ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহে ‘হৃদয়’এর যত্ন নিচ্ছেন তো?
Published: 11th, February 2025 GMT
ফেব্রুয়ারি ৭ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ভ্যালেন্টাইন সপ্তাহ। ভালোবাসা মানের প্রিয় মানুষের হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া। কিন্তু নিজের হৃদয়ের যত্ন নিচ্ছেন তো? হৃদয় বা হার্ট ভালো রাখতে কি কি করণীয় সে বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত ডা. মাসুদা পারভীন মিনু।
তিনি বলেন, ‘‘হার্ট বা হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভ্রূণাবস্থা থেকে শুরু করে আমৃত্যু এটি শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। হার্টের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক জীবনে খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ এবং শরীরচর্চার অভাবের কারণে হৃদরোগের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই হার্ট সুস্থ রাখার জন্য কিছু নিয়মিত অভ্যাস মেনে চলা খুবই প্রয়োজন।’’
মাসুদা পারভীন মিনুর পরামর্শ—
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা: খাদ্যাভ্যাসের সাথে হার্টের সম্পর্ক গভীর। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, চর্বি, ফাস্ট ফুড এবং চিনি খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, যা হৃদরোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এর জন্য ফল, সবজি, শস্যজাতীয় খাবার, মাছ, বাদাম এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ ও সয়া, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আরো পড়ুন:
ভারতীয় হাসপাতালে বাংলাদেশি পোস্টার, তুমুল বিতর্ক
প্রেমের জন্য ভালো চকলেট, স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তো?
শারীরিক কার্যক্রম ও ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক কসরত হার্টকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটাচলা করা উচিত। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া হৃদরোগের অন্যতম কারণ। তাই খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এটি কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
তামাক এবং মদ্যপান পরিহার করা: তামাক/সিগারেট হার্টের ধমনীর মধ্যে চর্বি জমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। মদ্যপানও রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত যোগব্যায়াম বা শখের কাজ করা মানসিক চাপ কমানোর জন্য উপকারী হতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম: হার্ট সুস্থ রাখতে ঘুমের গুরুত্বও অপরিসীম। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পূর্ণ বিশ্রাম প্রদান করে এবং হৃদযন্ত্রকে পুনরায় শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: হৃদরোগের ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা হার্টের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হৃদরোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়, ত্রিশোর্ধ সকল কেই নিয়মিত চেক আপের মধ্যে থাকা উচিত। এ ব্যপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে নিজের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ দর গ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট
উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাস। উপাচার্যকে অপসারণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে গত প্রায় ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ছে সেশনজট।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে জড়ো হন একশ’র মতো শিক্ষার্থী। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের সময় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার তারা তালা ভেঙে ৬টি হলে উঠলেও কর্তৃপক্ষ খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়নি। ২ মাস হল বন্ধ থাকায় ধুলাবালি জমেছে। এর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মিছিল শেষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে উপাচার্যকে অপসারণ, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। যদি এটা করা না হয় তাহলে আমাদের ‘নতুন জুলাই’ হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের এই যুদ্ধ হবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নজরুলের বিরুদ্ধে, যেসব ছাত্র উপদেষ্টা আমাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে ক্ষমতায় বসেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে ‘কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক উপাচার্যকে হয়রানি ও তাকে অপসারণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি দুর্বার বাংলা চত্বরে গিয়ে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের ১ দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাব না।
সেকশন অফিসার ইমদাদুল বলেন, উপাচার্যকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার সামনেই মারধর করা হয়। ছাত্ররা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, এই রকম গালিগালাজ আমার জীবনে আমি শুনিনি। স্যারকে রক্ষা করতে গেলে আমাকেও মারধর করে।
কুয়েটের কর্মচারী ইমদাদ মোড়ল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবি মানতে রাজি না। কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল এবং তার গায়ে থু থু দিয়েছিল। এখন তাকে অপসারণের টার্গেট নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে।
এ দিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট। আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩/৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।
২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। এরপর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে কুয়েটের আবাসিক হল ও একাডেমিক কার্যক্রম।