ফিলিস্তিনের গাজা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া এবং উপত্যকাটি থেকে বাসিন্দাদের অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে সেখানে উন্নয়নকাজ চালানোর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে এক ‘কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।

(গাজার) জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।ওলাফ শলৎজ, জার্মানির চ্যান্সেলর

গত রোববার নির্বাচন-পূর্ব একটি বিতর্কে চ্যান্সেলর শলৎজ এ মন্তব্য করেন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে ওয়াশিংটন থেকে ‘অনেক বাগাড়ম্বর’ করা হচ্ছে, এমন ইঙ্গিত দেন তিনি।

মধ্যবাম শলৎজ ও মধ্যডান ফ্রেডরিক মার্জ বিতর্কে জার্মানির অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অভিবাসনের মতো শীর্ষস্থানীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিতর্কে ট্রাম্পের গত তিন সপ্তাহের শাসনকালে তাঁর গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন তাঁরা।

মধ্যবাম শলৎজ এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী অগ্রবর্তী প্রার্থী মধ্যডান ফ্রেডরিক মার্জ বিতর্কে জার্মানির অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অভিবাসনের মতো শীর্ষস্থানীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করেন। বিতর্কে ট্রাম্পের গত তিন সপ্তাহের শাসনকালে তাঁর গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও আলোকপাত করেন তাঁরা।

গাজা পুনর্গঠন করে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকতে’ পরিণত করার ট্রাম্পের প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে চ্যান্সেলর বলেন, ‘এটি একটি কেলেঙ্কারি। পাশাপাশি এটি সত্যিকারেই এক ভয়ানক অভিব্যক্তি।’

আমিও (ট্রাম্পের প্রস্তাবকে) একই রকম মূল্যায়ন করি। এটি মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে আসা একগুচ্ছ প্রস্তাবের একটি, যা নিশ্চিতভাবে হতাশাজনক। তবে অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে, (ওই প্রস্তাব দিয়ে) প্রকৃতপক্ষে কী বোঝানো হয়েছে এবং কীভাবে এটি কার্যকর হয়, সম্ভবত এতে অনেক বাগাড়ম্বর রয়েছে।ফ্রেডরিক মার্জ, জার্মান চ্যান্সেলরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী

এআরডি ও জেডডিএফ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে ওলাফ শলৎজ আরও বলেন, ‘(গাজার) জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ এ বিষয়ে মিসর ও জর্ডানের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত (সমর্থন প্রকাশ) করেন তিনি।

আরও পড়ুনজার্মানিতে আস্থা ভোটে হারলেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এদিকে মার্জ বলেন, ‘আমিও (ট্রাম্পের প্রস্তাবকে) একই রকম মূল্যায়ন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে আসা একগুচ্ছ প্রস্তাবের একটি, যা নিশ্চিতভাবেই হতাশাজনক। তবে অপেক্ষা করতে হবে ও দেখতে হবে যে, (ওই প্রস্তাব দিয়ে) প্রকৃতপক্ষে কী বোঝানো হয়েছে এবং কীভাবে এটি কার্যকর হয়। সম্ভবত এতে অনেক বাগাড়ম্বর রয়েছে।’

আরও পড়ুনডানপন্থীদের সাফল্যে উদ্বিগ্ন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ২৪ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে মানববন্ধন

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

‎‎বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

‎‎এসময় কর্মকর্তাগণ বলেন, ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রনয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে ৮ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এক সুবিশাল ভোটার ডেটাবেইজ যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য নজির।

সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এই ডাটাবেজে প্রায় ১২.৫০ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। টঘউচ-র সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯.৭% সঠিক মর্মে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।

ভোটার তালিকার এই তথ্যভান্ডার থেকেই উপজাত হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘওউ সেবা নির্বাচন কমিশনের আওতা থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে চায়। 

‎‎১। সাংবিধানিক ম্যান্ডেট : সংবিধান-এর ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত। ভোটার তালিকার তথ্যভান্ডার একটি সংবিধানিক দলিল, যা কারও কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই।

‎২। ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া : উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে, ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি একটি সংবিধানসম্মত ও সুরক্ষিত প্রক্রিয়া, যা ঘওউ কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

‎৩। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা : জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকার উপজাত (নুঢ়ৎড়ফঁপঃ)। প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আলাদা কোনো তথ্যভান্ডার নেই, এটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকা থেকে উদ্ভূত।

‎৪। ডাটাবেজের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি : ঘওউ সেবা অন্য সংস্থার অধীনে গেলে ফধঃধ ফঁঢ়ষরপধঃরড়হ ফধঃধনধংব সধহরঢ়ঁষধঃরড়হ এর আশংকা দেখা দিতে পারে। এতে বিদ্যমান পযবপশ ্ নধষধহপব ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

‎৫। গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা : নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আমানত হিসেবে সংরক্ষিত। সাংবিধানিকভাবে কমিশন এই তথ্য অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। এটি নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

‎৬। জনগণের বিপুল অর্থের সাশ্রয় : জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনে থাকায় এবং কমিশনের একই জনবল দ্বারা এই কার্যক্রম সম্পাদনের ফলে দেশ ও সরকারের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী সেবায় পরিণত হয়েছে।

আলাদা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হলে জনবল, স্থাপনা ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে জনগণের বিপুল অর্থের অপচয় হবে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

‎৭। ভোটার নিবন্ধনে নেতিবাচক প্রভাব : জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে শুধুমাত্র ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশন নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোন উদ্ভাবনে (রহহড়াধঃরড়হ) প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিরুৎসাহিত হবে।

‎৮। ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ: নির্বাচন কমিশন থেকে ঘওউ কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হলে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে পারে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।

‎৯। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত : অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ২০২৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিল করে ঘওউ কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে ঘওউ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়াই সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা।

‎সর্বপরি আমরা মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাই সংবিধানসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবস্থা। আমরা সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।

‎‎এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ রাকিবুজ্জামান, সহকারী প্রোগ্রামার মোঃ রিয়াজুল আলম, উপজেলা নির্বাচন অফিসার আফরোজা খাতুন সহ  মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, মোঃ মনির হোসেন, মোঃ ইসমাইল, রাখি প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে মানববন্ধন