দারুণ ছন্দে থাকা লিভারপুল মৌসুমের প্রথম ধাক্কাটি খেল। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে শীর্ষে থাকা দলটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে এফএ কাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছে পুঁচকে প্লাইমাউথ আর্গাইল, যারা কিনা ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপে একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে। অবনমনের শঙ্কায় থাকা প্লাইমাউথের এ জয় এখন পর্যন্ত মৌসুমের সবচেয়ে বড় তো বটেই, এফএ কাপের ইতিহাসেরও নাকি অন্যতম সেরা অঘটন।
হোম পার্কে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নিজের বক্সের ভেতর হ্যান্ডবল করেন লিভারপুল মিডফিল্ডার হার্ভে এলিয়ট। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে ঠান্ডা মাথায় স্পটকিকে গোল করেন প্লাইমাউথের স্কটিশ ফরোয়ার্ড রায়ান হার্ডি। সে গোল আর শোধ করতে পারেনি লিভারপুল। অনেকে এ পরাজয়কে লিভারপুল বস আর্নে স্লটের প্রথম ভুল হিসেবে দেখছেন। দু্’দিন আগে লিগ কাপের সেমিতে টটেনহামকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া একাদশে ১০টি পরিবর্তন এনে দল সাজিয়েছিলেন স্লট। অলরেড বস অবশ্য এটা ভুল মানতে নারাজ, ‘আমাদের জন্য দিনটি ভালো ছিল না, যে কারণে ম্যাচের এমন ফলাফল।’
লিভারপুলের বিপক্ষে স্মরণীয় এ জয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হলেন প্লাইমাউথের কোচ মিরন মুসলিচ। যুদ্ধবিধ্বস্ত বসনিয়ায় জন্ম নেওয়া এ কোচ রিফিউজি হিসেবে ভেসে বেড়িয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ১৯৯২ সালে বর্বর সার্ব বাহিনী তাঁর শহর বিহাচ দখল করে নিলে মাত্র ৯ বছর বয়সে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে অস্ট্রিয়া চলে গিয়েছিলেন মুসলিচ। গত জানুয়ারিতে ওয়েন রুনিকে বরখাস্ত করে তাঁকে দায়িত্ব দেয় প্লাইমাউথ কর্তৃপক্ষ। তবে চ্যাম্পিয়নশিপে সবার নিচে থাকলেও ইদানীং ভালো খেলতে শুরু করেছে তারা। লিভারপুলের আগে এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডে প্রিমিয়ার লিগের আরেক দল ব্রেন্টফোর্ডকে হারিয়েছে তারা। আর গত সপ্তাহে ওয়েস্ট ব্রমকে হারিয়ে গত নভেম্বরের পর লিগে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে দলটি।
তবে লিভারপুলের বিপক্ষে জয়টা তাদের জন্য বিশেষ কিছু বলে জানিয়েছেন মুসলিচ, ‘আমি আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। যদিও তারা বলে আমি নাকি বাগ্মী (হাসি)। আমাদের জন্য স্মরণীয় একটি দিন, বলতে পারেন জাদুকরি দিন। লকাররুমে আমি সবাইকে বলেছি, এ জয় উপভোগ করতে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এ জয় আর্গাইলের ইতিহাসের গৌরবের অধ্যায়। লিভারপুলকে আটকে দিয়েছি! আমার আসলে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। স্টেডিয়াম থেকে আমার অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর শান্ত পরিবেশে হয়তো বিষয়টি অনুধাবন করতে পারব।’
প্লাইমাউথের আরেক নায়ক হলেন গোলরক্ষক কনর হ্যাজার্ড। ৯০ মিনিট শেষে রেফারি আরও ৯ মিনিট খেলান। তখন দিয়াগো জোতা ও ডারউইন নুনেজের দুটি দারুণ প্রচেষ্টা অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেন হ্যাজার্ড। ম্যাচসেরা হওয়া ক্রোয়াট ডিফেন্ডার কিনোলা ক্যাটিচ তাই জয়ের সব কৃতিত্ব দিয়েছেন হ্যাজার্ডকে, ‘তাঁর জন্যই আমি এখানে (পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে)। আমি কিন্তু হ্যাজার্ডকে ঘৃণা করি। কারণ সে সেল্টিকে খেলেছে এবং আমি রেঞ্জার্সে। তবে আজ সে আমাদের জয় এনে দিয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে ‘শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব’ উদ্যাপিত
‘বন্ধে মায়া লাগাইছে, দিওয়ানা বানাইছে’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু’—এ রকম অসংখ্য কালজয়ী গান ও এর স্রষ্টাকে শ্রদ্ধায় স্মরণের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুই দিনব্যাপী ‘শাহ আবদুল করিম লোক উৎসব-২০২৫’।
বাউলসম্রাটের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শাহ আবদুল করিম পরিষদের আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো এ উৎসবে সহযোগী ছিল দেশের বৃহত্তম মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। বাংলা লোকগানের এই অমর স্রষ্টার স্মরণে ২০০৬ সাল থেকে কালনী নদীর তীরে উজানধল মাঠে আয়োজিত হয়ে আসছে এই উৎসব।
গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি এবং বাউলসম্রাটপুত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধনীতে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.)সহ অন্যরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (অব.) বলেন, ‘বিকাশ সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজে, নিরাপদে আর্থিক সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। এই সেবাগুলো দেওয়ার পাশাপাশি দেশের আবহমান সংস্কৃতির চর্চায়ও যেন আমরা ভূমিকা রাখতে পারি, সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
বরাবরের মতো এবারও উৎসব আয়োজনে সহযোগিতার জন্য বিকাশ ও গ্রামবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানান শাহ আবদুল করিম পরিষদের সভাপতি এবং বাউলসম্রাটপুত্র শাহ নুর জালাল।
সারা দেশ থেকে আসা লোকসংগীতের শিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীরা বাউলসম্রাটের সৃষ্টিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে গান-শ্রদ্ধা-স্মরণে মাতিয়ে রাখেন দুটি রাত। স্থানীয় তরুণ-বৃদ্ধ-নারীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের বাইরে থেকেও আসা ভক্ত-সুধীজনেরা অংশ হয়ে ওঠেন এই প্রাণের উৎসবের। উৎসব কেন্দ্র করে উজানধল মাঠে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে এবারও জমে ওঠে বর্ণিল মেলা।