দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমবে
Published: 11th, February 2025 GMT
মূল্যস্ফীতি কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে মুদ্রানীতি। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সেটি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মানেই হচ্ছে দেশে বিনিয়োগ কম হবে। বিনিয়োগ যদি কমে যায়, তাহলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। তাই একটার সঙ্গে একটা জড়িত।
বেসরকারি খাতে যখন অর্থের প্রভাব কমবে, তখনই বেসরকারি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উৎপাদনব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। দু–একটি ছাড়া প্রায় সব ভোগ্যপণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এমন দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করলেই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, সেটির যৌক্তিকতা নেই।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, কঠোর আর্থিক নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি গত দুই মাসে কমেছে। কিন্তু বাস্তবে সেটি নয়।
গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমার মূল কারণ শীতের শাকসবজির পর্যাপ্ততা ও কম দাম। বাংলাদেশে শীতকালীন সবজির মৌসুম ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। তারপর সবজির সরবরাহ কমলেই দাম বাড়বে। এবার কিন্তু আমাদের ২০ লাখ টন চালও আমদানি করতে হবে। তাহলে সেখানে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে। বৈদেশিক মুদ্রা যখন এসব খাতে যাবে, তখন টাকার অবমূল্যায়ন হতে পারে। ফলে সামনের মাসগুলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়বে নাকি কমবে, সেটি সময়ই বলবে।
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যখনই অনুসরণ করা হয়, তখনই সুদের হার বেড়ে যাবে। সুদের হার বাড়লে পণ্য উৎপাদনের খরচও বেড়ে যায়। দেশের পণ্য রপ্তানির জন্য যে ব্যবস্থাপনা দরকার, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে যায়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারিত মুদ্রানীতি হলেও যে বিনিয়োগ হতো তা নয়। তবে উৎপাদনমুখী খাত প্রয়োজনীয় চলতি মূলধনের জোগান পেত। তাতে অর্থনীতিতে গতি আসত বলে আমি মনে করি।
আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে বাঘের মুখ থেকে জীবিত উদ্ধারের লোমহর্ষক ঘটনা
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের টাইগার রিজার্ভ এলাকায় এক বনকর্মী বাঘের মুখে থেকে বেঁচে ফিরেছেন। একেবারে হামলে পড়ে লোকটির শরীর খাবলে নিচ্ছিল বাঘটি। তবে শেষরক্ষা হলেও সেই ঘটনা নিয়ে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
সোমবারেরই (১০ ফেব্রুয়ারি) ঘটনা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগেনাবাদে সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রামে বাঘের হামলার এই ঘটনা ঘটে। অবশ্য তখন বনকর্মীদের ক্যামেরা চালু ছিল।
ফুটেজে দেখা যায়, বনকর্মীরা সংখ্যায় ৮ থেকে ১০ জন ছিলেন। তাদের গায়ে ছিল কালো টি-শার্ট। এসময় হঠাৎ করে বাঘটি তাদের দিকে আসার পরই চিৎকার শোনা যায়। ওই সময়ে বাঘটি বনকর্মীদের একজনের ওপর হামলে পড়ে।
আরো পড়ুন:
হরিণের মাংস জব্দ, শিকারি চক্রের ৩ সদস্য শনাক্ত
সুন্দরবনে কাকড়া আহরণে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা
তখন অন্যারা বাঘটিকে পিটিয়ে তাদের সহকর্মীকে ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে বাঘটি বনকর্মীকে ছেড়ে বনের গহীনে দৌড়ে চলে যায়।
বাঘের হামলায় আহত বনকর্মীকে উদ্ধার করে প্রথমে কাছের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) নিশা গোশ্বামী বলেন, স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
তিনি আরো বলেন, ওই বনকর্মীর শরীরে বাঘের কাঁমড়ের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল।
সোমবার সকালে মৈপীঠ কোস্টাল থানার নগেনাবাদ এলাকায় একটি বাগানে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায় বাঘটিকে। সেই মতো তাকে তাড়াতে যায় বনকর্মীদের একটি দল। সঙ্গে ছিলেন এলাকার বাসিন্দারাও। তখনই বাঘটি ওই বনকর্মীকে প্রথমে থাবা মারে এবং তার হাতে কামড় বসায়। সোমবার সকালে লোকালয়ে চলে এসে সুন্দরবনের বাঘ। এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগেনাবাদ ৯ নম্বর মুলার জেটি ঘাটের কাছে রবিবার বিকালে স্থানীয় রাজকুমার সাফুঁই নামে এক যুবক বসেছিলেন। ঠিক তখনই তার নজরে আসে যে জেটিঘাট-সংলগ্ন শ্মশান ঘাটের কাছে একটি বাঘ ঘোরাঘুরি করছে। সে অবস্থায় বাঘ বাঘ চিৎকার করে ওই যুবক সাইকেল ফেলে দৌড়ে বাড়িতে চলে যান।
মূহূর্তের মধ্যে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বাঘ ঢোকার খবর। এরপর ওই যুবকের কাকা শম্ভু সাফুঁই লাঠি সোটাসহ এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম লাগোয়া ম্যানগ্রোভের ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে এসে দেখেন বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ। যদিও বাঘ তাদের নজরে আসেনি। ততক্ষণে বাঘটি লোকজনের ঝোঁপঝাড়ে মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম থেকে সেই বাঘ ঢোকার খবর জানানো হয় বনদপ্তরের রায়দিঘি রেঞ্জের অন্তর্গত নলগোড়া বিট অফিসে। সেই সঙ্গে জানানো হয় স্থানীয় মৈপীঠ উপকূল থানায়। বাঘ ঢোকার খবর পেয়ে দ্রুত নৌকায় জাল নিয়ে পৌঁছান বনকর্মীরা।
জেটি ঘাটে চলে আসেন পুলিশ কর্মীরাও। এরপর যাতে বাঘটি কোনোভাবে রাতে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে, সে জন্যই গ্রামের দিক বরাবর নাইলনের জাল লাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বাঘটি গ্রামের দিকে জালের কাছে চলে এসেছিল বলে দাবি গ্রামবাসীদের। বাঘটি আবার রাতের অন্ধকারে নিজের জঙ্গলে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য জঙ্গলের দিকটা যেমন খুলে রাখা হয়েছিল, তেমনি গ্রামের দিকে নদী বাঁধের ওপর রাতে প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সকাল হলে আবার গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের অবস্থান জানার কাজ শুরু করে বনকর্মীরা। আর তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।
ঢাকা/কংসবিনক/রাসেল