ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে তিনি কোনো দেশকে ছাড় দেননি। যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পকে সহায়তা করার জন্য ট্রাম্প এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে তাঁর এই পদক্ষেপ বহুমুখী বাণিজ্যযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করেছে।

শুল্ক বাড়ানোর এই নির্বাহী আদেশে গতকাল সোমবার সই করেন ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদেও এমন শুল্ক ছিল। তবে তখন এই শুল্কের হার ছিল ১০ শতাংশ।

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, শুল্ক আরোপের এই পদক্ষেপ আগামী ৪ মার্চ কার্যকর হবে।

আরও পড়ুনইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫% শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ টন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে। প্রতিবেশী কানাডা থেকে সবচেয়ে বেশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।

এ ছাড়া ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম আসে।

এখন ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে আসা ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে।

এ ক্ষেত্রে কোনো দেশের ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে না। কারণ, কোনো দেশের ক্ষেত্রে এই নিয়মে ব্যতিক্রম রাখেননি ট্রাম্প। কোনো দেশের জন্য কোটা রাখেননি তিনি।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ধাতব মুদ্রা পেনি উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প১৭ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর পদক্ষেপটি আমদানি করা ধাতুর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপকে সহজ করবে, যাতে সবাই এর অর্থ কী, তা বুঝতে পারে।

ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক আরোপের পদক্ষেপটিতে কোনো ব্যতিক্রম বা ছাড় নেই। সব দেশের ক্ষেত্রেই তা ২৫ শতাংশ।

তবে পরে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যঘাটতি আছে। এ কারণে এই শুল্ক অব্যাহতির ব্যাপারে দেশটির অনুরোধ তিনি বিবেচনা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর অন্যান্য দেশ যে হারে শুল্ক আরোপ করেছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে পারস্পরিক শুল্ক দেবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। আগামী দুই দিনের মধ্যে তা আরোপ করা হবে।

এ ছাড়া গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর চিপস ও ফার্মাসিউটিক্যালসের ওপর শুল্ক আরোপ করতে চান ট্রাম্প।

আরও পড়ুনমার্কিন পণ্যে চীনের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে আজ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এই হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, তাঁর কিছু যায়–আসে না।

ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবশেষ এই পদক্ষেপগুলো দেশটির ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারীদের শক্তিশালী করবে। এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে।

কানাডার শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

ইউরোপীয় কমিশনও বলেছে, তারা শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে কোনো যৌক্তিকতা দেখতে পায়নি।

শুল্কের প্রভাব কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প মন্ত্রণালয় দেশটির ইস্পাত প্রস্তুতকারকদের সভা ডেকেছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের যেভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন ট্রাম্প০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনইস্পাত-অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫% শুল্ক আরোপে নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য ল ম ন য় ম আমদ ন পদক ষ প বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই

নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।

গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।

হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।

হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’

‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’

রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।

এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ