বাংলাদেশের মতো দেশে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ জন্য রাজস্ব নীতির পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার তদারকিও প্রয়োজন। সরকারের নেওয়া সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। পণ্য ও সেবার চাহিদা ও জোগানের পুরোটা প্রতিফলিত হয় না।

তবে স্বস্তির দিক হলো রিজার্ভের পতন ঠেকানো গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। ফলে আমদানির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ঘোষিত মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। আর বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পণ্য রপ্তানি আয় যে বেড়েছে, তার পেছনে প্রধান কারণ অতিরিক্ত সক্ষমতা ব্যবহার। কিন্তু নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যাংকঋণের একটি বড় অংশ ব্যবহার হচ্ছে চলতি মূলধন হিসেবে।

ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। এতে নতুন কর্মসংস্থানও বাড়ছে না। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কিছু সুবিধার ব্যবস্থা করা দরকার। কারণ, আমরা দেখছি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মজুরিহার বৃদ্ধির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির সামঞ্জস্য নেই।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আগেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমেনি। তবে এটাও ঠিক, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লাগে। আমাদের মতো দেশে শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। রাজস্ব নীতি, বাজার তদারকিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাও সমন্বিতভাবে গ্রহণ করতে হবে।

আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে (পিক) আছে। ধীরে ধীরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে। তবে সরকার চলতি অর্থবছরের জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এই মূল্যস্ফীতিও মানুষকে কষ্ট দেবে।

মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

৬৩ লাখ পরিবারকে পণ্য দেয় টিসিবি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, “টিসিবি ৬৩ লাখ পরিবারকে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। স্মার্ট কার্ড রূপান্তরের কাজে খুলনা অঞ্চলের সাফল্যের হার সবচেয়ে বেশি। এ মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে বাকি কার্ড এক্টিভেশন সম্পন্ন হবে, এর মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়বে। এই সংখ্যাকে আরো বাড়াতে অতিরিক্ত ১২ লাখ পরিবারের জন্য রমজান মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু থাকবে।”

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় সকল বিভাগীয় সদর ও পাঁচটি দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাসহ মোট ১৩টি এলাকার ১২ লাখ পরিবারের মাঝে ট্রাকসেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছি। এর বিনিময়ে বাজারে পণ্যমূল্য আরো সহনশীল হবে। অতিরিক্ত নয় হাজার মেট্রিকটন পণ্য ট্রাকে সেল করা হবে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজার নিম্নগামী হবে, বাজার সহনশীল হবে। প্রান্তিক মানুষের জীবনে স্বস্তি আসবে।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা এমন দিনের স্বপ্ন দেখি যেদিন টিসিবির কার্যক্রম আর চালাতে হবে না। সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। সেটা হয়তো একটু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। তার পরও আমরা সেটা অর্জন করতে চাই।”

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ, খুলনার পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানব সম্পদ) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ। 

উল্লেখ্য, কার্ডধারী যে কোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি করে মসুর ডাল ও ছোলা, এক কেজি চিনি এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। 

এর মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হবে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ও ছোলা ৬০ টাকা এবং খেজুর ও চিনি ১৫৬ টাকা দরে বিক্রি করবে টিসিবি।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ