জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের দরজা এখনো খোলা আছে: হামাস
Published: 11th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে চলমানজিম্মি-বন্দী বিনিময় চুক্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তবে এ জন্য দেশটিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত পূরণের পূর্বশর্ত দিয়েছে সংগঠনটি।
হামাস কর্তৃপক্ষ এর আগে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে অনির্দিষ্টকালের জন্য চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। এরপরই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শনিবারের মধ্যে মধ্যে সব জিম্মিকে ফেরত না দেওয়া হলে, যুদ্ধবিরতি বাতিল হবে।
ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পরই সোমবার বিকেলে আরেকটি ঘোষণা দেয় হামাস। সেখানে তারা বলে, সময়মতো জিম্মি-বন্দী বিনিময় হতে পারে, তবে তার জন্য ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির সব শর্ত মানতে হবে।
হামাসের নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত বন্দী বিনিময়ের পাঁচ দিন আগে ইচ্ছাকৃতভাবে তা স্থগিতের দিয়েছিল হামাস। এর উদ্দেশ্য ছিল- চুক্তির শর্ত পূরণের জন্য যাতে ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে চাপ তৈরির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা পর্যাপ্ত সময় পান। দখলদারেরা চুক্তির শর্ত মেনে চললে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে বন্দী বিনিময়ের দরজা খোলা থাকবে।
চুক্তি স্থগিতের ঘোষণায় হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বলেছিলেন, ইসরায়েলের কারণে যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরতে দেরি হয়েছে। তাদের গুলির লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এছাড়া গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। তাই পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত জিম্মি মুক্তি স্থগিত থাকবে।
হামাসের এই ঘোষণার পর পাল্টা এক বিবৃতি দেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। তিনি বলেন, হামাস জিম্মি মুক্তি বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির পুরোপুরি লঙ্ঘন। আমি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে গাজায় সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি।
১৫ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরই মধ্যে হামাসের কাছে বন্দী থাকা ১৬ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মুক্তি পাচ্ছেন ইসরায়েলে বন্দী কয়েক শত ফিলিস্তিনিও। এ ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল হামাসের।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই
এনজে
.উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
অপরিবর্তিত থাকছে নীতি সুদহার
নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায়ও বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। মূলত মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে আসা এবং রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল থাকায় এমন নীতি ঘোষণা হচ্ছে।
অবশ্য এখনই সংকোচন থেকে সম্প্রসারণের নীতিতেও যাবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। ওই দিন সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে। এটি হবে অন্তর্বর্তী সরকার আমলের এবং বর্তমান গভর্নরের প্রথম মুদ্রানীতি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং রিজার্ভ বাড়ানোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় গত বছরের ১৮ জুলাই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নজিরবিহীনভাবে সংবাদ সম্মেলন না করে কেবল ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়। ব্যাংক খাতের বিভিন্ন জালিয়াতির তথ্য আড়াল করতে তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় এমন পদক্ষেপ নেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পলাতক অবস্থায় গত ৯ আগস্ট অজ্ঞাত স্থান থেকে ই-মেইলে পদত্যাগ করে আত্মগোপনে আছেন সাবেক এ আমলা। এরপর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব পান।
নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারে ব্যবহৃত রোপোর সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিন দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি না কমায় আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর আলোচনা ছিল। তবে সর্বশেষ হিসাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এ কারণে আপাতত নীতি সুদহার বাড়ানো হবে না। অবশ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় সুদহার না বাড়িয়ে বরং কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ছয় মাসে অর্থনীতিতে বড় কোনো স্বস্তি ফেরানো গেছে, তেমন নয়। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিক যে অবনতি হচ্ছিল, তা ঠেকানো গেছে। বিশেষ করে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির কারণে আগের মতো আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে না। বরং দীর্ঘদিন ধরে তা ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে। গত বুধবার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার আগে গত জুলাই শেষে যা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছিল; ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে যা ওই পর্যায়ে নেমেছিল। এর মধ্যে ৩৩০ কোটি ডলারের আগের বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ একই জায়গায় থাকাকে আপাতত স্বস্তি বিবেচনা করা হচ্ছে। আবার ডলারের দর ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় স্থিতিশীল আছে। এর মধ্যে বছরের প্রথম মাস গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে। আগের মাস শেষে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সুদহার বাড়লে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে আশানুরূপ উন্নতি হয় না, এটাই বাস্তবতা। তবে বাংলাদেশের এখন মূল্যস্ফীতি ও অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কেননা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়ের ক্ষমতা কমছে। আরেকটি বিষয় হলো সুদহার বেড়ে যাওয়ায় আমানত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছিল। এর মধ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপক কমে গত ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে। আগের মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর ও আগামী জুন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয় ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের মাস নভেম্বর শেষে যা ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের অন্য দেশগুলো বেশ আগেই সুদহার বাড়ালেও উল্টো ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা দিয়ে রাখা হয়।