ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নষ্ট হচ্ছে উদ্ধারকারী নৌকা
Published: 11th, February 2025 GMT
জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া একটি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেওয়ারিশের মতো পড়ে থাকায় নৌকাটির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খোয়া যাচ্ছে।
বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া ও ত্রাণসহায়তা পৌঁছে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নৌকাটি বরাদ্দ দেয়। নৌকাটি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে থাকে। আবার শুকনো মৌসুমে নদের পাড়ে তীরে ওপর পড়ে থাকে। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। এরই মধ্যে অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নৌকাটি। কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্ধকোটি টাকার সম্পদ বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফৌজদারি এলাকার জামালপুর জিলা স্কুলের পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নৌকাটি পড়ে রয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের সি বি ব্লকের ওপর নৌকাটি। নৌকাটির ওপরের ছাউনি নেই। নৌকাটির মধ্যে পানি জমে রয়েছে। নৌকাটির জানালা ভাঙা। নৌকাটির চারপাশে ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা নৌকাটির ভেতরেও। নৌকার নোলাহার বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরেছে। ইঞ্জিনসহ মূল নৌকার ভেতরে পানি জমে রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এবং উপকূলীয় জেলার জন্য ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা তৈরি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে আটটি নৌকা বিভিন্ন জেলায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে জামালপুরসহ আরও ৫২টি জেলায় নৌকাগুলো হস্তান্তর করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নৌকাগুলোর দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট ও প্রস্থ ১২ দশমিক ৫০ ফুট। ৮০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটি ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। এর মাধ্যমে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুত সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায়।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে নৌকাটি নদের তীরে পড়ে রয়েছে। পানি বাড়লে ভেসে থাকে। আর শুকনো মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লকের ওপর পড়ে থাকে। কখনো নৌকাটি ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এভাবেই এখন নৌকাটি একরকম বিকল হয়ে গেছে মনে হয়। সরকারি জিনিস এভাবেই নষ্ট হয়। এত বড় সুন্দর একটি নৌকা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে নিশ্চয় নৌকাটি ভালো থাকত। সরকারের নজর দেওয়া দরকার দিয়েছিল। এখন আর এই নৌকা হয়তো কেউ খোঁজখবর নেন না। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফিরোজ আহম্মেদ নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই এ পথে হাঁটাহাঁটি করি। প্রায় দুই বছর ধরে নৌকাটি এখানেই দেখতেছি। কোনো সময় ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না। পড়ে থেকেই নৌকাটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকার অনেক যন্ত্রাংশও হয়তো চুরি বা খোয়া গেছে। যদি ব্যবহার বা যত্ন নেওয়া হতো, তাহলে সরকারি সম্পত্তিটি রক্ষা পেত।’
জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নৌকাটি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েকবার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখেছি। তারপর কয়েক বছর ধরে ওই জায়গায় নৌকাটি পড়ে রয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অযত্নে নষ্ট করা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এটাও একধরনের অপরাধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকাটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন।’
বিষয়টি নজরে আনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নৌকাটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র সরক র শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নষ্ট হচ্ছে উদ্ধারকারী নৌকা
জামালপুর শহরের ফৌজদারি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া একটি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেওয়ারিশের মতো পড়ে থাকায় নৌকাটির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ খোয়া যাচ্ছে।
বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া ও ত্রাণসহায়তা পৌঁছে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নৌকাটি বরাদ্দ দেয়। নৌকাটি বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে থাকে। আবার শুকনো মৌসুমে নদের পাড়ে তীরে ওপর পড়ে থাকে। এভাবেই নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। এরই মধ্যে অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নৌকাটি। কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্ধকোটি টাকার সম্পদ বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের ফৌজদারি এলাকার জামালপুর জিলা স্কুলের পেছনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নৌকাটি পড়ে রয়েছে। শহর রক্ষা বাঁধের সি বি ব্লকের ওপর নৌকাটি। নৌকাটির ওপরের ছাউনি নেই। নৌকাটির মধ্যে পানি জমে রয়েছে। নৌকাটির জানালা ভাঙা। নৌকাটির চারপাশে ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা নৌকাটির ভেতরেও। নৌকার নোলাহার বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরেছে। ইঞ্জিনসহ মূল নৌকার ভেতরে পানি জমে রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এবং উপকূলীয় জেলার জন্য ৬০টি উদ্ধারকারী নৌকা তৈরি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে আটটি নৌকা বিভিন্ন জেলায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে জামালপুরসহ আরও ৫২টি জেলায় নৌকাগুলো হস্তান্তর করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নৌকাগুলোর দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট ও প্রস্থ ১২ দশমিক ৫০ ফুট। ৮০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটি ঘণ্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। এর মাধ্যমে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষকে দ্রুত সময়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া যায়।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে নৌকাটি নদের তীরে পড়ে রয়েছে। পানি বাড়লে ভেসে থাকে। আর শুকনো মৌসুমে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লকের ওপর পড়ে থাকে। কখনো নৌকাটি ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এভাবেই এখন নৌকাটি একরকম বিকল হয়ে গেছে মনে হয়। সরকারি জিনিস এভাবেই নষ্ট হয়। এত বড় সুন্দর একটি নৌকা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে নিশ্চয় নৌকাটি ভালো থাকত। সরকারের নজর দেওয়া দরকার দিয়েছিল। এখন আর এই নৌকা হয়তো কেউ খোঁজখবর নেন না। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ফিরোজ আহম্মেদ নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই এ পথে হাঁটাহাঁটি করি। প্রায় দুই বছর ধরে নৌকাটি এখানেই দেখতেছি। কোনো সময় ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না। পড়ে থেকেই নৌকাটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। নৌকার অনেক যন্ত্রাংশও হয়তো চুরি বা খোয়া গেছে। যদি ব্যবহার বা যত্ন নেওয়া হতো, তাহলে সরকারি সম্পত্তিটি রক্ষা পেত।’
জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নৌকাটি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েকবার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখেছি। তারপর কয়েক বছর ধরে ওই জায়গায় নৌকাটি পড়ে রয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অযত্নে নষ্ট করা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। এটাও একধরনের অপরাধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌকাটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন।’
বিষয়টি নজরে আনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নৌকাটি মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।