২০২৩-২৪ মৌসুমের দ্বৈরথ অনেক দিন মনে রাখার মতো ছিল। কিন্তু এবার পরিবর্তিত সংস্করণে দুই দল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে শেষ ষোলোতে যাওয়ার নকআউট লড়াইয়ে। অর্থাৎ আগেভাগেই বিদায় নিতে হবে দুই পরাশক্তির একটিকে।

রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের চার খেলোয়াড় (বাঁ থেকে) এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস, বেলিংহাম ও রদ্রিগো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই দল

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ সন্দেহে যুবককে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রদল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এক যুবককে মারধরের পর জুতার মালা গলায় পরিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার ওই যুবক পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। এরপর তাঁকে মারধর করেন তাঁরা। পরে তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

মারধর ও জুতার মালা পরানোর সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি শিকার করে ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী জানান, ওই যুবক ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসির (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওই উপপক্ষের নেতা–কর্মীরা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। ছাত্রদল কর্মীদের মারধরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ওই যুবক।

জানতে চাইলে ছাত্রদল কর্মীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালের দিকে আমি গোপনে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এটি জানতে পেরে আমাকে শাহ আমানত হলের ৩০২ নম্বর কক্ষে নিয়ে তিনি মারধর ও নির্যাতন করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে মারধরের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। তাই তাঁকে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে মারধরের সঙ্গে ছাত্রদল কর্মীদের যুক্ত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদল নেতা–কর্মীসহ অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। তাই ছাত্রদল ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন।

পুলিশে সোপর্দ করার সময় ওই যুবক বলেন, তিনি শাহ আমানত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা নেওয়া ওই শিক্ষার্থীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে প্রশাসনকে বিপাকে পড়তে হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ