৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স
Published: 11th, February 2025 GMT
রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেড ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় এই সুপারিশ করা হয়েছে।
দেখা গেছে, ২০২৪ সালে কোম্পানির প্রধান আর্থিক সূচকগুলোর উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬ দশমিক ৫৬ টাকা। একই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেড়ে হয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৯ টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ৮৫ টাকা। তবে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) কমে হয়েছে ১ দশমিক ৬৬ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৪ দশমিক ৮৪ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রিমিয়াম ও বিনিয়োগ আয়ের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। অন্যদিকে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) কমেছে রি-ইনস্যুরেন্স বা পুনর্বিমা পরিশোধ বৃদ্ধির কারণে। শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) বেড়েছে সংরক্ষিত আয় বৃদ্ধির কারণে। অর্থাৎ কোম্পানিটি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সতর্ক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসসই) ঘোষণায় বলা হয়েছে, রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের বার্ষিক সাধারণ সভা হবে আগামী ২৫ মার্চ। সভাটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে, রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ মার্চ।
গত এক বছরে রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৮ টাকা ৯০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা ৯০ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২৩, ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ আগের পাঁচ বছরের তুলনায় বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে কোম্পানিটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল য় ন স ইনস য র ন স দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিজ্ঞানচর্চা কতটা নারীবান্ধব
প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারি ‘বিজ্ঞানে নারী ও মেয়েদের আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এই জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং। এ ক্ষেত্রে নীতিগত, সামাজিক ও শিক্ষাগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীশিক্ষায় দেশে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। প্রাথমিক (৫১.২১ শতাংশ) ও মাধ্যমিক (৫৫.০৫ শতাংশ) পর্যায়ে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছাত্রদের চেয়ে বেশি। তবে টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা (২৯.৫৩ শতাংশ), উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় (৩৭.৪৭ শতাংশ) নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম (ব্যানবেইস, ২০২৩)। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) শিক্ষায় তারা পিছিয়ে। বর্তমানে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী এসটিইএম শিক্ষায় নিয়োজিত। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্বে এসটিইএম শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। এসটিইএম স্নাতকের মধ্যে নারীর হার মাত্র ৩৫ শতাংশ। ১০ বছর ধরে এ সংখ্যা অপরিবর্তিত! বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেন্ডার অ্যাসেসমেন্ট ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালের প্রেক্ষাপটে এসটিইএম পেশাজীবীর মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ নারী ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এসটিইএমে নারীর অনুপাত বিশ্বে সর্বনিম্ন এবং বাংলাদেশ একেবারে তলানির দিকে।
এসটিইএম শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গড়ার সময় নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তার সরাসরি ফল আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি। ইউনিসেফের মতে, মেয়েদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা জেন্ডার প্রেক্ষাপট দ্বারা প্রভাবিত। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অধিক সংখ্যায় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী (৭৮টি দেশের মধ্যে ৭২টিতে) অথবা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পেশাদার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। এসটিইএমকে একটি পুরুষতান্ত্রিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা এবং মেয়েরা এসটিইএমে কী করতে পারে এবং কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সামাজিক রীতিনীতি ও ভ্রান্ত ধারণা অভিভাবকদের প্রত্যাশাকেও প্রভাবিত করে। এগুলো এসটিইএম সম্পর্কে মেয়েদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের উৎসাহিত করতে কার্যকর প্রণোদনার অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় স্কলারশিপ, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিংয়ের অপ্রতুলতা বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের অনেক নারী বিজ্ঞানী ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেমন গবেষণায় অবদানের জন্য ২০২৩ সালে ১০০ জন ‘সেরা এবং উজ্জ্বল’ এশিয়ান বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই বাংলাদেশি নারী। তারা হলেন ডা. গাওসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ও ডা. সেঁজুতি সাহা। এই দু’জন ছাড়াও অনেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এসব সফল নারী বিজ্ঞানীর অভিজ্ঞতা ও অর্জনকে সবার সামনে তুলে ধরলে অনেক মেয়ে তাদের মতো হতে আগ্রহী হবেন।
সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকল্প যেমন–‘নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন’, ‘এসটিইএমে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ ইতোমধ্যে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নারীদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে রোবোটিক্স, কোডিং ও ডেটা অ্যানালিটিকসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলছে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।
তবুও নারীদের উল্লেখযোগ্যভাবে গবেষণার সুযোগ বাড়াতে এবং উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করতে বিশেষ অনুদান ও ফান্ডিং প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। দেশের সব নারী যদি তাদের যোগ্যতা অনুসারে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিজ প্রতিভা ও দক্ষতা প্রয়োগ করার সুযোগ পান, তবে তা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তাই এ বিষয়ে দেশের সব পর্যায় থেকে আশু পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক।
মো. রমজান আলী: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেস্কো, ঢাকা অফিস;
ফাতেমা বেগম পপি: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়