বিদেশি বিনিয়োগে বড় পতন, ৬ মাসে কমেছে ৭১ শতাংশ
Published: 11th, February 2025 GMT
বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে চার ভাগের প্রায় এক ভাগে নেমেছে। এ সময় বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৭১ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য–উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত করে একটি প্রতিবেদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগের এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে। তাই নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে নামোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডিদীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি বিনিয়োগের মন্দাভাব চলছে। ব্যবসায় পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। আবার স্থানীয় বা দেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশি শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে না।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আছে। তাই নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এখানে যেসব বিদেশি বিনিয়োগ করেছে, তাদের অবণ্টিত মুনাফা আবার বিনিয়োগ করছে। যেখানে দেশের ভেতরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা কঠিন।’
মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি, সুশাসন ও জবাবদিহি ঘাটতি—এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
নতুন বিদেশি বিনিয়োগ যে বাড়ছে না, সেই চিত্রও উঠে এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে দেড় শ কোটি ডলারে মতো বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এর মধ্যে ইকুইটি বিনিয়োগ বা নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, প্রান্তিক হিসাবেও চলতি অর্থবছরের বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নতুন ও পুনর্বিনিয়োগ মিলে এসেছে প্রায় ১৫ কোটি ডলার। পরের প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এসেছে প্রায় সাত কোটি ডলারের কাছাকাছি।
বাংলাদেশের এফডিআইয়ের বড় অংশই আগে থেকে দেশে বিনিয়োগ করা কোম্পানির আয় ও অবণ্টিত লাভের পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে আসে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সার্কভুক্ত দেশের বাণিজ্য, কে বেশি লাভবান, বাংলাদেশ নাকি ভারত
দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার আন্তবাণিজ্য পৃথিবীর আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। নানা রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক বাণিজ্য প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এক অর্থবছরে যত পণ্য রপ্তানি করে তার মাত্র ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে।
সার্কভুক্ত দেশে যেমন বাংলাদেশের রপ্তানি কম, তেমনি এই দেশগুলো থেকে আমদানিও কম। বাংলাদেশের মোট আমদানি পণ্যের ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ করে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে আসে। আবার এ আমদানিও ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে সার্কভুক্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও বিদেশি বিনিয়োগের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ ১৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে এসব দেশ থেকে আমদানি করেছে ৯৭৬ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য। সামগ্রিকভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলো তাদের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ নিজেদের মধ্যে করে থাকে। এ হার পৃথিবীর আঞ্চলিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। সে জন্য বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম সংযুক্ত অঞ্চল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা ভারতের সঙ্গে। সার্কভুক্ত দেশগুলোয় বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ভারতে। একইভাবে এসব দেশ থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ আসে ভারত থেকে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে প্রায় ১৫৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। এরপর পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে ৬ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ডলারের পণ্য। আর নেপালে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; আফগানিস্তানে ১ কোটি ৪২ লাখ ডলার; ভুটানে প্রায় ৯১ লাখ ডলার ও মালদ্বীপে প্রায় ৪১ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।
বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে যেসব পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে ভারতে বস্ত্র, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ তেল, কাঁচা চামড়া, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, খনিজ, যন্ত্রাংশ; পাকিস্তানে বস্ত্র, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, রাবার, মৌল ধাতু, জুতা; শ্রীলঙ্কায় রাসায়নিক ও শিল্পপণ্য, মণ্ড, প্লাস্টিক ও রাবার, জুতা, যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ; আফগানিস্তানে রাসায়নিক, বস্ত্র, প্রস্তুতকৃত খাদ্য, স্পিরিট, ভিনেগার ইত্যাদি; ভুটানে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, ভিনেগার, তামাক, খনিজ, প্লাস্টিক; নেপালে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, রাসায়নিক ও সহায়ক শিল্পপণ্য, প্লাস্টিক, রাবার, খনিজ ও অন্যান্য পণ্য এবং মালদ্বীপে প্রস্তুতকৃত খাদ্য, পানীয়, স্পিরিট, সবজি, বস্ত্র ও সহায়ক পণ্য রপ্তানি হয়।
আমদানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। এ ছাড়া ভুটান থেকে প্রায় ৪ কোটি ডলার; আফগানিস্তান থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার; পাকিস্তান থেকে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার; নেপাল থেকে ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার; মালদ্বীপ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
প্রবাসী আয় ও এফডিআই
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাংলাদেশি শ্রমিকেরা তেমন একটা যান না। ফলে প্রতিবছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, তার ১ শতাংশেরও কম আসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে মালদ্বীপ থেকে। সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে তার প্রায় ৬৯ শতাংশ আসে এই দ্বীপ দেশটি থেকে। ভারত থেকে আসে প্রায় ২৩ শতাংশ।
একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে যে পরিমাণ এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তার মাত্র ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এসেছে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে। উল্লেখিত অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট প্রায় ১৪৭ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। এর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে এসেছে প্রায় ২৪ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করা গেলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য থাকলেও তাদের বাণিজ্যনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এত ভিন্নতা আছে যে সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।